Advertisement
E-Paper

নিষিদ্ধ করেই কেএলও-র ডানা ছাঁটতে চাইছে রাজ্য

নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (কেএলও) নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনের একটি অংশ বলছে, সিদ্ধান্ত এক রকম পাকা। ঘোষণা কেবল সময়ের অপেক্ষা। পুলিশের নথি বলছে, ২০০২-ও এ সব চেয়ে বেশি নাশকতা ঘটিয়েছিল কেএলও ৬৪টি।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৪ ১৫:০৭

নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (কেএলও) নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনের একটি অংশ বলছে, সিদ্ধান্ত এক রকম পাকা। ঘোষণা কেবল সময়ের অপেক্ষা।
পুলিশের নথি বলছে, ২০০২-ও এ সব চেয়ে বেশি নাশকতা ঘটিয়েছিল কেএলও ৬৪টি। সেই সূত্রে সংগঠনের বেশ ক’জন প্রথম সারির নেতা পুলিশের জালে ধরা পড়ে। তার পর থেকে স্তিমিত হয়ে পড়ে সংগঠনের কাজকর্ম। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কেএলও-র বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ২৭টি নাশকতার অভিযোগ নথিভুক্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে জেলবন্দি কেএলও নেতাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সরকারের গড়া বন্দিমুক্তি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১১-র শেষের দিকে যে ক’জন কেএলও নেতাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান টম অধিকারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাধব মণ্ডল ওরফে মালকান সিংহ।
কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে স্বীকার করছেন প্রশাসনের একাংশ। কারণ, জামিনে মুক্ত পাঁচ-ছ’জন নেতার হাত ধরেই কেএলও উত্তরবঙ্গে নাশকতা চালাচ্ছে বলে তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে পুলিশ। এবং অধিকাংশ নাশকতার নেতৃত্ব দিচ্ছেন টম ও মালকান।
পুলিশ কর্তাদের মতে, ২০০৩-এ ভুটান সরকারের ‘অপারেশন ফ্লাশ আউট’-এর পরে কেএলও-র কোমর ভেঙে গিয়েছিল। সেই কারণেই গত কয়েক বছর চুপচাপ ছিল তারা। সময়টা কাজে লাগিয়েছিল সংগঠন নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে। সংগঠন গোছানোর সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের মুক্তি কেএলও-কে নতুন অক্সিজেন দিয়েছে। এবং গত এক বছরে তাদের একের পর এক নাশকতা উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে কার্যত চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, দেড় বছরে অসমের ধুবুরি, কোকরাঝাড় ও এ রাজ্যের জলপাইগুড়ি, মালদহ ও কোচবিহারে জনা ষাটেক নতুন মুখ কেএলও-তে নাম লিখিয়েছে। ২০১২-এর সেপ্টেম্বরে তাদের মায়ানমারে পাঠানো হয়। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত জওয়ানদের তত্ত্বাবধানে তারা একে ৫৬, কার্বাইন ও নাইনএমএম পিস্তল চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়। কেএলও-র অবশ্য দাবি, শুধু ২০১৩-তেই ১৭০ জনকে তারা অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
কেএলও-র কর্মকাণ্ড ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে খবর পেয়েই তাদের বাগে আনতে নড়ে বসে রাজ্য। স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশে গোয়েন্দা দফতর (আইবি) জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাজকর্ম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয় নবান্নে। সেখানেই কেএলও-কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়।
প্রশাসনের প্রশ্ন, কেএলও-কে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও মাওবাদীদের ক্ষেত্রে একই পদক্ষেপ হচ্ছে না কেন? যার জবাবে প্রশাসনের অন্য অংশ বলছে, প্রথমত, কেন্দ্রই মাওবাদীদের নিষিদ্ধ করেছে। ফলে রাজ্যের আলাদা কিছু করার দরকার নেই। আর দ্বিতীয়ত, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা তুলনায় অনেক কমজোরি হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক কালে তাদের ঘটানো নাশকতার সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু কেএলও পরপর নাশকতা ঘটিয়ে ক্রমশ মাথা চাড়া দিচ্ছে।
সরকারি হিসেবে, কেবল ২০১৩ সালেই উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলায় ২০টির বেশি নাশকতা ঘটিয়েছে কেএলও। সব চেয়ে বড় ঘটনাটি ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর-বাজরাপাড়ায় তাদের রাখা সাইকেল-মাইন ফেটে মৃত্যু হয় ছ’জনের। পরের দিন মালদহের বামনগোলায় চলন্ত বাসে কেএলও জঙ্গিরা গুলি ছুড়লে অল্পের জন্য বেঁচে যান সকলে। তারও আগে ওই বছরেরই অগস্ট মাসে কেএলও-র পাতা সাইকেল-মাইন নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে মৃত্যু হয় সিআইডি-র এক কনস্টেবলের।
এক পুলিশকর্তার কথায়, “প্রাথমিক ভাবে কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’-একটি ঘটনা ঘটিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে কেএলও। তার পরেই ধীরে ধীরে নাশকতার সংখ্যা বাড়তে থাকে।” পুলিশ সূত্রের মতে, অসম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমানা লাগোয়া এলাকায় দখলদারি কায়েম করতে চাইছে কেএলও। সে ক্ষেত্রে তাদের মূল প্রতিবন্ধকতা অর্থ। পুলিশকর্তারা বলছেন, অর্থ জোগাড়ে নামনি অসম এবং উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলার বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীর কাছে তোলা চেয়ে গত ছ’মাসে একাধিক হুমকি-চিঠি পাঠিয়েছে কেএলও। নাশকতা ঘটিয়ে সেই অর্থ জোগাড়ের পথই সুগম করতে চাইছে তারা।
এর মধ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগও কেএলও নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছে নবান্নে। তারা বলেছে, অসমের ন্যাশনাল ডোমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড (এনডিএফবি) নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে নতুন করে গাঁটছড়া বেঁধেছে কেএলও। মালদহ জেল থেকে সম্প্রতি যে তিন কেএলও নেতা ছাড়া পেয়েছেন, তাঁদের এক জনের বাড়ি অসমে। মূলত তিনিই এনডিএফবি-র সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, “এক সময় আলফা-র কাছ থেকে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য পেলেও ভাঁড়ারে বেশি টাকা না থাকায় বর্তমানে নওগাঁও, কোকরাঝাড়, বঙ্গাইগাঁও ও ধুবড়ির সক্রিয় ছোট জঙ্গি গোষ্ঠীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে কেএলও।” নবান্নে সূত্রের খবর, এ নিয়ে অসমের সঙ্গে একাধিক বার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। কেএলও সংক্রান্ত তথ্যও দেওয়া-নেওয়া করছেন দুই রাজ্যের গোয়েন্দারা।

klo operation flushout
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy