Advertisement
E-Paper

ঘূর্ণাবর্ত-অক্ষরেখার জোট, বাজ-বৃষ্টির দাপটে মৃত ১৫

খাতায়-কলমে বর্ষার সময় এখনও হয়নি। কবে আসবে, তা-ও এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু শনিবার সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার মেজাজ। আকাশ কালো করে শুধু বৃষ্টিই নামেনি, দমকা হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পড়েছে বাজও! বজ্রাহত হয়ে দক্ষিণবঙ্গে এক শিশু-সহ অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ২৭। বৃষ্টির জেরে দেওয়াল ধসে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর মিলেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৪ ০২:২৭

খাতায়-কলমে বর্ষার সময় এখনও হয়নি। কবে আসবে, তা-ও এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু শনিবার সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার মেজাজ। আকাশ কালো করে শুধু বৃষ্টিই নামেনি, দমকা হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পড়েছে বাজও! বজ্রাহত হয়ে দক্ষিণবঙ্গে এক শিশু-সহ অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ২৭। বৃষ্টির জেরে দেওয়াল ধসে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর মিলেছে। নদিয়ায় চলন্ত অটোর উপর গাছ পড়ে মারা গিয়েছেন এক মহিলা। আহত চালক-সহ দুই সহযাত্রী।

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গে একটি নিম্নচাপ হাজির হয়। বুধবার তা উত্তরবঙ্গে সরে যাওয়ার ফলে নিম্নচাপ অক্ষরেখাও স্থান বদল করে। উত্তরবঙ্গে নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে পড়ায় অক্ষরেখাটি এ দিন ফিরে এসেছে দক্ষিণবঙ্গে। উপরন্তু তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত। এই জোড়া ফলাতেই এমন পরিস্থিতি। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কলকাতায় ৩৪.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ, রবিবারও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস।

ঘূর্ণাবর্ত ও অক্ষরেখার জেরে বৃষ্টি অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু এমন বাজ পড়ার ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তা হলে এ দিন ঘটল কেন? হাওয়া অফিসের ব্যাখ্যা, গত সপ্তাহে নিম্নচাপটির প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকেছিল। তার জেরে গত কয়েক দিন আর্দ্রতার দাপটও বেড়েছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে। নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় হতেই সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করেছিল। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, মুর্শিদাবাদ থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল পর্যন্ত সারি দিয়ে একের পর এক বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ দানা বেঁধেছিল। পরে সেগুলি পরস্পর জুড়ে গিয়ে বড় আকারের মেঘপুঞ্জ তৈরি করে। “বড় আকারের মেঘপুঞ্জ তৈরি হলে বাজের দাপট বাড়ে।”বলছেন গোকুলবাবু।

সেই বাজের দাপটই এ দিন জেলায় জেলায় মালুম হয়েছে। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে পিয়ারুল শেখ (২৫) ও কাঞ্চন দাস (৩৮) নামে দুই যুবক মারা যান। হরিহরপাড়ায় বজ্রাঘাতে মারা যান সরিফুল শেখ (৩৮) ও সফিকুল শেখ (২৯)। ওই এলাকায় খেত থেকে ফেরার পথে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় আলিম শেখের (৩০)। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে অলেশন বেওয়ার (৬৫)।

পুরুলিয়ায় জিগর কুইরি (৪) নামে একটি শিশু বাজ পড়ে মারা গিয়েছে। খেতে কাজ করতে গিয়ে দীনেশ গোপ (২৪) বজ্রাহত হন। ঘরের দাওয়ায় বসে থাকার সময় বাজ পড়ে ভক্তিবালা মণ্ডলের (৫৫) গায়ে। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতেও বাজ পড়ে মহিন গাজির (৩৫) মৃত্যু হয়েছে।

বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য শিশিরকুমার মণ্ডল (৬৪) সকালে চাষের জমিতে গিয়েছিলেন। বাজ পড়ে মারা যান তিনি। রানিগঞ্জে কাঠ কুড়োতে গিয়ে বজ্রাহত হন লক্ষ্মী সোরেন (২৩)। আহত হন তাঁর সঙ্গী মমতা হাঁসদা। তিনি বেলুনিয়া হাসপাতালে ভর্তি। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে বাজ পড়ে ছায়া মান্ডি (১৩) ও আরতি মান্ডি (১২) নামে দুই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। ওই জেলারই চন্দ্রকোনায় পুকুর কাটার সময় বাজ পড়ে আহত হন ২৬ জন শ্রমিক। কল্যাণীতে অটোর উপর গাছ পড়ে কাকলি বিশ্বাস (৩১) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।

এ দিন ভেল্কি দেখিয়েছে তাপমাত্রাও! সাধারণত, বেলা যত গড়ায়, ততই বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। কিন্তু এ দিন উল্টোটাই ঘটেছে। হাওয়া অফিসের খবর, সকাল সাড়ে আটটায় কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা সাড়ে এগারোটায় প্রায় ৭ ডিগ্রি নেমে গিয়ে তা দাঁড়ায় ২৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে! বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আবার পারদ ২৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছয়। “এ দিন তাপমাত্রা কখনও স্বাভাবিকের কাছাকাছি পৌঁছয়নি।”বলছেন আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী।

এ দিনের বৃষ্টি কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করেছে কৃষকদের। এপ্রিল-মে মাসের বৃষ্টির ঘাটতি চাষের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন কৃষি-আবহবিদেরা। বস্তুত, মে মাসের মাঝামাঝি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি প্রায় ৪৯ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহের নিম্নচাপ এবং এ দিন থেকে শুরু বৃষ্টির জেরে সে আশঙ্কা অনেকটা কমেছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, এ দিনের পর গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

কৃষি-আবহবিদদের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, বৃষ্টির ঘাটতি মিটলেও পুরোপুরি স্বস্তি মিলবে না। কারণ, এই মরসুমে আমন ধানটাই দক্ষিণবঙ্গের মূল ফসল। কৃষিবিজ্ঞানীদের অভিমত, সেই ধানের চারা রোপণের সময় বৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। জুলাই থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাধারণত আমন ধানের চারা রোয়ার সময়। বিধাননগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিজ্ঞানের শিক্ষক আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “তখন বর্ষায় ঘাটতি হলে উৎপাদন মার খেতে পারে।” প্রসঙ্গত, এ বছর যে সারা দেশেই ঘাটতি বর্ষার পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন।

দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে এ দিনের বৃষ্টিও যে বর্ষার আগমন-বার্তা দিচ্ছে না, সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন আবহবিদেরা। অনেক সময়ই গ্রীষ্ম-শেষের নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত বর্ষার হাজিরাকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু এ বছর তেমনটা হবে না বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, বর্ষা প্রথমে ঢোকে কেরলে। সেটাই পরে দক্ষিণবঙ্গে হাজির হয়। নিয়মমাফিক, বর্ষার কেরলে হাজির হওয়ার কথা ১ জুন অর্থাৎ আজ। কিন্তু এ বছর কেরলে বর্ষা ঢুকতে পারে জুন মাসের ৫ তারিখ নাগাদ। “ফলে এই ঘূর্ণাবর্ত কোনও ভাবেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষাকে টেনে আনবে না।”মন্তব্য এক আবহবিদের।

storm west bengal 13 dead lighting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy