Advertisement
E-Paper

তুবড়ির মশলা থেকে অগ্নিকাণ্ড, দগ্ধ হয়ে মৃত্যু

পুজোর সময় তুবড়ি বানানো ছিল তাঁর শখ। যথারীতি এ বারও সেই কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার, পঞ্চমীর সকালে সেই তুবড়ির বারুদ থেকে ঘরে আগুন লেগে যাওয়ায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল সাঁকরাইলের দুইল্যা এলাকার যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের (৪০)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪১
ভস্মীভূত ঘরের জিনিসপত্র। ছবি: সুব্রত জানা।

ভস্মীভূত ঘরের জিনিসপত্র। ছবি: সুব্রত জানা।

পুজোর সময় তুবড়ি বানানো ছিল তাঁর শখ। যথারীতি এ বারও সেই কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার, পঞ্চমীর সকালে সেই তুবড়ির বারুদ থেকে ঘরে আগুন লেগে যাওয়ায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল সাঁকরাইলের দুইল্যা এলাকার যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের (৪০)।

হাওড়ার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে তুবড়ির খোল উদ্ধার হয়েছে। সুরজিৎবাবুর তুবড়ির মশলায় কোনও ভাবে আগুন লেগেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। বাড়ির সদস্য ও প্রতিবেশীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই তদন্ত হচ্ছে। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হচ্ছে। সুরজিৎবাবু বন্ধুবান্ধবদের অনুমান, তুবড়ির মশলা শুকোতে দিয়ে তিনি ধূমপান করছিলেন। তা থেকেই কোনও ভাবে আগুন লাগে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ত্রিশ ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছিলেন সুরজিৎবাবু। ধর্মতলার একটি হোটেলে তিনি কি-বোর্ড বাজাতেন। অনুষ্ঠানও করতেন। স্ত্রী এবং চার বছরের ছেলেকে নিয়ে সুরজিৎবাবু বাড়ির দোতলায় থাকতেন। যে ঘরটিতে এ দিন আগুন লাগে সেখানে থাকতেন তাঁর মা শ্যামলীদেবী। পাশের একটি ঘরে থাকেন ভাড়াটিয়া। বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনার সময় শ্যামলীদেবী ছিলেন দোতলায়। সুরজিৎবাবু নীচে নেমে আসেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থলেই সুরজিৎবাবু মারা যান। পড়শিরাই প্রাথমিক ভাবে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও দমকলে। পুলিশই দগ্ধ দেহটি উদ্ধার করে।

সুরজিৎবাবুর মায়ের দাবি, ‘‘ছেলে যে ঘরে বাজি বানাচ্ছিল জানতাম না। সকালে ও দোতলায় আমার সঙ্গেই কথা বলছিল। তার পর নীচে নেমে যায়। তার কিছু পরেই নীচের ঘর থেকে প্রচুর ধোঁয়া বেরোতে দেখে ও লোকজনের চেঁচামেচি শুনে নীচে নেমে আসি। তার পরে শুনি ওই ঘটনা।’’ ভাড়াটিয়া বলেন, ‘‘আমি একটা শব্দ শুনেছিলাম। তার পরেই দেখি পাশের ঘরে আগুন।’’ তবে, সুরজিৎবাবু যে পুজোর সময়ে আতসবাজি বানাতেন তা মেনে নেন তাঁর মাসি।

এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন সুরজিৎবাবুদের পারিবারিক বন্ধু পেশায় সঙ্গীত পরিচালক সৌমিত্র ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সুরজিতের আতসবাজি বানানোর শখ ছিল। নিজে তৈরি করে নিজেই পোড়াত। দুর্গাপুজোর সময় থেকেই বাজি তৈরির প্রস্তুতি শুরু হতো। আমাকেও কয়েক বার তুবড়ি, রংমশাল, ফুলঝুড়ি তৈরি করে দিয়েছিল। এমন হবে ভাবিনি। মনে হয় ওর ধূমপানের সময়েই কোনও ভাবে বাজির মশলায় আগুন লেগে যায়।’’

দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিদগ্ধ ঘরটি লণ্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। ছাদের চাঙর কিছুটা খসে গিয়েছে। বিছানার অর্ধেক পুড়ে ছাই। এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আলমারি, আধপোড়া শাড়ি, ডায়েরি। পড়ে রয়েছে তুবড়ির খোল, প্রেশার কুকার, গ্যাস ওভেন, সাঁড়াশি। বাড়ির বাইরেও পাওয়া যাচ্ছিল বারুদের গন্ধ। ঘরের সামনে জটলা করে থাকা পড়শিরা জানান, তাঁরা যখন পাড়ার পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত তখনই খবর আসে সুরজিৎবাবুর বাড়িতে আগুন লেগেছে। তবে, পড়শিদের কেউ কেউ সুরজিৎবাবুর তুবড়ি বানানোর কথা জানতেন না বলে জানিয়েছেন। গোটা ঘটনাটির যথাযথ তদন্ত দাবি করেছেন ওই এলাকার পঞ্চায়েত স্তরের কয়েক জন জনপ্রতিনিধি।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy