Advertisement
E-Paper

ধৃত লঙ্কা, লক্ষ্মণকে আড়াল করছে দল

জমি দখলে বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে অপর্ণা বাগের মৃত্যুর ৩৬ ঘণ্টা পর পুলিশ গ্রেফতার করল মূল অভিযুক্ত লঙ্কেশ্বর ঘোষ, ওরফে লঙ্কাকে। তবে লঙ্কা-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা, দলের ব্লক সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোষচৌধুরীকে আড়াল করতে এ দিনও তৎপর ছিল দল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত একটি দলীয় সভায় দাবি করেন, লক্ষ্মণ ভাল নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেই সংবাদমাধ্যমের একাংশ তাঁকে দুষছে। লক্ষ্মণবাবুর নিজের বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪
লঙ্কা ঘোষ

লঙ্কা ঘোষ

জমি দখলে বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে অপর্ণা বাগের মৃত্যুর ৩৬ ঘণ্টা পর পুলিশ গ্রেফতার করল মূল অভিযুক্ত লঙ্কেশ্বর ঘোষ, ওরফে লঙ্কাকে। তবে লঙ্কা-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা, দলের ব্লক সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোষচৌধুরীকে আড়াল করতে এ দিনও তৎপর ছিল দল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত একটি দলীয় সভায় দাবি করেন, লক্ষ্মণ ভাল নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেই সংবাদমাধ্যমের একাংশ তাঁকে দুষছে। লক্ষ্মণবাবুর নিজের বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে।

রবিবার কৃষ্ণগঞ্জ ঘুঘড়াগাছিতে ৪০-৪৫ জন দুষ্কৃতীর একটি দল জমি দখল করতে এসে বোমা-গুলি চালায়। বুকে গুলি লেগে মৃত্যু হয় অপর্ণার। অভিযুক্ত সাত জনের মধ্যে ছ’জনই অধরা। এসপি অর্ণব ঘোষ বলেন, “কাউকেই ছাড়া হবে না। আশা করছি দ্রুত সবাইকে গ্রেফতার করতে পারব।” লঙ্কা উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের চার মাইলে তাঁর মেয়ের বাড়িতে গ্রেফতার হন।

সোমবার দলের জেলা সভাপতি স্থানীয় নেতৃত্বকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও হতাহতদের গ্রামে ঢোকারই সাহস দেখাতে পারল না তৃণমূল। এ দিনই গ্রামে যান বামফ্রন্ট, বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। অথচ শাসক দল আহত, নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা, গ্রামেই ঢুকল না। তৃণমূল সভা করল ঘুঘড়াগাছি গ্রাম থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে, কৃষ্ণগঞ্জ বাজারের খালবোয়ালিয়া মোড়ে। যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটিও কথা শোনা গেল না নেতাদের মুখে। বরং তাঁরা বিষোদ্গার করলেন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। সভায় গৌরীবাবু বলেন, “এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম আমাদের ব্লক নেতা লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে লিখেছে। এতেই প্রমাণ হয়ে যায় লক্ষ্মণ ঠিক পথেই এগোচ্ছেন।” গৌরীবাবুর দাবি, ঘটনার পিছনে আছে সিপিএম। গ্রামে গিয়ে এ কথা তাঁরা মানুষকে বোঝালেন না কেন? ৮ কিলোমিটার দূরে সভা করার মানে কী? গৌরীবাবুর ব্যাখ্যা, প্রকৃত ঘটনা মানুষকে জানানো জরুরি। সেটা গ্রামে গেলে হত না। তাই খালবোয়ালিয়ায় সভার আয়োজন।

ঘুঘড়াগাছির বাসিন্দাদের বক্তব্য, তৃণমূলের গ্রামে ঢোকার মুখ নেই। এ দিন তৃণমূল গ্রামে ঢুকলে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হত। তাই এখন গ্রামে না-ঢোকার সাফাই গাইছে। গ্রামের বাসিন্দা রতন বাগ বলেন, “তৃণমূল গ্রামে ঢুকলে ছেড়ে দিতাম নাকি?”

ব্লক তৃণমূলের এক নেতাও একান্তে বলছেন, “এখন গোটা গ্রাম উপর খেপে রয়েছে। সব জেনেশুনে ক্ষোভের মুখে পড়ার মানে হয় না। তাতে দলেরই মুখ পুড়বে। তাই জেলা নেতৃত্ব গ্রামে ঢোকার ঝুঁকি নেননি।”

কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে নিহতের বাড়িতে বিজেপির প্রতিনিধিরা। ডানদিকে, গ্রামেই ঢুকল না শাসক দল।

ঘুঘড়াগাছি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে খালবোয়ালিয়া মোড়ে সভা করল তৃণমূল। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

তৃণমূলের অস্বস্তির আরও একটা কারণ, রবিবারের ওই গুলি চালানো ও খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত লঙ্কা ঘোষ ঘটনার পরেই নিজেকে তৃণমূলের ‘সক্রিয় কর্মী’ বলে দাবি করেছেন। তৃণমূল তা অস্বীকার করলেও দলেরই লক্ষ্মণ-বিরোধী গোষ্ঠী বলছে অন্য কথা। তারা জানাচ্ছে, বেআইনি জমির কারবারি ও গরু পাচারকারী হিসেবে পরিচিত লঙ্কা আসলে লক্ষ্মণের ডান হাত। লোকসভা ভোটের প্রচারে দলের এক সর্বভারতীয় নেতার সঙ্গে মঞ্চে দেখা গিয়েছিল লঙ্কাকে। অভিযোগ, লক্ষ্মণের দৌলতেই লঙ্কার এত প্রভাব। লক্ষ্মণ এখন লঙ্কাকে ‘সমাজবিরোধী’ বলে দাবি করছেন।

কৃষ্ণগঞ্জের এক তৃণমূল নেতা বলছেন, “লঙ্কাকে কাজে লাগিয়েই প্রভাব বাড়িয়েছে লক্ষ্মণ। ওই ২২ বিঘা জমি দখলের আগে লঙ্কা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে দু’বার বৈঠকও হয়। আমরা সাবধান করলেও লক্ষ্মণ আর্থিক মুনাফার লোভে তা কানে তোলেননি। বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে যার ফল ভুগতে হবে গোটা দলকেই।”

এ দিন গৌরীবাবু, শান্তিপুরের বিধায়ক অজয় দে-সহ জেলা নেতৃত্ব সভার আগে মাজদিয়ায় কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক নেত্ৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। দলীয় সূত্রে খবর, সেখানে লক্ষ্মণবাবু ও তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীকে জেলা নেতৃত্ব জানান, এখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলবে না, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।

আর লক্ষ্মণবাবু বলেন, “আমি কেমন, গ্রাম তা জানে। অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দিইনি। দলের কেউ অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকলে তারও প্রতিবাদ করেছি। তাই নিয়ে দলের অনেকের সঙ্গেই আমার মতানৈক্য রয়েছে। সেই কারণেই আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত শুরু হয়েছে।”

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “গরু পাচারে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয় এখানে।” তাঁর দাবি, শাসক দলের মদত আছে বলেই পুলিশ ঘটনার পর নিষ্ক্রিয় ছিল। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “প্রকাশ্যে এত বোমা, গুলি কী ভাবে এল? শাসক দলের মদত না থাকলে এটা সম্ভব নয়।” কৃষ্ণগঞ্জের ঘটনার নিন্দা করে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “যে ভাবে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গ্রাম দখলের চেষ্টা করছে, তাতে স্পষ্ট রাজ্যে আইনের শাসন নেই।” বাম প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার কৃষ্ণগঞ্জে যাবে।

sushmit haldar tmc bjp lanka ghosh ghughuragachi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy