Advertisement
E-Paper

তহবিল দেখভালও অন্য হাতে

দলে ভাঙনের আশঙ্কা যত প্রকট হচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্য তত মরিয়া পদক্ষেপ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! তাঁর এক সময়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি মুকুল রায়কে ছাড়াই আগামী দিনে দল চালাতে হবে বুঝে এ বার তহবিল দেখভাল নিয়েও বিকল্প ভাবনা শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। তৃণমূলে সংগঠনের সাত-সতেরো এত দিন দেখতেন মুকুল। দলের তহবিল দেখভালও করতেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকই।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৮
মুকুল রায়ের নামে পোস্টার লাগানো রয়েছে একটি গাড়িতে। রবিবার নিজাম প্যালেসে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

মুকুল রায়ের নামে পোস্টার লাগানো রয়েছে একটি গাড়িতে। রবিবার নিজাম প্যালেসে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দলে ভাঙনের আশঙ্কা যত প্রকট হচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্য তত মরিয়া পদক্ষেপ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! তাঁর এক সময়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি মুকুল রায়কে ছাড়াই আগামী দিনে দল চালাতে হবে বুঝে এ বার তহবিল দেখভাল নিয়েও বিকল্প ভাবনা শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।

তৃণমূলে সংগঠনের সাত-সতেরো এত দিন দেখতেন মুকুল। দলের তহবিল দেখভালও করতেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকই। কিন্তু এখন আর সে দায়িত্ব মুকুলের হাতে ছেড়ে রাখার মতো ‘বিশ্বাস’ তৃণমূল নেত্রীর পুঁজিতে নেই! দলের অন্দরে তাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিকল্প সন্ধানের। এবং তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য, শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের কেউই একক ভাবে এমন সঙ্কটের মুহূর্তে এত স্পর্শকাতর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে রাজি নন! দলনেত্রীকে আপাতত কাজ চালাতে হচ্ছে তাঁর কোর গ্রুপের মধ্যে যৌথ দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েই।

সারদা-কাণ্ডের ধাক্কায় মুকুলের উপরে ভরসায় টান পড়ার সময় থেকেই ধীরে ধীরে সংগঠনের কর্তৃত্ব ‘যুবরাজ’কে তুলে দিতে চেয়েছেন মমতা। মুকুলের পুরনো দায়িত্বের অনেক কিছুতেই ইদানীং অভিষেক হয়েছে দলনেত্রীর ভাইপোর। কিন্তু দলের তহবিল সামলানোর দায়িত্ব এখনই ভাইপোকে দেননি তৃণমূল নেত্রী। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, সংগঠনে তরুণ অভিষেকের দ্রুত উত্থানে অনেক নেতাই মন থেকে আনন্দিত নন। তাঁরা সকলেই মুকুল-শিবিরের, এমন নয়। কিন্তু দলের মধ্যে চূড়ান্ত অস্থিরতার সময়ে সরাসরি অভিষেককেই খাতা সামলানোর দায়িত্ব অর্পণ করে আরও জটিলতা বাড়াতে চাইছেন না মমতা।

দলের এক রাজ্য নেতা অবশ্য বলছেন, “সিন্দুকের চাবি দলনেত্রীর কাছেই আছে এবং থাকবে! কিন্তু দল চালাতে গেলে রোজকার তহবিল দেখভাল, আয়-ব্যয়ের খাতা সামলানোর একটা ব্যাপার থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল রেখেই সেই কাজে পরিবর্তন আনার চেষ্টা হচ্ছে।” দলের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে তহবিলের খুঁটিনাটি সামলে এসেছেন মুকুলই। তাঁর কিছু কাজে নানা সময়ে দলের কারও কারও প্রশ্ন ও সংশয় জাগলেও তাতে কিছু এসে যেত না! কারণ, দলনেত্রীর অগাধ বিশ্বাস তখন তাঁর ‘নম্বর টু’র উপরেই ছিল। এখন দিন বদলেছে, বিশ্বাসও ভেঙেছে। তাই বিকল্পের ব্যবস্থা। তবে একই সঙ্গে দলের একাংশ বলছে, অতীতে তহবিলে কিছু ‘অস্বচ্ছতা’র অভিযোগ থেকে থাকলে তার কোনও দায়ই বিকল্প ব্যবস্থাপকদের উপরে চাপানো যাবে না!

মুকুল যখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ, সংগঠন চালানোর মতোই তহবিল সামলানোরও নিজস্ব কায়দা ছিল তাঁর। জেলায় জেলায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বৈঠক করতে আসছেন খবর থাকলে তাঁর অনুগামীরা নেমে পড়তেন তহবিল জোগাড়ে। সংগৃহীত রাজস্বের বেশির ভাগই জমা পড়ত দলীয় তহবিলে। রাজ্যের সব প্রান্ত থেকে তহবিল ভারী করে এ ভাবেই দলের কাছে নিজের অপরিহার্যতা বাড়িয়ে তুলেছিলেন মুকুল। এখন সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্রয়োজনীয়তাতেও ভাঁটা পড়েছে। দলের একাংশ আরও মনে করিয়ে দিচ্ছে, সারদা বা অন্য কোনও ঘটনার সঙ্গে এই তহবিলের কিন্তু সম্পর্ক নেই। এটা একেবারেই দৈনন্দিন দল চালানোর ভাঁড়ারের কথা।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দলীয় স্তরের আলোচনায় একাধিক রাজ্য নেতাকে তহবিল দেখভালের ভার দিতে চেয়েছেন দলনেত্রী। কিন্তু তাঁরা সবিনয় এড়িয়ে গিয়েছেন! এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে এত গুরুদায়িত্বে কাঁধ পেতে দিতে চাননি কেউই। অগত্যা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ (ববি) হাকিম, অরূপ বিশ্বাসদের নিয়ে তৈরি কোর গ্রুপের মাধ্যমেই আপাতত কাজ চালানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় বলেই শাসক দলের কোনও নেতাই এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। মুখ খোলেননি মুকুুলও। দলের এক রাজ্য নেতা শুধু বলছেন, “পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক সিদ্ধান্তই নিতে হয়!”

সাংগঠনিক পদে মুকুলের একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করে বক্সীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশিই আর্থিক বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা এনে মমতা তাঁর দলে মুকুল-যুগের অবসান ঘটিয়ে ফেললেন বলে মনে করা হচ্ছে। এক দিকে তিনি যেমন সংগঠনের গুরুদায়িত্ব মুকুলের হাতে রাখছেন না, তেমনই রায়-শিবিরে ভিড়তে পারেন, এমন সম্ভাব্য মুখদের নিজের দিকে টানার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। দলের অন্দরেই এখন তিনি মুকুলের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। দলের এক নেতার কথায়, “রায়বাহাদুর এখন তাঁর খাঁচায় পর পর মুরগি ঢোকাচ্ছেন আর গুনছেন কত হল, এই অবস্থাটা ভাল চোখে দেখছেন না দিদি! উপনির্বাচনের সময় দিদি কাউকে কাজ করতে বারণ করেননি। কিন্তু দূরত্ব বাড়িয়ে কেউ নিজেদেরই বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন!” দলের এই অংশের ইঙ্গিত অবশ্যই সপুত্র মুকুলের দিকে! সারদা-বিধ্বস্ত দলে তহবিল জোগাড়ের অভিনব পন্থা অবশ্য বহাল! ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে সহযোগী বা সক্রিয় সদস্য হওয়া যাবে তৃণমূলে। যা নবীকরণ হবে পাঁচ বছরের মাথায়। ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যেরা বিনা পয়সায় সদস্য হতে পারবেন। অন্যদের সদস্য হতে ১ টাকা লাগবে। কিন্তু বিতর্ক ৫০ হাজারের অনুদান নিয়েই। বিরোধীদের প্রশ্ন, এ ভাবে কি কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা হচ্ছে? সিপিএম ও বিজেপি নেতারা বলছেন, “তৃণমূল প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের মতো। মালিক মমতা। ম্যানেজার ছিলেন মুকুল। এখন ম্যানেজার বদলালেও মালিক যেমন খুশিই চলবেন!”

mukul roy mamata bandyopadhyay sandipan chakrabarty tmc turmoil
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy