Advertisement
E-Paper

টেনশনে ঘনঘন সিগারেটে টান, ৮ বার ফোন মমতাকে

নিজেই বলছেন, সিগারেট খাওয়া অনেক বেড়ে গিয়েছে। দৃশ্যতই একটি থেকে আর একটি সিগারেট ধরাচ্ছেন সোমবার সিবিআইয়ের তলব পাওয়া তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, সারা দিনে নয় নয় করে আট বার ফোনে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ফোন করে মুকুলকে সিবিআই দফতরে ডেকে পাঠানো হয়। এ দিনই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে আসতে বলা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
চায়ের কাপে চিন্তামগ্ন। নয়াদিল্লিতে সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা

চায়ের কাপে চিন্তামগ্ন। নয়াদিল্লিতে সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা

নিজেই বলছেন, সিগারেট খাওয়া অনেক বেড়ে গিয়েছে। দৃশ্যতই একটি থেকে আর একটি সিগারেট ধরাচ্ছেন সোমবার সিবিআইয়ের তলব পাওয়া তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, সারা দিনে নয় নয় করে আট বার ফোনে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।

সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ফোন করে মুকুলকে সিবিআই দফতরে ডেকে পাঠানো হয়। এ দিনই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মুকুল ওই সিবিআই আধিকারিককে জানান, তিনি দিল্লিতে ব্যস্ত থাকবেন। ফলে এ দিনই তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। দু’এক দিনের মধ্যে কলকাতায় ফিরে দেখা করবেন। কবে সিবিআই দফতরে যেতে পারবেন, তা নিজেই ফোন করে জানিয়েও দেবেন।

মুকুলের নিজের কথায়, “সিবিআই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কথা বলতেও চেয়েছে। আমি আজ (সোমবার) এবং কাল দিল্লিতে আছি। কলকাতা ফিরে গিয়েই দেখা করব।” সিবিআই সূত্রে তাঁকে তলবি চিঠি পাঠানোর কথা বলা হলেও, সেই চিঠি এখনও পাননি বলেই জানিয়েছেন মুকুল। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, বুধবার কলকাতায় ফিরে বৃহস্পতিবার সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে পারেন মুকুল।

কিন্তু রেলমন্ত্রী থাকার সময়েও বেশির ভাগ সময় কলকাতায় কাটানো মুকুল এখন সংসদ না-চলা সত্ত্বেও রাজধানীতে কেন? এ দিনই দুপুরে দিল্লি এসে পৌঁছনো মুকুল বলেন, “রাজনৈতিক কাজে এসেছি। আগেই ঠিক ছিল।” রাজনৈতিক কাজটি অবশ্য ঠিক কী, তা বিস্তারিত বলতে চাননি। তবে তিনি দিল্লির বাড়িতে ঢোকার পরেই দেখা করতে আসেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী জামাই।

তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসু এবং পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরে মুকুলকেও ডাকা হতে পারে বলে জল্পনা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। বস্তুত, সুদীপ্ত সেন, কুণাল ঘোষ এবং এক সময়ে মুকুলের ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান বিভিন্ন সময়ে সারদার কাজকর্মের সঙ্গে তৃণমূলের দু’নম্বর নেতার যোগাযোগের কথা বলেছেন। মুকুল নিজে অবশ্য এ দিনও দাবি করেন, “আমি কোনও দিন নিজে বা দলগত ভাবে কোনও অনৈতিক বা বেআইনি কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত নই।”

প্রকাশ্যে মুকুলের হয়ে একাধিক বার মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেত্রীও। সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে ২০১৩ সালের ৩ মে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের দলীয় সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, “কুণাল চোর? মদন চোর? টুম্পাই (সৃঞ্জয়) চোর? মুকুল চোর? আমি চোর?” ঘটনাচক্রে মমতার তালিকার প্রথম তিন জনই এখন জেলে। এ বার ডাক পেলেন মুকুল।

মুকুলকে যে সিবিআই ডাকবে, ৩০ নভেম্বর ধর্মতলার সভাতেই তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। সে দিন তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “২০১৪-য় ভাগ মদন ভাগ, ২০১৫-য় ভাগ মুকুল ভাগ আর ২০১৬-য় ভাগ মমতা ভাগ।” এর কয়েক দিন পরেই গত ১২ ডিসেম্বর সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হন রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র। এর পরেই শোরগোল পড়ে যায়। তবে কি ২০১৫-য় মুকুল? ওঠে এমন প্রশ্নও। এ দিন সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “সুদীপ্ত সেন কাশ্মীর পালানোর আগে যাঁর সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলেন, তাঁর নাম মুকুল রায়। কাজেই সিবিআই তো তাঁকে ডেকে পাঠাবেই।”

মুকুলকে যে অনেক আটঘাট বেঁধেই জেরা করা হবে তা সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন। সিবিআইয়ের সদর দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, মুকুল সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করার পরেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হচ্ছে। মুকুলের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরির পাশাপাশি সেই সব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার জন্য মুকুল রায় কী বলতে পারেন, তা-ও ভেবে রাখা হচ্ছে। এত দিন তৃণমূল নেতারা বলে এসেছেন, সারদার মিডিয়া সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই সেখানকার কর্মীরা তৃণমূল নেতৃত্বের দ্বারস্থ হন। তখনই তৃণমূল নেতারা মাঠে নামেন। মুকুলও সেই যুক্তিই দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়ার আগে সুদীপ্ত তৃণমূলের নেতাদের হাতে বিশাল পরিমাণ টাকা তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন বলে জেরায় জানা গিয়েছে। সেই আর্থিক লেনদেন পুরোটাই নগদে হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই মুকুল প্রশ্ন তুলতে পারেন, আর্থিক লেনদেনের কী প্রমাণ রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে? সুদীপ্ত বা সারদার অন্য কারও সঙ্গে মুকুল কথা বললেও তিনি যে নিজের মোবাইল থেকে কথা বলেননি, সে বিষয়েও সিবিআই কর্তারা নিশ্চিত। সেই যুক্তি দিয়েও তিনি সুদীপ্তর সঙ্গে কথা বলার অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেন বলে সিবিআই কর্তারা মনে করছেন।

তাই সব দিক ভেবেচিন্তেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন সিবিআই কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর যেখানে যতটুকু যোগাযোগ ছিল, তার কোনওটাই মুকুলের অজ্ঞাতসারে হতে পারে না। আবার রাজ্য সরকারের সঙ্গেও সারদা গোষ্ঠীর সম্পর্কের বিষয়ে মুকুলের থেকে জানতে চাওয়া হবে বলে তদন্তকারীদের বক্তব্য। মুকুল রাজ্য সরকারের কোনও পদে না-থাকলেও তিনি শাসক দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা। কাজেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর সম্পর্কের বিষয়ে তিনি জানবেন না, এমনটা হতে পারে না বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু মুকুল যে সবটাই অস্বীকার করবেন, তা-ও বুঝতে পারছেন সিবিআই কর্তারা। সে ক্ষেত্রে তাঁকে গ্রেফতার করে কুণাল ঘোষ বা রজত মজুমদারের মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে সিবিআইয়ের। সিবিআইয়ের এক পোড়খাওয়া অফিসারের বক্তব্য, “জেরায় অনেকেই মুকুলের জড়িত থাকার কথা বলেছেন। কিন্তু মুকুল আর মদন মিত্র এক নন। জেরার মুখে মুকুল যে ভেঙে পড়বেন, এমনটা আশা করা ঠিক নয়। বরং সুকৌশলে নিজের গা বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। অনেক কিছুই অস্বীকার করার চেষ্টা করবেন। আইনজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করে আসবেন। আমাদেরও সেই ভাবে তৈরি থাকতে হবে।”

তদন্তকারীদের বক্তব্য, মুকুলকে জেরা করার আগে তাই যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে সিবিআই। তাই কিছু দিন ধরেই সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা মুকুলের গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছিলেন। কলকাতা থেকে বেরিয়ে মুকুল যত বারই দিল্লি এসেছেন এবং দিল্লি থেকে অন্য কোথাও গিয়েছেন, তাঁকে ‘শ্যাডো’ করা হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, নভেম্বরে মুকুল দিল্লি থেকে আগরায় গিয়েছিলেন। তার পর ডিসেম্বরেও তিনি দিল্লি এসে কিছু দিনের জন্য শহরের বাইরে চলে যান। সে সময়ও তাঁর গতিবিধি সিবিআইয়ের নজরে ছিল। রাজধানীতে ফিরে কয়েক জন নামজাদা আইনজীবীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মুকুল। সিবিআইয়ের তদন্ত নিরপেক্ষ হচ্ছে না, এমন অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। সে বিষয়েও খুঁটিনাটি খোঁজখবর রেখেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের তদন্তের গতি ঠেকাতে মুকুল তথা তৃণমূলের তরফে কী ধরনের আইনি পথ নেওয়া হতে পারে, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছিলেন সিবিআই গোয়েন্দারা।

saradha scam mukul roy cbi ed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy