Advertisement
E-Paper

বিজেপিতে গিয়ে দ্রৌপদী বলছেন সামনে কঠিন পথ

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে মোলাকাতটা হচ্ছে-হবে করেও ফস্কে গিয়েছিল। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ঠিক সময়েই দেখা হল। বুধবার দুপুর। বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে রূপা নিজেই গাড়ি চালিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে উপস্থিত হলেন। হাওড়ার শরৎ সদনে বিজেপি-র ব্যবসায়ী সেলের একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে আসীন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে দলীয় পতাকা তুলে স্বাগত জানালেন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৪
বুধবার হাওড়ায় শরৎ সদনের একটি অনুষ্ঠানে বিজেপি-তে যোগ দিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।  ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

বুধবার হাওড়ায় শরৎ সদনের একটি অনুষ্ঠানে বিজেপি-তে যোগ দিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে মোলাকাতটা হচ্ছে-হবে করেও ফস্কে গিয়েছিল। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ঠিক সময়েই দেখা হল।

বুধবার দুপুর। বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে রূপা নিজেই গাড়ি চালিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে উপস্থিত হলেন। হাওড়ার শরৎ সদনে বিজেপি-র ব্যবসায়ী সেলের একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে আসীন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে দলীয় পতাকা তুলে স্বাগত জানালেন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

রুপোলি পর্দার কেরিয়ার থেকে রাজনীতিতে আসার প্রবণতাটা অন্যান্য রাজ্যে আগে থেকেই ছিল। গত কয়েক বছরে সেটা এ রাজ্যেও বেড়েছে। তাপস-শতাব্দী-দেবশ্রী-চিরঞ্জিত-সন্ধ্যা-মুনমুন থেকে একেবারে দেব পর্যন্ত লম্বা তালিকা। রাজ্য বিজেপিতে জর্জ বেকার, নিমু ভৌমিকরাও তাই। রূপাও ইদানীং খুব বেশি ছবি করছিলেন না। তাঁর নিজেরই কথায়, “এখন বছরে তিন-চারটি ভাল ছবি করি। এর বেশি কাজ করতে পারি না।”

রাজনীতিতে বিনোদন জগতের ভিড় এত বাড়ছে কেন? চলচ্চিত্র পরিচালক তথা নাট্যব্যক্তিত্ব সুমন মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “ইন্ডাস্ট্রির অর্থনৈতিক বাড়বৃদ্ধি অটুট থাকলে বা শৈল্পিক ভাবনার পরিসর বিস্তৃত থাকলে, কাজের মধ্যে থাকা সিনেমার লোকেরা সাধারণত রাজনীতির সংস্রব এড়িয়েই চলেন। এখানে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থাটা তেমন নয়। ফলে উল্টোটা ঘটছে।”

বাস্তবিক গুটিকয়েক ছবি ছাড়া ইদানীং টালিগঞ্জে লাভের মুখ দেখা দুর্লভ। ফলে ইন্ডাস্ট্রির একাংশের বক্তব্য, বাংলা ছবির হতশ্রী দশায় কোনও একটা রাজনৈতিক শিবিরে যোগ দেওয়াটাই এখন শিল্পীদের অবলম্বন। টালিগঞ্জের সর্বেসর্বা হতে চাওয়া প্রভাবশালী প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা মুখ্যমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠার পরে অভিনেতা-পরিচালকেরা বেশির ভাগই কোন পক্ষ নিতে হবে বুঝে নিয়েছেন। এই মিছিলে যাঁরা সামিল হননি, তাঁরা কোণঠাসা হয়ে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন।

চিত্রপরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বা অঞ্জন দত্ত অবশ্য ইন্ডাস্ট্রির দৈন্যদশার সঙ্গে শিল্পীদের রাজনৈতিক আশ্রয় খোঁজার তাগিদের যোগ নিয়ে কিছু বলতে চান না। তবে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে কোনও কোনও তারকা রাজনীতিতে যোগ দেন--- এ বিষয়ে একমত তাঁরা দু’জনেই।

নিজে বরাবরই রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ায় বিশ্বাসী হলেও ইদানীং কালে শিল্পীদের রাজনৈতিক শিবিরভুক্ত হওয়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এখন যাঁরা আসছেন, তাঁদের রাজনীতির ময়দানে সিরিয়াসলি নিতে হবে কোনওদিন ভাবিনি।”

ঘটনা হল, সংস্কৃতি বা বিনোদন জগতের মানুষেরা আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভোটে দাঁড়াতেন। এখন ভোট-বৈতরণী পার হতে শুধু প্রচারে নয়, প্রার্থী হিসেবেও বিনোদনের চেনা মুখকে দাঁড় করানোই দস্তুর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই ‘গ্ল্যামার কোশেন্ট’ আমদানিতে ভরসা রাখছে।

গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল, বিজেপি দু’জনেই এ রাজ্যে বিনোদন জগতের মধ্যে থেকে বেশ কয়েক জন প্রার্থী খুঁজে নিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে গায়ক বাবুল সুপ্রিয় ভোটে জিতে এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বড় পর্দা-ছোট পর্দার শিল্পীদের মধ্যে নিজেদের জমি বাড়ানোর কাজও বিজেপি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। রূপা এ দিন যোগ দিয়ে সেই দলটাই ভারী করলেন। তবে রূপার দাবি, “আমি শ্রমিকের মতো রাজনীতির কাজ শিখতে চাই। গ্ল্যামার কোশেন্ট হয়ে থাকতে আসিনি।”

কিন্তু একদা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ রূপা কেন বিজেপি-র দিকে ঝুঁকলেন? ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে স্বভাবতই এ নিয়ে জল্পনা

চলছে। রূপা ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে বরাবরই দূরত্ব রয়েছে। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে খাগড়াগড়-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের যাবতীয় রাজনৈতিক প্রচারে যখন বারবার শিল্পীরাই শাসক দলের অস্ত্র হয়ে উঠছেন, তখন রূপা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায়

সরব হয়েছেন। কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সারদায় সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে যখন পথে নেমেছিল টলিউড, রূপা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন।

ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর, এর জন্য রূপাকে পেশাগত ও ব্যক্তিগত ভাবে চরম হেনস্থাও হতে হয়েছে। রূপার সাম্প্রতিক ছবি ‘নয়নচাঁপার দিনরাত্রি’র প্রদর্শন বা মাল্টিপ্লেক্সে রিলিজ নিয়েও নানা ভাবে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সরাসরি রূপা-প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়েও সুমন বলছেন, “ব্যক্তিগত জীবন ও কাজের ক্ষেত্রে কোনও একটি ক্ষমতার হাতে বারবার কোণঠাসা হয়ে অনেকেই অনেক কিছু ভাবেন। বাধ্য হয়ে আর একটি ক্ষমতাশালী পক্ষের দিকে ঝুঁকে পড়েন।”

রূপার আগে যাঁর বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনার কথা শোনা গিয়েছিল, দলের তরফে নাম ঘোষণাও হয়ে গিয়েছিল, তিনি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এ দিন ঋতু বলেন, “এখানে কারও কারও কাছে কাজের জন্য ক্ষমতার কাছে থাকার তাড়নাটা বোঝা যাচ্ছে। কেউ কেউ সেটা পারেননি বলে কষ্ট পেয়েছেন।” ‘রূপাদি’কে রাজনীতির ইনিংসের জন্য শুভেচ্ছা জানালেও ঋতু নিজে মনস্থির করতে পারেননি বলেই দাবি করছেন।

সিনেমায় কেরিয়ার অস্তমুখী হয়ে পড়েছে বলে বা ইন্ডাস্ট্রিতে কোণঠাসা হয়ে তিনি রাজনীতিতে ঢুকছেন বলে অবশ্য মানতে চাননি রূপা। তাঁর দাবি, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানা বা গত লোকসভা ভোটেও তাঁর কাছে বিজেপি-র টিকিটের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তিনি ভোটে লড়া বা গ্ল্যামারময় কোনও ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে রাজনীতিতে আসেননি। ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ যাত্রা, রাজ্যের একমাত্র বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের কথাতেই তিনি মনস্থির করেন বলে রূপার দাবি। তারই পরিণতি টেলিসিরিয়ালের রাম-সীতা-রাবণ-কৃষ্ণের সঙ্গে বিজেপিতে জুড়ে গেল দ্রৌপদীর নামও। রূপার কথায়, “আমার কাছে ফিল্ম বা রাজনীতি কোনওটাই গ্ল্যামারসর্বস্ব নয়। সামনে কঠিন পথ জেনেই এসেছি।”

এবং কঠিন পথে হাঁটতে যে তিনি চিরকালই পছন্দ করেন, গেরুয়া-পাড় সাদা শাড়িতে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রূপা। প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবের সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, “আমি বছর চারেক আগে মুম্বইয়ে অনেক টাকার কাজ ছেড়ে কলকাতায় চলে এসেছি।” বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

rupa gangopadhyay bjp arun jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy