Advertisement
E-Paper

পদ ছাড়লেন কালনার টিচার-ইনচার্জ

ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি আর তার জেরে চাপান-উতোর অভিযোগ চলছেই। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভক্তবালা বিএড কলেজে ছাত্রভর্তিতে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে প্রতারিত ছাত্রছাত্রীদের কয়েকজনকে ৩ জুলাই ডেকে পাঠাল বিশ্ববিদ্যালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০৩:২০

ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি আর তার জেরে চাপান-উতোর অভিযোগ চলছেই।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভক্তবালা বিএড কলেজে ছাত্রভর্তিতে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে প্রতারিত ছাত্রছাত্রীদের কয়েকজনকে ৩ জুলাই ডেকে পাঠাল বিশ্ববিদ্যালয়। চিঠি পাঠানো হয়েছে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তন্ময় আচার্যকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভক্তবালা কলেজ কর্তৃপক্ষ, এবং অভিযুক্ত দুই শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের উদ্দেশেও চিঠি তৈরি হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু ছাত্রভর্তি বিষয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপবাদের যে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, তার জেরে তদন্ত শুরু হতে না-হতেই কালনা কলেজে ভর্তির মেধা তালিকায় ‘কারচুপির’ অভিযোগ আনল টিএমসিপি। তাতে ‘অসম্মানিত’ টিচার-ইন-চার্জ দীপঙ্কর সেনগুপ্ত পদত্যাগ করলেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ ঘোষের অবশ্য দাবি, কারচুপির প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে।

কী ঘটেছে কালনা কলেজে? মঙ্গলবার ভর্তির মেধা তালিকা বেরোলে দেখা যায়, ছাত্রদের নম্বরে বেশ কিছু গরমিল রয়েছে। সর্বোচ্চ নম্বরেরও বেশি নম্বর পেয়েছেন কেউ কেউ। আবার কম নম্বর পাওয়া কিছু ছাত্রের নাম রয়েছে, বাদ পড়ে গিয়েছে বেশি নম্বরের প্রার্থী। কলেজ কর্তৃপক্ষ সেদিনই দাবি করে, টাইপ করার ভুলে এমন হয়েছে। সেদিনই সন্ধ্যার আগে নতুন মেধা তালিকা ঝুলিয়ে দেয়। কিন্তু এই নিয়ে বৃহস্পতিবার কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ করে তিন পাতার একটি চিঠি জমা দেয় টিএমসিপি।

দীপঙ্করবাবুর দাবি, “ওই অভিযোগপত্রে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ‘অসঙ্গতি’, ‘কারচুপি’-র মতো বেশ কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ছত্রিশ বছরের কর্মজীবন কাটিয়ে এ ধরনের অভিযোগে আমি অসম্মানিত বোধ করছি। তাই এই সিদ্ধান্ত।” ১৯ জুলাই কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই নতুন অধ্যক্ষ বেছে নেওয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত কাজ চালাবেন দীপঙ্করবাবু।

তবে এ বছর ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভর্তির ফর্ম বিলি ও জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছাত্র সংসদের মনঃপূত ছিল না বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে আপত্তিও তোলে সংসদের সদস্যরা। তাঁদের দাবি ছিল, সমস্ত আবেদনকারীর নামই মেধা তালিকায় প্রকাশ করতে হবে। শুক্রবার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ ঘোষ অবশ্য বলেন, “বিষয়টিতে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ জড়িত। আমরা কারচুপির প্রমাণ পেয়েছি বলেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলুর বিরুদ্ধেও ‘প্রমাণ’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তার মধ্যে ছিল একটি অডিও সিডি, যা প্রতারিত পড়ুয়াদের তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে রতনলালবাবুর প্ররোচনার প্রমাণ, দাবি করেছিলেন শঙ্কুদেব। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে নিয়ে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বুধবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন অভিজিৎবাবু। শুক্রবার অভিজিৎবাবু চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি আবার ৩ জুলাই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। সে দিন এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রী-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির থাকতে হবে। গত ১৬ জুন যারা উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিল, সেই ১৭জন পড়ুয়াকে ডেকে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে এ দিন অনেক ছাত্রছাত্রী অভিযোগ করেন, বুধবার রাত থেকে কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাঁদের ফোনে নানা হুমকি দিচ্ছেন। এক ছাত্রনেতা তাঁদের বিষয়টি মিটমাট করে নিতেও অনুরোধ করছেন। প্রতারিত ছাত্রী মনু রায় বলেন, “আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জানাতে চাই।”

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ছাত্র পরিষদের সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্র হয়েছিল বহরমপুর কলেজ। এ দিন পুলিশ ও প্রশাসন কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করায় নির্বিঘ্নে মিটল কাউন্সেলিং। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা কলেজ চত্বর। শোনা যায়নি কোনও স্লোগান। উধাও ছাত্র সংগঠনের ‘দাদাগিরি’। এ দিন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃত ও অঙ্ক অনার্সের কাউন্সেলিং হয়। তবে বহরমপুর কলেজের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে একটি চিঠি ফ্যাক্স করেন। অধীরবাবু বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছে। বহরমপুর কলেজের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছি।”

admission case kalna resignation teacher incharge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy