Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের ভাল লোককে কাছে টানুন: সূর্যকান্ত

দলের বাঁকুড়া জেলা সম্মেলনে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জেলার সমাবেশে সেটাই আরও স্পষ্ট করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তৃণমূলের যে অংশ শাসক দলে বীতশ্রদ্ধ, আহ্বান জানালেন তাঁদেরও ‘লাল ঝান্ডা’র তলায় নিয়ে আসার। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-র দিকে যাওয়া রুখে তাঁদের কাছে টানার পরামর্শ দিলেন দলের কর্মীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২২
বাঁকুড়ার জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। বুধবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বাঁকুড়ার জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। বুধবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

দলের বাঁকুড়া জেলা সম্মেলনে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জেলার সমাবেশে সেটাই আরও স্পষ্ট করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তৃণমূলের যে অংশ শাসক দলে বীতশ্রদ্ধ, আহ্বান জানালেন তাঁদেরও ‘লাল ঝান্ডা’র তলায় নিয়ে আসার। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-র দিকে যাওয়া রুখে তাঁদের কাছে টানার পরামর্শ দিলেন দলের কর্মীদের।

বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ ময়দানে ভিড়ে-ঠাসা সভায় বুধবার সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুর আহ্বান, “যাঁরা তৃণমূলের ঝান্ডা বইতেন কিন্তু এখন বিজেপি-র দিকে যাচ্ছেন, সেই সব শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষকে লাল ঝান্ডার তলায় নিয়ে আসতে হবে।” সারদা-কাণ্ড সহ নানা বিষয়ে টালমাটাল তৃণমূল ছেড়ে অনেকেই বিজেপি-তে ঝুঁকেছেন। গ্রামাঞ্চলেও এই মুহূর্তে তৃণমূল-বিরোধী হাওয়া তৈরি হচ্ছে। ওই অংশ যাতে বিজেপি-র দিকে না ঝোঁকেন, তা নিশ্চিত করতেই বিরোধী দলনেতা সিপিএম কর্মীদের এই বার্তা দিয়েছেন। রাজ্যে পরিবর্তনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আবেদন জানাতেন, সিপিএমে যাঁরা ‘ভাল’ লোক আছেন, তাঁরা তৃণমূলে আসুন। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই আবেদন এবং তার লক্ষ্য একেবারে উল্টে গিয়েছে!

যদিও ঘটনা হল, লোকসভা ভোটের পর থেকে বিভিন্ন জেলায় নিচু তলার বহু বাম নেতা-কর্মীও বিজেপি-তে পা বাড়িয়েছেন। সম্ভবত তা মাথায় রেখেই তৃণমূলের লোকজনকে দলে নেওয়ার জন্য জোর দিতে বলেছেন সূর্যবাবু। একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তখন এটা বললে হবে না যে ‘তুই তো আমাকে মেরেছিলি’ বা ‘আমাকে টিপ্পনি কেটেছিলি’! এই সবের কারণে তাদের দূরে ঠেলে দিলে চলবে না।” তবে তাঁর সতর্ক-বার্তা, “সারদা-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর (বাঁকুড়ারই বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) বস্ত্র নেই! বাঁকুড়ার আরও দু-তিন জন লোকের নাম থাকতে পারে। তাদের বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে আমাদের চাই।”

সমাবেশের পরেও সূর্যবাবুর ব্যাখ্যা, “তৃণমূলের সকলেই তো সারদার দুর্নীতিতে যুক্ত নন। বা সকলেই নারী নির্যাতন বা গুন্ডামিতে জড়িত নন! তৃণমূলের যে সাধারণ কর্মীরা দলের কাজে বিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ, তাদের সঙ্গে এনে আন্দোলনের কথা আমরা বারবারই বলছি।” সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে চা-শ্রমিকদের দাবি নিয়ে ধর্মঘটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা-সহ বিভিন্ন দলের সংগঠন যে যোগ দিয়েছিল, সেই উদাহরণও দেন তিনি।

বস্তুত, সদ্যসমাপ্ত সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্মেলনেও বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের দলে টানার বিষয়ে জোর দিতে বলেছিলেন সূর্যবাবু। সম্মেলন শেষের পর থেকেই তৃণমূলের নিচু তলার কর্মীদের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। তার ফল দেখা গিয়েছে এই সমাবেশেই।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেলিয়াতোড়ের বৃন্দাবনপুর অঞ্চল থেকে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন সুনীল বীর। তিনি এবং ওই গ্রামের বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে এ দিন দেখা গিয়েছে সূর্যবাবুর সভায়। সুনীলবাবু বলেন, “আমি ২০১০ সাল থেকে গ্রামে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম। কিন্তু এখন আমাকেই দলের কোনও সভা সমাবেশে ডাকা হয় না। তৃণমূল নেতারা মানুষের উপকার করবে না, তাই আমি ও আমার অনুগামীরা এখন সিপিএম করছি!” যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ-র দাবি, “আমাদের কোনও কর্মীই ছেড়ে যাচ্ছেন না। উল্টে সিপিএম থেকে তৃণমূলে আসছে।”

সূর্যবাবু যখন তৃণমূলের লোককেও কাছে টানার কথা বলছেন, সে দিনই কলকাতায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু কামদুনি থেকে সালকিয়া রাজ্যের সর্বত্র প্রতিবাদী মঞ্চগুলিকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আলিমুদ্দিনে এ দিন তিনি বলেন, “বরুণ বিশ্বাস খুন হওয়ার পরে সুটিয়া, ধর্ষণের ঘটনার পরে কামদুনি, এখন সালকিয়ার মানুষও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। অন্যেরাও প্রতিবাদ করুন। সব প্রতিবাদী মঞ্চ এক হলে তা বড় শক্তি হিসাবে গড়ে উঠবে। সরকারের মুখোশ খুলে যাবে!”

বাঁকুড়ার সভায় এ দিন ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সিপিএমের সদ্য প্রাক্তন জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বা বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমের বক্তৃতায় সোৎসাহে সাড়াও দিয়েছে জনতা।

বর্ধমানের বার্নপুরে এ দিনই সভা করে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করেন সিটুর সর্বভারতীয় সভাপতি এ কে পদ্মনাভন। দু’দিন আগে দুর্গাপুর থেকে শুরু হওয়া সিটুর পদযাত্রা বার্নপুরে পৌঁছনোর পরে এ দিন সমাবেশেও ভিড় হয়েছিল ভালই।

suryakanta mishra bankura tmc cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy