Advertisement
০২ মে ২০২৪

পরে নেমে রেলভাড়ার প্রতিবাদে সক্রিয় শাসক দল

রেলভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদের কৃতিত্ব নিতে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে সক্রিয় হল তৃণমূল! যাত্রী ভাড়ায় ১৪.২% এবং পণ্য মাসুলে ৬.৫% বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরের দিনেই গোটা দেশে প্রতিবাদে নেমেছিল বাম ও কংগ্রেস। সেই দিক থেকে পথে নামতে একটু দেরিই হল তৃণমূলের। সোমবার সেই পথে নামার দিনেই বিধানসভায় শাসক দলের তরফে প্রস্তাব এনে বর্ধিত রেলভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানানো হল। এই দাবিতে শাসক দলের সঙ্গে বিরোধী বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসও সহমত। এমনকী, পাশে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:০৬
Share: Save:

রেলভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদের কৃতিত্ব নিতে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে সক্রিয় হল তৃণমূল! যাত্রী ভাড়ায় ১৪.২% এবং পণ্য মাসুলে ৬.৫% বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরের দিনেই গোটা দেশে প্রতিবাদে নেমেছিল বাম ও কংগ্রেস। সেই দিক থেকে পথে নামতে একটু দেরিই হল তৃণমূলের। সোমবার সেই পথে নামার দিনেই বিধানসভায় শাসক দলের তরফে প্রস্তাব এনে বর্ধিত রেলভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানানো হল। এই দাবিতে শাসক দলের সঙ্গে বিরোধী বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসও সহমত। এমনকী, পাশে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও। তবু বিরোধীদের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে শাসক দল নিজেরাই সরকারি প্রস্তাব এনে আলোচনা চালিয়েছে এ দিন! বিরোধীদের মতে, পাছে প্রতিবাদের কৃতিত্ব হাতছাড়া হয়, তাই এতটা সক্রিয়তা সরকারি পক্ষে!

বিধানসভায় যখন এমন তৎপরতা, বাইরে তখন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মিছিল করে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। সেই মিছিল থেকে আগামী দিনে অন্যত্র আরও প্রতিবাদের কর্মসূচিও ঘোষিত হয়েছে। মিছিল শেষে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে অল্প ক্ষণের জন্য প্রতিবাদ সভায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ঘোষণা করেছেন, সারা রাজ্য জুড়ে তো বটেই, বাংলার বাইরে ত্রিপুরা-সহ অন্যান্য জায়গায় যেখানে তৃণমূলের সংগঠন আছে, সেখানেও আন্দোলন হবে। তাঁর বক্তব্য, সংসদকে এড়িয়ে নজিরবিহীন ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার রেলের ভাড়া ও পণ্য মাসুল বাড়িয়েছে। এর ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। কেন্দ্রের জনস্বার্থ-বিরোধী এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তৃণমূল সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রতিবাদ করবে।

রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ মানুষের মন পাওয়ার সহজ পথ বুঝেই এ দিন বিধানসভার অধিবেশন বসতেই তৎপর হয়েছিল বিরোধীরা। বাম বিধায়কেরা দু’টি প্রস্তাব এনেছিলেন। আবার বিরোধী দলনেতা একটি প্রস্তাব এনেছিলেন ৩১৯ ধারায়। যে ধারায় রায়দিঘির ঘটনা নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব এনেছিল শাসক দল। কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীও জিরো আওয়ারে বিষয়টি তুলতে দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সব এড়িয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পরিষদীয় সচিব তাপস রায়ের ১৬৯ ধারায় আনা একটি প্রস্তাব আলোচনার জন্য গ্রহণ করা হয়। যা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

এমন ঘটনা দেখে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু পরে অভিযোগ করেছেন, “বিধানসভা যে বিরোধীদের জন্য, এই রীতিটা সব সময় ভুলে যাওয়া হচ্ছে! এই প্রস্তাব আনতে গিয়েও সেই দলবাজি!” যদিও পার্থবাবুর দাবি, “আমি সবার আগে স্পিকারের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম বলে আমারটা গৃহীত হয়েছে।” প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় সূর্যবাবুর যুক্তি সমর্থন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী! পাশাপাশি বলেছেন, “কেন্দ্রে নতুন সরকার এসেছে। তাদের সময় দেওয়া উচিত। তাই নম্র ভাবে বলা উচিত, যে জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা প্রত্যাহার করুন!”

মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, আয় বাড়াতে গেলে নতুন নতুন ‘উদ্ভাবনী উপায়’ বার করতে হয়। তৃণমূলের শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের আনিসুর রহমান, আরএসপি-র সুভাষ নস্কর, কংগ্রেসের মনোজবাবু বা এসইউসি-র তরুণ নস্কর তো বটেই, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রস্তাবের পক্ষে দাঁড়ান মোর্চার হরকা বাহাদুর ছেত্রীও। তাঁর বক্তব্য, “আমরা লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে সমর্থন করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু ভোটের পরে প্রথম সিদ্ধান্তেই গরিব মানুষকে দারুণ আঘাত করা হল!”

বাইরে মিছিলে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সংস্কারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তা ঠিক হয়নি।” মিছিলের পুরো ভাগে ছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। মূল মিছিল গাঁধী মূর্তিতে আসার আগেই বিধানসভা থেকে শোভনদেবের নেতৃত্বে দলীয় বিধায়কদের মিছিল সেখানে আসে। বিধানসভায় দুই অর্ধের মাঝে বিরতিও লম্বা ছিল এ দিন! শ্রমিক নেতা সন্তোষ মজুমদারের নেতৃত্বে আইএনটিটিইউসি-র কর্মীরাও মিছিল নিয়ে আসেন। মূল মিছিলে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, তৃণমূল যুবা-র সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খান, সংগঠনে সদ্যনিযুক্ত কার্যকরী সভাপতি অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন। হিরণ জানিয়েছেন, জনবিরোধী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে।

অভিষেক জানিয়েছেন, ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার যাদবপুর ৮-বি বাসস্ট্যান্ড থেকে হাজরা পর্যন্ত তাঁরা প্রতিবাদ মিছিল করবেন। কাল, বুধবার হাওড়ায়, বৃহস্পতিবার আসানসোলে ও শনিবার শিলিগুড়িতে তাঁদের প্রতিবাদ মিছিল হবে। তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও জানিয়েছেন, শুক্রবার তাঁরা ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE