Advertisement
E-Paper

নিম্নচাপে কিছু প্রলেপ, সংশয় তবু বর্ষা নিয়ে

দিন তিনেকের বৃষ্টি। তাতেই মিটল ১৯% ঘাটতি। চলতি মরসুমে বৃষ্টির অভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ জেরবার হচ্ছিল। ঘাটতি বাড়তে বাড়তে পৌঁছে গিয়েছিল ৪৯ শতাংশে। আবহবিদেরা ভয় করছিলেন, এমন চলতে থাকলে দক্ষিণবঙ্গ খরার মুখে পড়বে, যাতে খরিফ চাষ মার খাবে ভাল রকম। কিন্তু গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ও তার প্রভাবজনিত বৃষ্টির দৌলতে আশঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০২:২৭

দিন তিনেকের বৃষ্টি। তাতেই মিটল ১৯% ঘাটতি।

চলতি মরসুমে বৃষ্টির অভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ জেরবার হচ্ছিল। ঘাটতি বাড়তে বাড়তে পৌঁছে গিয়েছিল ৪৯ শতাংশে। আবহবিদেরা ভয় করছিলেন, এমন চলতে থাকলে দক্ষিণবঙ্গ খরার মুখে পড়বে, যাতে খরিফ চাষ মার খাবে ভাল রকম। কিন্তু গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ও তার প্রভাবজনিত বৃষ্টির দৌলতে আশঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

মৌসম ভবনের খবর: গত তিন দিনের বর্ষণের জেরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। কৃষি-আবহবিদদের আশা, বর্ষা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঢোকার আগে আর এক দফা জোরালো বৃষ্টি নামলে ঘাটতির বহর আরও নামবে। একই ভাবে বিহারেও পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। উপরন্তু ঘোর গরমে বৃষ্টি না-হওয়ায় সেচে ভূগর্ভের জল ব্যবহার বেড়েছিল, যার দরুণ টান পড়েছিল ভূগর্ভস্থ জল ভাণ্ডারে। নিম্নচাপের বৃষ্টি সেই ক্ষতিও কিছুটা পুষিয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূল হবে কি না, তা নির্ভর করছে মূল বর্ষার উপরে। এ পর্যন্ত যা পূর্বাভাস, তাতে মৌসুমি বায়ু দক্ষিণবঙ্গে পৌঁছবে দেরি করেই। এবং তার পরেও সে ঠিকঠাক না-বর্ষালে সঙ্কটের উদ্ভব হতে পারে।

বস্তুত এ মরসুমে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বৃষ্টির হালচাল মোটেই আশাপ্রদ নয়। গরমকালে বৃষ্টি নামাতে হলে পরিমণ্ডলে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প দরকার, পূর্ব ভারতে যার জোগানদার হল বঙ্গোপসাগর। অথচ এ বার সেই বঙ্গোপসাগরেই জলীয় বাষ্পের টানাটানি। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের আশঙ্কা, লাতিন আমেরিকার পেরু উপকূলে সমুদ্রের উষ্ণতাবৃদ্ধির (এল নিনো) প্রভাব ভারতের বর্ষাতেও পড়বে। নয়াদিল্লির মৌসম ভবন অবশ্য ভারতের বর্ষার সঙ্গে এল নিনো-র কোনও সরাসরি যোগসূত্র এখনও দেখছে না। ঘটনাচক্রে মৌসম ভবনও কিন্তু প্রাথমিক ভাবে এ বার ‘স্বাভাবিকের কম’ বর্ষার পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে!

সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার ছায়া পড়েছে কৃষিক্ষেত্রে। কৃষি-আবহবিদেরা বলছেন, বর্ষাকালের খরিফ চাষ অনেকটাই বৃষ্টির উপরে নির্ভরশীল। গ্রীষ্মের মতো বর্ষাকালেও বৃষ্টি কমজোরি হয়ে পড়লে আমন ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। “শুধু ঘাটতি বর্ষার পূর্বাভাস নয়। মৌসম ভবনের অনুমান, এ বার বর্ষা আসবেও দেরিতে। তাই আশঙ্কাটা আরও বেড়েছে।” মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর। এমতাবস্থায় আমন ধানের বীজতলা তৈরি বা রোপণকালে কতটা বৃষ্টি মিলবে, তা নিয়ে চিন্তায় রাজ্যের কৃষি দফতর। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিজ্ঞানের শিক্ষক আশিস মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমনের চারা রোপণের সময় বৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। তখন বর্ষায় ঘাটতি হলে ফলন মার খেতে পারে।”

বাংলায় বষার্গমনে কত বিলম্ব হবে? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, কেরলে বর্ষা ঢুকবে দেরি করে। মৌসুমি বায়ুর ওই কেরল শাখাটিই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আনে। সুতরাং এখানেও তা দেরিতে পৌঁছবে। ১ জুন কেরলে বর্ষা ঢোকার কথা, যা দক্ষিণবঙ্গে পৌঁছয় ৮ জুন নাগাদ। মৌসম ভবনের ইঙ্গিত, এ বছর ৫ জুনের আগে কেরলে বর্ষা আসছে না। আর দক্ষিণবঙ্গে পৌঁছতে পৌঁছতে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়িয়ে যেতে পারে।

এ দিকে তিন দিনের বৃষ্টির পরে বুধবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানিয়েছেন, এ দিন নিম্নচাপটি উত্তরবঙ্গের দিকে সরে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তবে আলিপুরের পূর্বাভাস, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি ধরলেও গরম এখনই মাত্রা ছাড়াবে না। “আগামী ক’দিন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকবে।” আশ্বাস দিচ্ছেন গোকুলবাবু।

low pressure deficiency of rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy