Advertisement
E-Paper

নতুন দুর্নীতির আঁচে ফল স্থগিত পিএসসিতে

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ। একের পর এক অভিযোগের ফাঁসে জড়িয়ে জেরবার অবস্থা পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি)। কখনও ফলপ্রকাশের আগে রিভিউ করে নম্বর বাড়ানোর অভিযোগ উঠছে, আবার কখনও চাকরিপ্রার্থীদের ঠিকুজি আগাম চেয়ে বিতর্কে জড়াচ্ছেন কমিশনের সদস্যরাই। এ বার শোনা গেল, ইন্টারভিউয়ের আগেই ভেটেরিনারি অফিসারের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রার্থীদের থেকে মোটা টাকা চাওয়া হয়েছে!

প্রসূন আচার্য ও রোশনী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৮

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ। একের পর এক অভিযোগের ফাঁসে জড়িয়ে জেরবার অবস্থা পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি)। কখনও ফলপ্রকাশের আগে রিভিউ করে নম্বর বাড়ানোর অভিযোগ উঠছে, আবার কখনও চাকরিপ্রার্থীদের ঠিকুজি আগাম চেয়ে বিতর্কে জড়াচ্ছেন কমিশনের সদস্যরাই। এ বার শোনা গেল, ইন্টারভিউয়ের আগেই ভেটেরিনারি অফিসারের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রার্থীদের থেকে মোটা টাকা চাওয়া হয়েছে!

অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিন মাস আগে ইন্টারভিউ হলেও যার জেরে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত ফলপ্রকাশের তারিখ। পাশাপাশি কার্শিয়াঙে রাজ্য সরকারের ডাও হিল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পদে নিয়োগের জন্য দেড় বছর আগে হয়ে যাওয়া ইন্টারভিউ ফের নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার মধ্যে স্বজনপোষণের গন্ধ পাচ্ছেন কমিশনের একাংশ। ওই মহলের দাবি, রাজ্যের এক মন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতেই এই আয়োজন!

স্বজনপোষণের প্রশ্নেই কয়েক মাস আগে পিএসসি তোলপাড় হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, গত অগস্টে ডব্লিউবিসিএসের সি গ্রুপের এক প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষার নম্বর রিভিউ করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফলপ্রকাশের আগেই, যাতে তিনি ইন্টারভিউয়ে ডাক পান। তার রেশ মেলাতে না-মেলাতে সম্প্রতি আর একটি গুরুতর অনিয়মের খবর ফাঁস হয়েছে। জানা গিয়েছে, সদস্যদের একাংশের চাপের মুখে কমিশন বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ইন্টারভিউয়ের সাত দিন আগে চাকরিপ্রার্থীদের নাম-ঠিকানা বোর্ড সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এতে প্রার্থীদের সঙ্গে আগাম যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁদের রাজনৈতিক আনুগত্য যাচাই ও আর্থিক লেনদেনের পথ খোলা রাখা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনের অন্দরে-বাইরে তুমুল ক্ষোভের মুখে পড়ে পিএসসি শেষমেশ সিদ্ধান্তটি বাতিল করেছে। কমিশনের পরিচালন বোর্ড পুনর্গঠনেরও উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত।

এরই মধ্যে উঠে এল ভেটেরিনারি নিয়োগ নিয়ে নতুন অভিযোগ।

কী রকম?

কমিশনের খবর: নতুন প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরে ভেটেরিনারি অফিসার নিয়োগের জন্য পিএসসি ইন্টারভিউ নিয়েছিল ২২ অক্টোবর। সংরক্ষিত আসন বাদ দিয়ে ৫৬টি পদে প্রার্থী ছিলেন ১৫৭ জন। ইন্টারভিউয়ের আগে একাধিক চাকরিপ্রার্থী অভিযোগ করেন, যে বিশেষজ্ঞেরা ইন্টারভিউ নেবেন, তাঁদের নাম করে ওঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষককে যাতে ইন্টারভিউ বোর্ডে রাখা না হয়, সে জন্য পিএসসি-সচিবের কাছে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে লিখিত অনুরোধও আসে। কিন্তু তাকে গুরুত্ব না-দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়েই ইন্টারভিউ নেওয়ানো হয়।

আর তার পরে টাকা লেনদেনের অভিযোগ ক্রমশ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। সাধারণত ইন্টারভিউয়ের সাত দিনের মধ্যে ফলপ্রকাশ হলেও এ ক্ষেত্রে তা স্থগিত রাখতে হয়েছে। এমন অভিযোগ যে উঠেছে, তা স্বীকার করে পিএসসি-র চেয়ারম্যান নুরুল হক বলছেন, “ব্যাপারটা আমরা খতিয়ে দেখছি। ইন্টারভিউ বোর্ডে একাধিক সদস্য থাকেন। কোনও এক জনের সুপারিশে চাকরি হওয়া সম্ভব নয়। তা-ও দেখছি, কী হয়েছে।” কী ভাবে দেখছেন?

চেয়ারম্যানের জবাব, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সত্যাসত্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তাঁরা রিপোর্ট দেওয়ার পরে চূড়ান্ত ফল বেরোবে।”

অন্য দিকে ডাও হিল পর্ব ঘিরেও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা পদে নিয়োগের ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে ২০১৩-র ২৬ সেপ্টেম্বর। ইন্টারভিউয়ের পরে সফল প্রার্থীদের প্যানেল তৈরি হয়ে যায়। তবে তা প্রকাশের আগে একটি নোটে প্রশ্ন তোলা হয়, যাঁরা ইন্টারভিউ দিয়েছেন, কমিশন-নির্ধারিত বাধ্যতামূলক যোগ্যতা তাঁদের সকলের ছিল কি? বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, প্রার্থীদের দায়িত্বশীল পদে পাঁচ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ‘কর্পোরেট লাইফ তৈরি’ ও ‘শৃঙ্খলারক্ষার দক্ষতা’ থাকতে হবে। ওই দুই যোগ্যতার ব্যাখ্যাও স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে জানতে চায় কমিশন। দফতর জানায়, অতীতে ওই দুই যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের নজির রয়েছে। তা ছাড়া নিয়মটি পিএসসি অনুমোদিত, আইন বিভাগেরও স্বীকৃত।

এর পরে পিএসসি’র জারি করা নির্দেশ দেখে কর্মীরাই তাজ্জব বনে গিয়েছেন! তাতে বলা হয়েছে, প্রায় দেড় বছর আগের ইন্টারভিউয়ে যে দশ জনকে ডাকা হয়েছিল, আগামী ২৮ জানুয়ারি তাঁদের ফের ইন্টারভিউয়ে ডাকতে হবে। কেঁচে গণ্ডুষ কেন, তার কোনও কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। তবে কমিশনের অন্দরের এক সূত্রের দাবি, রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দিতেই একই ইন্টারভিউ দু’বার নেওয়ার এই বেনজির নির্দেশ! কমিশনের কর্মীমহলের একাংশে এখন এ নিয়ে জল্পনাও চলছে।

ফের ইন্টারভিউ কেন, চেয়ারম্যান নুরুল হকের কাছেও তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। সরাসরি প্রশ্নের জবাব না-দিয়ে তিনি শুধু বলেছেন, “যোগ্যতার ভিত্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকায় প্যানেলটি আটকে ছিল। এ বার প্রকাশ করা হবে।”

psc prasun achariya roshni mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy