Advertisement
E-Paper

গতি সাক্ষী, দিল্লিমুখী ট্রেনে অগ্নি-শপথ কামদুনির

প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা কিংবা প্রতিবাদের শপথ, সবেতেই প্রয়োজন হয় একটু আগুনের। কিন্তু এক্সপ্রেস ট্রেনের বাতানুকূল কামরায় তো কোনও ভাবেই আগুন ধরানো যাবে না। মোমবাতি জ্বালানোও বারণ। তাই এক মুহূর্তের জন্য জ্বালানো হল একটি লাইটার। তার পরে হাতে হাত রেখে কামদুনিতে ধর্ষিত ও নিহত কলেজছাত্রীর আত্মার শান্তি কামনা করলেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদের সাগ্নিক শপথ নিলেন রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনায় আক্রান্ত মানুষজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮

প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা কিংবা প্রতিবাদের শপথ, সবেতেই প্রয়োজন হয় একটু আগুনের। কিন্তু এক্সপ্রেস ট্রেনের বাতানুকূল কামরায় তো কোনও ভাবেই আগুন ধরানো যাবে না। মোমবাতি জ্বালানোও বারণ। তাই এক মুহূর্তের জন্য জ্বালানো হল একটি লাইটার। তার পরে হাতে হাত রেখে কামদুনিতে ধর্ষিত ও নিহত কলেজছাত্রীর আত্মার শান্তি কামনা করলেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদের সাগ্নিক শপথ নিলেন রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনায় আক্রান্ত মানুষজন। আর সেই অনুষ্ঠানে সামিল হলেন পূর্বা এক্সপ্রেসের অন্যান্য যাত্রী, রেল পুলিশ থেকে শুরু করে টিকিট পরীক্ষক-সহ অনেকেই।

রাজ্যের বিভিন্ন আক্রমণের ঘটনার বিচার চাইতে রবিবার দিল্লি রওনা হন ‘আমরা আক্রান্তেরা’। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-সহ অনেকের সঙ্গেই দেখা করে তাঁরা সাম্প্রতিক কালে এ রাজ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিচার চাইবেন বলে ঠিক করেছেন।

গত বছর ৭ জুন কামদুনিতে কলেজফেরত এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। তার পর থেকে প্রতি মাসের ৭ তারিখে কামদুনিতে স্মরণসভা ও প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চ। এ দিনও কামদুনিতে সেই সভা হয়। রাজ্যের সমস্ত হিংসা ও হামলার ঘটনা তুলে ধরতে দিল্লি চলেছে ‘আমরা আক্রান্ত’-এর ৫০ সদস্যের একটি দল। সঙ্গে রয়েছেন কামদুনির মৌসুমী কয়াল এবং কামদুনি স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। দুপুর গড়াতেই আনচান করছিলেন মৌসুমীরা। তার পরে হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, চলমান ট্রেনের কামরাতেই স্মরণ-অনুষ্ঠান করা হবে। বিকেলে তখন ট্রেন ঢুকছে উত্তরপ্রদেশে। সঙ্গে সঙ্গে সাদা কাগজে পেন দিয়ে লেখা হল ‘কামদুনির ১৮ মাস’, স্মরণে ‘আমরা আক্রান্তেরা’।

ওই দলের সঙ্গে দিল্লি চলেছেন ধূপগুড়িতে ধর্ষিত ও নিহত দশম শ্রেণির ছাত্রীর বাড়ির লোকজনও। অকালে যাদের চলে যেতে হল, তাদের শোকে এক দিকে নীরবতা পালন।

অন্য দিকে যাদের জন্য ওদের চলে যেতে হল, তাদের দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গানের মধ্য দিয়ে চলল চলমান অনুষ্ঠান। লোকশিল্পী নজরুল ইসলাম ট্রেনের কামরাতেই গান ধরলেন ‘নাইরে বাংলায় আচার-রীতি, নাইরে ধর্ম, নাইরে নীতি’....। এই ভাওয়াইয়া গানের পাশাপাশি বক্তৃতাও দিলেন অনেকে। সেই প্রতিবাদে সামিল হন অন্যান্য যাত্রী, রেল পুলিশ, টিকিট পরীক্ষকেরাও।

সুটিয়ায় গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে খুন হন বরুণ বিশ্বাস। তাঁর অশীতিপর বাবা জগদীশ বিশ্বাস এ দিন বললেন, “আমরা আক্রান্ত। কিন্তু আমাদের শিরদাঁড়াটা সোজা। তাই রাজ্যের যে-কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদে যেখানে যেতে হয় যাব।”

আগে দিল্লি যাননি বিনপুরের শিলাদিত্য চৌধুরী। কামদুনির প্রতিবাদী মুখ মৌসুমীর সঙ্গেও আলাপ ছিল না তাঁর। এ দিনই মৌসুমীর সঙ্গে আলাপ হল। শিলাদিত্য বললেন, “কামদুনি ঘটনার পর থেকে এই প্রতিবাদী মানুষগুলির সঙ্গে দেখা হলে প্রণাম করব, সেই অপেক্ষায় ছিলাম।” ট্রেনের স্মরণসভায় বক্তৃতা দেন বীরভূমের পাড়ুইয়ে নিহত সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ, সইদুল ইসলাম, ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডের অম্বিকেশ মহাপাত্রও।

“এই দিনটা এলে ভিতরে একটা যন্ত্রণা হয়। তাই ট্রেনের মধ্যে থেকেও ওকে (নিহত-ধর্ষিত কলেজছাত্রীকে) স্মরণ করতে পেরে শান্তি লাগছে। তবে জানি না, দোষীরা কবে শাস্তি পাবে,” বললেন কামদুনির মৌসুমী। একই ট্রেনে দিল্লি যাচ্ছিলেন হালিশহরের বাসিন্দা দীপক প্রসাদ। স্মরণসভায় যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “টিভি-তে, খবরের কাগজে এই সব মানুষকে প্রতিবাদ করতে দেখেছি। আজ একজোট হয়ে দিল্লি যাচ্ছেন। তাঁদের সহযাত্রী হিসেবে মনে হল, আমিও এই প্রতিবাদে সামিল হই।”

kamduni rape case mousumi kayal amra akranta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy