Advertisement
E-Paper

ফিরলে পুলিশে দেব, বললেন হবিবুরের মা

ছবি দেখেই বৃদ্ধা বলে উঠলেন, “এই তো আমার ছেলে!” খানিক পরে তাঁর স্বগতোক্তি, “যদি ও ফেরে, পুলিশে ধরিয়ে দেব।” বৃদ্ধা হলেন হবিবুর শেখের মা। আর হবিবুর? খাগড়াগড়-কাণ্ডের সৌজন্যে নামটা আর অপরিচিত নয়। গোয়েন্দারাই জানিয়েছেন, ওই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ কওসরের সঙ্গী এই হবিবুর।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৩
হবিবুর এবং তাঁর মা জ্যোৎস্না বিবি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

হবিবুর এবং তাঁর মা জ্যোৎস্না বিবি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

ছবি দেখেই বৃদ্ধা বলে উঠলেন, “এই তো আমার ছেলে!” খানিক পরে তাঁর স্বগতোক্তি, “যদি ও ফেরে, পুলিশে ধরিয়ে দেব।”

বৃদ্ধা হলেন হবিবুর শেখের মা। আর হবিবুর? খাগড়াগড়-কাণ্ডের সৌজন্যে নামটা আর অপরিচিত নয়। গোয়েন্দারাই জানিয়েছেন, ওই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ কওসরের সঙ্গী এই হবিবুর। বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের যে বাড়িতে কওসরের মূল ডেরা ছিল বলে তদন্তে উঠে আসছে, বীরভূমের হবিবুরের মাধ্যমেই সেই বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। ওই বাড়িটির মালিকের বর্ণনা শুনে হবিবুরের স্কেচও আকানো হয়েছে।

সেই হবিবুরের মা জ্যোৎস্না বিবি মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে নিজের ছেলের ছবি দেখেই চমকে উঠলেন। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনা তিনি প্রতিবেশীদের মুখে শুনেছেন। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে টিভিতে দেখেছেনও। পড়শিদের মুখে শুনেছেন ওই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে ছেলের। বোলপুরের মুলুক এলাকায় শান্তিপল্লির বাড়িতে বসে বছর পঞ্চাশেকের ওই মহিলা বললেন, “শুনেছি, আমার ছেলে ওই ঘটনায় জড়িত। তা সত্যি হলে ও ফিরলে আমিই ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেব!”

গলা কিন্তু এতটুকুও কাঁপেনি!

তাঁর সঙ্গে হবিবুরের শেষ দেখা বছর দুয়েক আগে। সেই দিনের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “বছর দুয়েক আগে আমার অপারেশন হয়। অপারেশনের দিন ও আমায় দেখতে এসেছিল। পর দিন রাতেই নিজের জামাকাপড় নিয়ে ঘর ছাড়ল। কাউকে কিচ্ছু বলে গেল না!” বোলপুরের আরতি সিনেমার কাছে আগে একটি পানগুমটি ছিল হবিবুরের বাবার। হাবিবুর বাবার সঙ্গে দোকানে বসত মাঝে মাঝে। বাবা মারা গেলে সেই গুমটিতেই হবিবুর বসত। এ দিন হবিপুরের বিবাহিতা দুই দিদি টুম্পা ও ছবি বলেন, “মাঝরাতে নিজের পোশাক নিয়ে পালালেও দোকানের চাবি রেখে গিয়েছিল ভাই।” সেই দোকানটি এখন বিক্রি করে দিয়েছে ওই পরিবার।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, হবিবুর মাস দুয়েক আগে বাবুরবাগে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছিল। সেখানেই তার সঙ্গে কওসর ও তার স্ত্রী জিন্নাতুর ওরফে লক্ষ্মী থাকত। লক্ষ্মীর দাদা কদর গাজীর বাড়ি কীর্ণাহারের নিমড়া গ্রামে। হবিবুরের এক দিদি এ দিন বললেন, “কদরের এক বোনের সঙ্গে হবিবুরের বিয়ে হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। কিন্তু, ওর বউকে কখনও চোখে দেখিনি।” বর্ধমান বিস্ফোরণের পর থেকেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে কদর। হদিস নেই হবিবুরেরও।

কেন পালাল হবিবুর , সে প্রশ্নের উত্তর নেই তার পরিবারের কাছে। তবে, এ দিন তার মা-দিদিদের মুখে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে শান্তিপল্লিরই বাসিন্দা ডালিম শেখের কথা। জ্যোৎস্না বিবির দাবি, “পালিয়ে যাওয়ার কিছু দিন আগে থেকেই ডালিমের সঙ্গে মাখামাখি শুরু হবিবুরের। তার পর থেকেই ধর্ম নিয়ে মাতামাতি শুরু করেছিল ছেলে।”

বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে বিভিন্ন জেলায় দুষ্কৃতীদের নানা যোগসূত্র বের করছে গোয়েন্দারা।

মঙ্গলবার সিউড়িতে বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে

বেরিয়ে আসছেন এনআইএ-এর সদস্যরা।—নিজস্ব চিত্র

ডালিমের আচরণ যে ‘রহস্যজনক’, সে কথা জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরাও। পেশায় বাসনের ফেরিওয়ালা হলেও তাঁরা ডালিমকে একাধিক ল্যাপটপ ব্যবহার করতে দেখেছেন। এ দিন ডালিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দরজায় তালা ঝুলছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর ছয়েক আগে শান্তিপল্লিতে এসে সপরিবার থাকতে শুরু করেন ডালিম। বলেছিলেন, নলহাটির লোহাপুরে তাঁর আদি বাড়ি। ঈদের পর থেকেই ডালিমের দেখা মিলছে না বলে পড়শিরা জানান। জানা গিয়েছে, বহিরাগত তিন ব্যক্তিকে বছরখানেক আগে এই এলাকায় একটি খাস জমি কেনার বন্দোবস্ত করে দেয় ডালিম। সেই জমিতে ওই তিন জন নিজেরাই বাড়ি তৈরি করে। বাইরের কোনও মজুর-মিস্ত্রি নেয়নি তারা। পরিচয় দেয় বাসনের ফেরিওয়ালা হিসেবেই। আশপাশের লোকজন জানাচ্ছেন, পরিবার নিয়ে এলেও এলাকায় তারা মিশত কম। বাড়ির মেয়েদের বোরখা ছাড়া কার্যত দেখাই যেত না।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল, উঁচু টিনের বেড়া দেওয়া তিনটি বাড়িতেই তালা বন্ধ। এক জনের বাড়ির উঠোনে পড়ে কার্তুজ। স্থানীয় সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েতের সদস্য প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত অফিসে এসেছিল ওই তিন জন। বাড়িতে চার চাকা যাওয়ার রাস্তার জন্য দাবি নিয়ে। আমরা বৈধ কাগজপত্র চাইলে ওরা আর ফিরে আসেনি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই তিন জনেরই এক জনের বাড়িতে এ বছর দোলে হবিবুর এসেছিল। নিজের বাড়ি যায়নি। পরিবারের দাবি, সেখানেই হবিবুরের বিয়ে হয়। কিন্তু সে বাড়ির কাউকে ডাকেনি। হবিবুরের দিদি টুম্পা বলেন, “গ্রামে এসে বিয়ে করল, অথচ ডাকল না আমাদের! যে ভাইকে চিনতাম, সে অন্য হাবিবুর। ছেলেটা এতো বদলাল কী করে, বুঝতে পারছি না।”

jyotsna bibi habibur mahendra jena nia khagragarh blast case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy