Advertisement
E-Paper

পাকড়াও ১৮ টুকলি-বান্ধব, টোকাটুকি নাকি হচ্ছে না

দিকে দিকে লাফালাফি করছে উৎসাহী ‘স্পাইডারম্যান’-রা। তাদের কেউ স্কুলের কার্নিস বেয়ে, কেউ বা বাঁশঝাড়ের উপরে উঠে পরিচিতের হাতে টুকলি তুলে দিচ্ছে। কেউ বা সে-সব সাধ্য না কুলোলে বাঁশের লগা দিয়েই জানলার ফাঁক দিয়ে অনায়াস দক্ষতায় টুকলি গলিয়ে দিচ্ছে। টুকলি ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশও। অথচ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রধান বলছেন, নকল সরবরাহের সঙ্গে টুকলির নাকি কোনও সম্পর্কই নেই! মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় টুকলি চালাচালির এই দৃশ্য নতুন নয়। ফি-বছরই রাজ্যের বহু স্কুলে এই ছবি দেখা যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪১
বাঁশঝাড় বেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের কার্নিসে দাঁড়িয়ে টুকলির জোগান।

বাঁশঝাড় বেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের কার্নিসে দাঁড়িয়ে টুকলির জোগান।

দিকে দিকে লাফালাফি করছে উৎসাহী ‘স্পাইডারম্যান’-রা। তাদের কেউ স্কুলের কার্নিস বেয়ে, কেউ বা বাঁশঝাড়ের উপরে উঠে পরিচিতের হাতে টুকলি তুলে দিচ্ছে। কেউ বা সে-সব সাধ্য না কুলোলে বাঁশের লগা দিয়েই জানলার ফাঁক দিয়ে অনায়াস দক্ষতায় টুকলি গলিয়ে দিচ্ছে। টুকলি ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশও। অথচ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রধান বলছেন, নকল সরবরাহের সঙ্গে টুকলির নাকি কোনও সম্পর্কই নেই!

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় টুকলি চালাচালির এই দৃশ্য নতুন নয়। ফি-বছরই রাজ্যের বহু স্কুলে এই ছবি দেখা যায়। প্রতিবারই সরকার বলে, টুকলি ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ বারও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, টোকাটুকির বিষয়টি জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের খতিয়ে দেখতে বলা হচ্ছে। কিন্তু, নকল সরবরাহে যে কোনও ভাবেই রাশ টানা যাচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলেছে মঙ্গলবার, মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিনেও।

পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহকে ঘিরে এ দিন তেতে ওঠে মালদহের এনায়েৎপুরে ই এ হাইস্কুল চত্বর। সোমবারই সেখানে নকল সরবরাহের রমরমা দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে এ দিন থানায় আবেদন করেছিলেন। দুপুরে পরীক্ষা শুরুর পরেই কিছু বহিরাগত যুবক পাঁচিলের উপরে উঠে ক্লাসঘরের জানলা লক্ষ করে নকলের কাগজ ছোড়া শুরু করে। পুলিশ বাধা দিতে এলে বাইরে জড়ো হয়ে থাকা যুবকদের একাংশ পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে ছুটে আসে র্যাফ। পুলিশ পাল্টা লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। কয়েক জন যুবককে মাঠের মধ্যেই কান ধরে ওঠবস করাতে শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। নকল সরবরাহের অভিযোগে এলাকা থেকে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার হাইস্কুল ও ইটাহার গার্লস হাইস্কুল এই দুই পরীক্ষাকেন্দ্রে এ দিন কয়েক জন যুবককে স্কুলের পাঁচিলে উঠে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে নকল ছুড়তে দেখা যায়। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। চাকুলিয়া ও করণদিঘি এলাকায় পরীক্ষার বিধিভঙ্গের অভিযোগে ৬ জনকে ধরেছে পুলিশ। পুলিশের সামনেই টুকলি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদের কান্দিতেও। কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টার মধ্যেই স্কুলের পাঁচিলের উপরে কাঁটাতারের বেড়া টপকে নকল সরবরাহ করতে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু বহিরাগতকে। পুলিশ কিচ্ছু করেনি।


মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষার দিন নলহাটির ভদ্রপুর মহারাজা নন্দকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ভাবেই চলল টুকলির জোগান।

বীরভূমের নলহাটি থানার ভদ্রপুর মহারাজা নন্দকুমার হাইস্কুলেও দেখা মিলেছে ‘স্পাইডারম্যান’-দের। খোদ মহকুমাশাসক এবং মহকুমা পুলিশ অফিসার গিয়ে সতর্ক করে আসলেও সেখানে রাশ টানা যায়নি টুকলি সরবরাহকারীদের। কখনও পাঁচিল টপকে কার্নিসে উঠে, কখনও বা বাঁশঝাড় বেয়ে বা বাঁশের লম্বা কঞ্চি দিয়ে দেদার টুকলি চালান হয়েছে পরীক্ষার ঘরে। নলহাটিরই মেহেগ্রাম স্কুলে টুকলি করতে বাধা দেওয়ার জন্য এক শিক্ষিকার সঙ্গে পরীক্ষা হলেই এক ছাত্রীর বচসা বেধে যায়।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় টোকাটুকিকে ঘিরে বছর দুয়েক আগে বিস্তর হাঙ্গামা হয়েছিল বনগাঁর এক স্কুলে। পরীক্ষার্থীরা তো বটেই, অভিভাবকদের একাংশও টুকতে দেওয়ার দাবি তুলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হুমকি দিয়েছিলেন। শেষমেশ পরীক্ষার পর পুলিশি নিরাপত্তায় বাড়ি পৌঁছতে হয়েছিল শিক্ষকদের। তবে, এ বার যে নকল রুখতে রাজ্য সরকারের মনোভাব যথেষ্ট কড়া, এ দিনই সে বার্তা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। যদিও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশেষ হেলদোল নেই। তিনি বরাবরই দাবি করছেন, কোনও পরীক্ষাকেন্দ্রেই টোকাটুকি হচ্ছে না। তা হলে কি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মত মিলছে না? কল্যাণময়বাবুর জবাব, “আমি তো বুঝতেই পারছি না, দ্বন্দ্বটা কোথায়! কোনও কেন্দ্রেই টোকাটুকি হচ্ছে না।” তা হলে নকল সরবরাহের যে ছবি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে, সেগুলি ভুল? কল্যাণময়বাবুর জবাব, “নকল সরবরাহের সঙ্গে তো টোকাটুকির কোনও সম্পর্ক নেই! নকল সরবরাহ হলেই যে টোকাটুকি হচ্ছে, তা বলা যাবে না।”

খোদ পর্ষদ-প্রধানের মুখে এমন আজব ব্যাখ্যা শুনে শিক্ষাবিদদের একাংশের টিপ্পনী, “ঠিকই বলেছেন উনি। নকল জানলা দিয়ে গলানো মানেই ভিতরে পরীক্ষার্থী যে টুকলি করছে, তা কী করে বলা সম্ভব? উনি নিজে যেহেতু দেখেননি, তাই টুকলি হচ্ছে না বলে মনে করে নিলেন। বাস্তবে কী হয়, তা তো পরীক্ষা হলে ঢুকলে বোঝা যায়!”

ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

madhyamik examination tukli copying
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy