লোকসভা নির্বাচনের ভরাডুবির বিশদ বিশ্লেষণ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের যে তিনটি আসনে সিপিআই প্রার্থী দিয়েছিল, তার ফলাফলের বিশ্লেষণও রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সিপিআই নেতৃত্বের ভূমিকা কী ছিল, কোথায় দোষ-ত্রুটি হয়েছে, তার ব্যাখ্যা নেই।
সিপিআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্বের তরফে এমন রিপোর্টই জমা পড়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। লোকসভা নির্বাচনের ভরাডুবি নিয়ে আলোচনা করতে গত তিন দিন ধরে দিল্লিতে সিপিআইয়ের জাতীয় কর্মসমিতি এবং জাতীয় পরিষদের বৈঠক বসেছিল। সেখানেই রাজ্য নেতৃত্বের এ হেন রিপোর্টে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। চার বাম দলের মধ্যে বড় শরিক সিপিএমের মতো আজ সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও হারের দায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লোকসভা নির্বাচনের এই ফলাফলের সাংগঠনিক ও নৈতিক দায় নিচ্ছে।” লোকসভা নির্বাচনের হারের দায় নিয়ে সিপিআইয়ের নয় সদস্যের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী পদত্যাগ করারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু জাতীয় কর্মসমিতির তরফে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বলা হয়, ইস্তফা দিয়ে কোনও লাভ হবে না। তার বদলে হারের কারণ খুঁজে বের করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতৃত্ব যে ভাবে দলীয় রিপোর্টে নিজেদের দায় এড়িয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে জাতীয় পরিষদের বৈঠকেই প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়া নয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতাদের পার্টি কংগ্রেস আয়োজন করার অনিচ্ছা নিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আগামী বছর সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা। কলকাতায় শেষ বার হয়েছিল ১৯৮৯-এ। চলতি পরিস্থিতিতে কলকাতায় বা পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোথাও সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেস হলে, তাকে কেন্দ্র করেই দলীয় সংগঠনে পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করা যেত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নেতারা সে বিষয়ে আগ্রহই দেখাননি। বাধ্য হয়ে সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেরল, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলিকে পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের অনুরোধ করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মতো কেরলে দলের অবস্থাও সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক দিকে পশ্চিমবঙ্গের নেতারা যেমন নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চাইছেন, অন্য দিকে জাতীয় পরিষদের বৈঠকে কেরলের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরেই দায় চাপাতে চেয়েছিলেন। তাঁদের আক্রমণের মুখে পড়েন প্রবীণ নেতা এ বি বর্ধন। সিপিআই এ বার তিরুঅনন্তপুরমে দলের কাউকে প্রার্থী না করে দক্ষিণ ভারতীয় চার্চের সদস্য বেনেট আব্রাহামকে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু সিপিআই ভোটের ফলে তৃতীয় স্থান পায়। টাকার বিনিময়ে ওই আসনের টিকিট দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগও ওঠে। আক্রমণের মুখে ক্ষুব্ধ বর্ধন সমস্ত দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চাইলেও তাঁকে আগলাতে এগিয়ে আসেন সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি। তিনি বলেন, কেরলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তিরুঅনন্তপুরমে প্রার্থী ঠিক হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy