Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নির্যাতনের নালিশ, হোম থেকে আবাসিকদের সরানোর নির্দেশ

চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) বিনা অনুমতিতে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি হোমে ১০-১৮ বছরের জনা ২৭ মেয়েকে রাখার অভিযোগ উঠল। খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে বাঁকুড়ার জেলাশাসক এবং সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন ওই হোম পরিদর্শনে গেলে তাঁদের কাছে আবাসিক মেয়েরা নির্যাতন-সহ একাধিক অভিযোগ করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) বিনা অনুমতিতে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি হোমে ১০-১৮ বছরের জনা ২৭ মেয়েকে রাখার অভিযোগ উঠল। খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে বাঁকুড়ার জেলাশাসক এবং সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সন ওই হোম পরিদর্শনে গেলে তাঁদের কাছে আবাসিক মেয়েরা নির্যাতন-সহ একাধিক অভিযোগ করে।

ঘটনাচক্রে রবিবারই বাঁকুড়া শহর লাগোয়া হরিয়ালগাড়া এলাকার ওই বেসরকারি হোমের চার জন আবাসিক হোম থেকে পালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে এক জনকে পুলিশ পরে উদ্ধার করে। এর পরেই জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, আবাসিক মেয়েদের ওই হোমে রাখা আর নিরাপদ নয়। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার হোমের আবাসিকদের উদ্ধার করে বাঁকুড়ার কেঠারডাঙা এলাকার অন্য একটি বেসরকারি হোমে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেয় বাঁকুড়া জেলা সিডব্লিউসি।

মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বালিকা হোমেও আবাসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, গত ২৩ মার্চ সমাজ কল্যাণ দফতর পরিচালিত ওই হোমের চার কিশোরী পালানোর পরিকল্পনা করে। তা জানতে পেরে হোমের কর্মী রূপালি সিংহ রায় ১৫ থেকে ১৭ বছরের ওই কিশোরীদের শাস্তিস্বরূপ চুল কেটে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিন কিশোরীর চুল খাবলা খাবলা করে কেটে দেন হোমের অন্য কর্মী। আর এক কিশোরী কোনওক্রমে রক্ষা পায়। ঘটনার কথা স্বীকার করে হোমের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তীও বলেন, “সমাজ কল্যাণ দফতরের কাছে তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।”

বাঁকুুড়ার হোমেও নির্যাতনের অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। জেলা সিডব্লিউসি-র জেলা চেয়ারপার্সন শেখ মুরসালিন জানান, গত মঙ্গলবার সমাজকল্যাণ দফতর থেকে তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়। তাতে হরিয়ালগড়ার হোমটির এক আবাসিককে পটনার হোমে পাঠানোর জন্য আইনি পদক্ষেপ করতে বলা হয়। কেন এই চিঠি, সে ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করতেই বেসরকারি হোমের নানা বেনিয়মের তথ্য উঠে আসে বলে জেলা সিডব্লিউসি সূত্রের দাবি।

শেখ মুরসালিন বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে খবর নিয়ে জানতে পারি প্রশাসনিক ভাবে ওই হোমটির কোনও অস্তিত্বই নেই! তা ছাড়া ২৭টি মেয়ে ওই হোমে থাকে শুধু সমাজকল্যাণ দফতরের নির্দেশে, সিডব্লিউসি-র অনুমতি ছাড়াই!”

মুরসালিন বলেন, ‘‘হোমটির বর্তমান যা অবস্থা, তাতে সেখানে মেয়েদের থাকা আদৌ নিরাপদ নয়। তাই আবাসিকদের ওই হোম থেকে সরিয়ে নিতে বলেছি। জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিককে ওই হোম সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত রিপোর্ট দিতেও বলেছি।”

বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “ওই হোম সম্পর্কে বিশদে জানতে হোমের সভাপতিকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।” জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক সুরেন্দ্রপ্রসাদ ভকত বলেন, “শুনেছি কলকাতায় ওই বেসরকারি সংস্থার আরও একটি হোম আছে। তবে, এই জেলায় ছিল না। সম্প্রতি জেলায় ওরা কাজ শুরু করেছে।”

ওই হোমের সভাপতি শচীদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁরা প্রশাসনিক নিয়মকানুন মেনেই বাঁকুড়ায় কাজ শুরু করেছেন। তাঁদের সংস্থার কাছে বৈধ লাইসেন্সও আছে। তাঁর বক্তব্য, “লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়েছে। তা পুনর্নবীকরণের জন্য দিয়েছি।”

সিডব্লিউসি-র অনুমতি না নিয়ে কেন মেয়েদের হোমে রাখলেন? শচীদুলালবাবুর দাবি, “বাঁকুড়া সিডব্লিউসি-র কাছে অনুমতির জন্য আমরা আবেদন করেছি। কলকাতা সিডব্লিউসি-র কাছ থেকে আমরা অনুমতি নিয়েছি।” শেখ মুরসালিন কিন্তু জানান, “অনুমোদন পাওয়ার কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই। হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cwc torture medinipur bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE