Advertisement
E-Paper

তৃণমূল বিশ্বাসঘাতক, ভাইচুং প্রসঙ্গে গুরুঙ্গ

বুধবার তৃণমূল ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করা মাত্র অস্বস্তি শুরু হয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরে। রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেও তাঁকে সমর্থন করা হবে কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি মোর্চা নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার অবশ্য আর কোনও রকম দ্বিধায় না-ভুগে তৃণমূলকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে দিলেন মোর্চা-প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। তাঁর দাবি, “আমাদের সঙ্গে আলোচনা না-করেই তৃণমূল একতরফা ভাবে দার্জিলিঙের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাই তৃণমূলকে বিশ্বাসঘাতক ছাড়া আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে!”

কিশোর সাহা ও রেজা প্রধান

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৯:৩৪
প্রচারে নেমে পড়েছেন ভাইচুং। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

প্রচারে নেমে পড়েছেন ভাইচুং। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বুধবার তৃণমূল ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করা মাত্র অস্বস্তি শুরু হয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরে। রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেও তাঁকে সমর্থন করা হবে কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি মোর্চা নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার অবশ্য আর কোনও রকম দ্বিধায় না-ভুগে তৃণমূলকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে দিলেন মোর্চা-প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। তাঁর দাবি, “আমাদের সঙ্গে আলোচনা না-করেই তৃণমূল একতরফা ভাবে দার্জিলিঙের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাই তৃণমূলকে বিশ্বাসঘাতক ছাড়া আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে!”

প্রচার শুরু করতে এ দিনই দার্জিলিং পৌঁছেছেন ভাইচুং। আর তার পরই এই বোমা ফাটালেন গুরুঙ্গ। মোর্চার অন্দরের খবর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার, এই তিন আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার কথাও ভাবনাচিন্তা করছেন তিনি।

গুরুঙ্গের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “গুরুঙ্গ সরকারি ভাবে কিছু বলেননি বলেই জানি। পুরো বিষয়টি না-জেনে কিছু বলব না।” মোর্চা এই পরিস্থিতিতে দার্জিলিং আসনে আলাদা প্রার্থী দিতে পারে কি? মুকুলবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি জানি না। আমাদের ওঁরা কিছু জানাননি।”

তৃণমূলের পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মা অবশ্য দাবি করেন, “মোর্চা যা-ই বলুক, কে কার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল, তা সময়ই বলবে। সাধারণ বাসিন্দাদের সমর্থন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছে।” ভাইচুংয়েরও আশা, “মোর্চা প্রার্থী দিলেও সকলের সমর্থন পেলে আমিই জিতব।”

তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই পাহাড়ে দীর্ঘ আন্দোলন শুরু করেছিলেন গুরুঙ্গরা। জিটিএ প্রধানের পদ থেকেও সরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থেকেই আন্দোলনের মোকাবিলা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুঙ্গরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। কলকাতায় এসে রাজভবনে নতুন করে জিটিএ সভাপতি পদে শপথ নিয়ে যান গুরুঙ্গ। মমতার ব্রিগেড সমাবেশেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। সব মিলিয়ে পাহাড়ে তৃণমূল-মোর্চা সম্পর্ক যখন সহজ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল, তখনই ভাইচুংকে কেন্দ্র করে ফের মনোমালিন্যের সুর শোনা গেল গুরুঙ্গের মুখে।

প্রস্তুতি। (বাঁ দিকে) বাঘা যতীনে সিপিএমের দেওয়াল লিখন।
হাজরা থেকে ভবানীপুরে তৃণমূলের মিছিলে মদন মিত্র। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, দার্জিলিঙে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার অভিপ্রায় কখনওই গোপন রাখা হয়নি। দলের পক্ষ থেকে গোড়াতেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যে মোর্চার সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতে কাউকে প্রার্থী করা হলেও তাঁকে ঘাসফুল প্রতীকেই লড়তে হবে। এমনকী, দার্জিলিঙে ভাইচুংই যে তাদের পছন্দ তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল মোর্চা নেতৃত্বকে। গত মাসের ১৩ তারিখ দার্জিলিং পুলিশের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এবং গুরুঙ্গের উপস্থিতিতে মঞ্চে হাজির ছিলেন ভাইচুং। বস্তুত, গুরুঙ্গের সঙ্গে কথা বলে ভাইচুংকে প্রার্থী করা হতে পারে, এমন জল্পনা পাহাড়ে ছিলই।

তা হলে তৃণমূলকে কেন বিশ্বাসঘাতক বললেন গুরুঙ্গ? এ দিন দার্জিলিঙের ‘জনতার দরবারে’ সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন মোর্চা প্রধান। বুঝিয়েছেন, ভাইচুংয়ের বিরুদ্ধে তাঁর মূল অভিযোগ, তিনি দার্জিলিঙের লোক নন। এ দিন ভাইচুংয়ের নাম না-করে গুরুঙ্গ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আগে বলেছিলেন সিকিম থেকে ওঁকে প্রার্থী করা হবে। দার্জিলিঙে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না বলেই জানানো হয়েছিল।” আর তার পরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ফের গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছেন মোর্চা-প্রধান। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের ঘোষণা থেকে প্রমাণ হল যে, ওরা মোর্চার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নয়। আসলে স্থানীয় কাউকে প্রার্থী না-করে গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে ধামাচাপা দিতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু এটা সম্ভব নয়।”

এখানেই না-থেমে পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের জল্পনা উস্কে দিয়েছেন গুরুঙ্গ। বলেছেন, “তৃণমূলের থেকে বামেরা ঢের ভাল। তৃণমূলের মতো ওরা অন্তত পুলিশ দিয়ে প্রতিকূলতা তৈরি করত না। আর রাজনীতিতে স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু হয় না।”

মোর্চা সভাপতির বক্তব্যের নিরিখে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূলের সঙ্গে একসঙ্গে পথ হেঁটে মোর্চা নেতারা অনেক অভিজ্ঞতাই অর্জন করেছেন। তা থেকেই হয়তো এমন উপলব্ধি। আমরা আলাদা রাজ্যের বিরোধী হলেও জাতিগত আবেগকে দমন-পীড়ন করে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করি না।”

এ দিন আরও একটা বার্তা সুকৌশলে দিয়েছেন গুরুঙ্গ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে যতই বিষোদ্গার করুন, সরাসরি ভাইচুং সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। ভাইচুং যে হেতু জনপ্রিয় মুখ, মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে তাঁর সঙ্গে। সেটা একেবারে তুচ্ছ করতে চাননি গুরুঙ্গ। তাই দাবি করেছেন, ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক এমনিতে ভালই। শুধু দার্জিলিঙের প্রার্থী হিসেবে ভাইচুংকে তাঁরা মেনে নিতে রাজি নন। ভাইচুংয়ের নাম করেই গুরুঙ্গ বলেন, “ভাইচুঙের সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক। তবে সিকিম থেকে প্রার্থী হলেই ওঁর পক্ষে ভাল হতো। দার্জিলিঙে প্রার্থী হয়ে নিজেকে বোধহয় রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে গেল ভাইচুং।”

এত কথার পর তৃণমূলের কাছে দার্জিলিং আসনটি জেতাটা অবশ্যই আরও বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হল।

এ দিন বিকেলে তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে মুকুলবাবু যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখনই তাঁর

কাছে ভাইচুংয়ের ফোন আসে। মুকুলবাবু তাঁকে বলেন, “তোমাকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করতে হবে। তবে সব রকম সহযোগিতা পাবে। কোনও চিন্তা নেই।”

morcha TMC loksabha election bhaichung kishore saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy