হাতে অর্থ কম। অভাব রয়েছে অভিজ্ঞতারও। তাই উত্তরবঙ্গে চারটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল হাইডেল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনএইচপিসি)-এর হাতে তুলে দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এনএইচপিসি নিজেরাই টাকা তুলে এই চারটি প্রকল্প নির্মাণ করবে। সেগুলিতে উৎপন্ন বিদ্যুত কিনে নেবে রাজ্য সরকার।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, ওই চারটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সমীক্ষা চালাচ্ছিল। কিন্তু সংস্থার বর্তমান আর্থিক অনটন এবং এই ধরনের প্রকল্প নির্মাণে অনভিজ্ঞতার কারণে শেষ পর্যন্ত এনএইচপিসি-কেই তার নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে তিস্তা নদীর উপরে বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করছে এনএইচপিসি। এই ধরনের কাজে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই রাজ্যের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। তাদের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে সরকারও মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রকল্পগুলি অনুমোদন করিয়ে নিল।
নবান্ন সূত্রে খবর, প্রস্তাবিত চারটি প্রকল্প তৈরি হবে তিস্তা ও রাম্মাম নদীর উপর। নির্মাণ শেষ হলে সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ২৯৩ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, চারটি প্রকল্প গড়তে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। এর মধ্যে ২০০০ কোটি টাকা এনএইচপিসি-কে বাজার থেকে তুলতে হবে। বাকি অর্থ তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে। নবান্নের এক কর্তা জানান, প্রকল্প নির্মাণের খরচ তুলতে এনএইচিপিসি যাতে করমুক্ত পরিকাঠামো বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে টাকা তুলতে পারে, সে জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানাবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি প্রকল্প নির্মাণ নির্ঝঞ্ঝাট করতে জিটিএ, দার্জিলিং জেলা প্রশাসন এবং বণ্টন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নজরদারি কমিটিও গড়ছে রাজ্য।
রাজ্যের এক বিদ্যুৎ কর্তা জানান, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীতে অন্তত ১৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ রাজ্যের নিজস্ব জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে বড় জোর ১৭০ মেগাওয়াট। তাঁর মতে, “রাজ্যে জলবিদ্যুতের বেশির ভাগই আসে ভুটানের চুখা প্রকল্পটি থেকে। নতুন চারটি প্রকল্প কাজ শুরু করলে রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটাই বাড়বে।”
বিদ্যুৎ কর্তারা বলছেন, জলবিদ্যুতের দাম প্রথম দিকে কিছুটা বেশি হয়। পরে প্রকল্পের খরচ উঠে গেলে সেই দাম অনেকটাই কমে যায়। কারণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনও কাঁচামাল কিনতে হয় না।
ঠিক হয়েছে, নির্মাণ কাজ শেষ হলে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্ধারিত দামে রাজ্য সরকারকে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে এনএইচপিসি। চারটি প্রকল্পের মধ্যে তিস্তার উপর তিনটি প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা হবে যথাক্রমে ৮১, ৮৪ ও ৮০ মেগাওয়াট। ৪৮ মেগাওয়াটের ইউনিটটি হবে রাম্মাম নদীর উপরে। বিদ্যুৎ কর্তারা বলছেন, সময় ধরে কাজ এগোলে ২০২০-২১ সালের মধ্যেই চারটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy