Advertisement
E-Paper

নজরদারি বাড়বে পরের দফায়, ইঙ্গিত কমিশনের

রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটের পরেই প্রশ্নটা উঠেছিল। কিন্তু বিরোধীদের হাজারো অভিযোগের পরেও সে ভাবে সক্রিয় হয়নি নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশও গোড়ায় যাবতীয় অভিযোগ কার্যত উড়িয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলির লাগাতার চাপ এবং সোমবার আসানসোলে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীও সরব হওয়ার পরে আরও সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিল নির্বাচন কমিশন। শুধু বুথের মধ্যে নয়, বুথের বাইরেও ভোটারদের সাহস জোগাতে সোমবার একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:০৩
একা কুম্ভ। তৃতীয় দফার ভোটে বহু বুথে এমনই ছিল পাহারাদারি।  ফাইল চিত্র

একা কুম্ভ। তৃতীয় দফার ভোটে বহু বুথে এমনই ছিল পাহারাদারি। ফাইল চিত্র

রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটের পরেই প্রশ্নটা উঠেছিল। কিন্তু বিরোধীদের হাজারো অভিযোগের পরেও সে ভাবে সক্রিয় হয়নি নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশও গোড়ায় যাবতীয় অভিযোগ কার্যত উড়িয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলির লাগাতার চাপ এবং সোমবার আসানসোলে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীও সরব হওয়ার পরে আরও সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিল নির্বাচন কমিশন। শুধু বুথের মধ্যে নয়, বুথের বাইরেও ভোটারদের সাহস জোগাতে সোমবার একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

কেন এই নয়া বন্দোবস্ত? বিরোধীরা বলছেন, চলতি নির্বাচনের প্রথম তিন দফায় কার্যত চোখেই পড়েনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোটকেন্দ্রেই আটকে ছিল তারা। কিন্তু চতুর্থ দফায় ভোটে জওয়ানদের রাস্তাঘাটে দেখা যাবে, এখন সেই আশ্বাস দিচ্ছে কমিশন। এর জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী বরাদ্দ করেছে তারা। যদিও বাস্তবে সেই আশ্বাস কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয়ে বিরোধীরা।

তৃতীয় দফায় ভোটে যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘাটতি ছিল, তা কিন্তু নয়। জেলা প্রশাসনের দাবি মেনে কেন্দ্রপিছু যথেষ্ট সংখ্যক বাহিনী পাঠিয়েছিল কমিশন। তা হলে কেন ‘অবাধ’ রিগিংয়ের অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা? সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের বক্তব্য, জেলা প্রশাসনের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী মজুত থাকলেও ভোটের দিন তাদের সক্রিয় ভাবে ব্যবহারই করা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেক্টর অফিসে কিংবা থানা ব্যারাকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল জওয়ানদের। বিরোধীদের অভিযোগ, যা-ও বা কিছু ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছিল, সেগুলো ছিল নিছকই সাধারণ বুথ। যে সব স্পর্শকাতর বুথে তাদের থাকাটা জরুরি ছিল, সেখানে চোখে পড়েনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। বদলে ওই সব জায়গায় রাজ্যের পুলিশই দেখা গিয়েছে বেশি। সুধীর রাকেশ অবশ্য বলছেন, “নির্বাচন পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। কমিশনের কাজ, সেই পরিচালনায় কোনও ফাঁকফোকর থাকলে তা দ্রুত পূরণ করা।” যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, নির্ভয়ে বুথে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা কমিশনের দায়িত্ব। তৃতীয় দফায় ভোটে তারা সেই ভূমিকা কার্যত পালনই করেনি।

বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে চতুর্থ দফায় পুলিশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে চাইছে কমিশন। তৃতীয় দফার পরেই সুধীরকে মাথায় রেখে রাজ্যের সিইও সুনীলকুমার গুপ্ত ও রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মুত্যুঞ্জয়কুমার সিংহকে নিয়ে যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরি হয়েছে, শনিবার রাতে তাঁরা ভিডিও কনফারেন্স করেন সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি, ডিএম ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে। সেখানে ঠিক হয়, শুধু বুথ বা লাগোয়া ৫০০ মিটার নয়, ভোট চলাকালীন রাজ্য পুলিশের ‘কুইক রেসপন্স টিম’ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা নির্বাচন কেন্দ্রের অলিগলিতেও টহল দেবে। তারা সেই কাজ নিখুঁত ভাবে করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কমিশন নির্দেশ পাঠিয়েছে, এলাকা টহলের সময় যে বুথগুলিতে তারা যাবে, সেখানে তাদের হাজিরার সময় নথিভুক্ত করতে হবে। যাতে কোনও দল সংশ্লিষ্ট বুথের ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে কোনও অভিযোগ করলে কমিশন ওই টহলদারি দলের থেকে রিপোর্ট তলব করতে পারে।

বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি বুথের মধ্যেও সুষ্ঠু ভোটের আবহ নিশ্চিত করতে চাইছে কমিশন। সোমবার পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ সাতটি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে (সিইও) একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে তারা। সেখানে মূলত চারটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন প্রতিটি বুথে ‘মুভমেন্ট শিট’ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে সব দলের পোলিং এজেন্টদের বুথে ঢোকা ও বেরোনোর সময় নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, শাসক দল ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথের বাইরে বার করে দিয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ এসেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তা মাথায় রেখেই শেষ দু’দফা ভোটের আগে এই নিয়ম চালু করছে কমিশন।

এ ছাড়াও প্রতিটি বুথে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সংশ্লিষ্ট জেলার পদস্থ পুলিশ অফিসার, সেক্টর অফিসার ও কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরের তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে কোনও পোলিং এজেন্ট অভিযোগ জানাতে চাইলে যাতে তিনি সহজেই তা করতে পারেন, তাই এই ব্যবস্থা। একই সঙ্গে, কোনও পোলিং এজেন্টের অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পর্যবেক্ষকদের। এর বাইরে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে মাইক্রো অবজার্ভারদের রিপোর্টকেও।

বিরোধীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথের যে তালিকা কমিশনে জমা দিয়েছে, তার বাইরেও বেশ কিছু বুথ একই গোত্রের রয়ে গিয়েছে। অথচ সেগুলোকে সাধারণ বুথ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে ওই সব বুথে শাসক দল দাপট দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে কমিশন জানিয়েছে, কোনও বুথের গোত্র পরিবর্তন করতে চাইলে তারা সেই সুপারিশ জমা দিতে পারে কমিশনে। কমিশনের এক কর্তা বলেন, “ভোটকেন্দ্রের অতীত ইতিহাস যাচাই করে স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ডিজিটাল ক্যামেরা রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির সুপারিশ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে সেই তালিকা ধরে সাধারণ বুথেও ওয়েব কাস্টিংয়ের বন্দোবস্ত করা হবে, যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিতে ওই বুথগুলিতে কমিশন সরাসরি নজরদারি রাখতে পারে।” কমিশন সূত্রের খবর, রবিবার ও সোমবার অধিকাংশ বিরোধী দলই সেই সুপারিশ জমা দিয়েছে। তা খতিয়ে দেখে আজ, মঙ্গলবার চতুর্থ দফার ভোটের স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা।

আসানসোলে মুখ খুলেই থেমে থাকেননি মোদী। আজ তাঁরই নির্দেশে কমিশনে যান বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের ভোটে যে ভাবে ‘নীরব কারচুপি’ হয়েছে, তা যেন পরের পর্বে না হয় তার জন্য কমিশনকে তৎপর হতে অনুরোধ করেন তিনি। জেটলি কমিশনকে বলেছেন, গত এক দশকে কমিশনের সক্রিয়তায় ছাপ্পা ভোট বা বুথ দখলের মতো ঘটনা কার্যত নির্মূল হয়ে গেলেও চলতি ভোটে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশে ‘নীরব কারচুপি’র ঘটনা ফের সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রেখে রাজ্য পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অন্যান্য বিষয়ে মোদীর সরাসরি বিরোধিতা করলেও এ ক্ষেত্রে পরোক্ষে ওই বক্তব্যকে সমর্থন করছে সিপিএম-ও। তারা মনে করছে, রাজ্যে তৃতীয় দফা ভোটের পরে শাসক দলের বিরুদ্ধে যে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল বামেরা, মোদী কার্যত সেই দাবিতেই সিলমোহর দিয়েছেন।

মোদীর এই অবস্থানকে অবশ্য প্রকাশ্যে সমর্থন করেননি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। উল্টে সমালোচনার সুরে দলীয় নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “কোনও দল তখনই রেফারিকে আক্রমণ করে, যখন তারা হারতে বসেছে বুঝতে পারে।” যদিও রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা এ দিন ফের কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পতের সঙ্গে জেটলি বৈঠক করে বেরোনোর পরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। পরে তিনি বলেন, “কী ভাবে তৃতীয় দফায় রাজ্যে ছাপ্পা ভোট হয়েছে, তা আমরা প্রমাণ সহকারে কমিশনকে দেখিয়েছি। কমিশন ভরসা দিয়েছে, সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত কেন্দ্রগুলিতে পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি কমিশন।”

election commission security central force
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy