Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপির নয়া অস্ত্র চক্রান্তের অভিযোগ

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের সঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের সংঘর্ষ যখন নিত্যকার ঘটনা, তখন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৃণমূল বাংলায় অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। এমন একটা দিনে তিনি দাবি করেছেন, যে দিন বীরভূমের ইলামবাজারে বিজেপির এক সমর্থক খুন হয়েছেন। সেই ঘটনায় অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই।

ইলামবাজারে নিহত বিজেপি সমর্থকের স্ত্রী।-ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

ইলামবাজারে নিহত বিজেপি সমর্থকের স্ত্রী।-ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও ইলামবাজার শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৪ ০২:৫৩
Share: Save:

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের সঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের সংঘর্ষ যখন নিত্যকার ঘটনা, তখন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৃণমূল বাংলায় অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। এমন একটা দিনে তিনি দাবি করেছেন, যে দিন বীরভূমের ইলামবাজারে বিজেপির এক সমর্থক খুন হয়েছেন। সেই ঘটনায় অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে রাজ্যে বড় শক্তি হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছে বিজেপি। দু’টি আসন দখল করার পাশাপাশি তাদের ঝুলিতে পড়েছে ১৭ শতাংশ ভোট। তার পর থেকে রাজ্য জুড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস তো বটেই, বহু ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকেও কর্মী-সমর্থকেরা বিজেপিতে আসছেন। অনলাইনে ভর্তি থেকে শুরু করে রাজ্যের শাসক-বিরোধী প্রায় সব আন্দোলনেই এখন প্রথম সারিতে রয়েছেন রাহুল সিংহরা। এমনকী, শনিবার কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চের পাশেও দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। টুম্পা কয়াল ও মৌসুমী কয়াল এ দিন বিজেপির দফতরেও যান।

বিজেপি এ ভাবে প্রধান বিরোধী দলের পরিসর দখলের পথে এগোনোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর অবস্থান বদলেছেন। এত দিন বামেরা তাঁর কাছে ব্রাত্য ছিলেন। এ বার তাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের কোনও কোনও নেতাও বলছেন, বহু জায়গায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি দলীয় নেতৃত্বের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

যে ইলামবাজারে খুন হলেন বিজেপি সমর্থক রহিম শেখ (৫২), সেখানেও ভোট বেড়েছে বিজেপির। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত ভোটে একটি জেলা পরিষদের আসন ছাড়া গোটা ইলামবাজার ব্লকের সব ক’টি আসনেই তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে। লোকসভা ভোটের ফলে দেখা যায়, বিজেপি ওই ব্লকে ২০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছে। ভোট মিটতেই এলাকার বহু সিপিএমের কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দিতে শুরু করেন। নিহতের পরিজনেরা জানিয়েছেন, দিন কুড়ি আগেই রহিম শেখ-সহ কানুর গ্রামের ২০-৩০টি পরিবার বিজেপিতে যোগ দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে ট্রাকে চেপে এসে ৩০-৪০ জন দুষ্কৃতী রহিমদের গ্রামে ঢুকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়ি ভাঙচুর, লুঠ এবং ব্যাপক বোমাবাজি চলে। বাড়ির দাওয়ায় বসে তখন ভাত খাচ্ছিলেন রহিম। নিহতের স্ত্রী হাজরা বিবির অভিযোগ, ১০-১২ জন দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্বামীকে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে বাইরে তুলে নিয়ে চলে যায়। তার পরে কুপিয়ে খুন করে।

লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য এ দিনই কলকাতায় বিজেপি-র রাজ্য কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। সেই বৈঠকের মধ্যেই এই খবর এসে পৌঁছয়। তার পরই রাহুলবাবু অভিযোগ করেন, নরেন্দ্র মোদীকে বদনাম করতে পরিকল্পনা করেই অশান্তি শুরু করেছে তৃণমূল। বৈঠকে হাজির ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। পরে তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুরা যে ভাবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে, তাতে ভয় পেয়েছেন মমতা।” তাঁর বক্তব্য, “মমতার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিতে সংখ্যালঘুরা বীতশ্রদ্ধ। মোদীজি কেন্দ্রে সরকার গড়ার পরে সুশাসনের অর্থটাই তো বদলে গিয়েছে।” অন্য দিকে রাহুলবাবুর দাবি, গোয়েন্দা পুলিশ, রাজ্য প্রশাসন, এমনকী তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের কাছ থেকে তাঁরা খবর পেয়েছেন, রাজ্যে আশান্তির পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনা করেছে শাসক দল। তিনি জানান, এ দিন বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া এবং হুগলি জেলার নেতারা এই সংক্রান্ত তথ্য দেন রাজ্য নেতৃত্বকে। রাহুলবাবুর অভিযোগ, “উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি থেকে শুরু করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, এমনকী হাওড়া ও কলকাতাতেও বিজেপি কর্মীদের উপরে শাসক দলের হামলা চলেছে। আসলে, তৃণমূল হিংসা দিয়ে রাজ্যকে হাতে রাখতে চায়।”

তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগকে অবশ্য গুরুত্ব দেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জানান, রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করতে বিজেপি যে বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি তৈরির পরিকল্পনা করতে পারে, তা নিয়ে বাংলার মানুষকে সজাগ এবং সতর্ক থাকার কথা প্রথম থেকেই বলছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রতবাবুর কথায়, “নির্বাচনী প্রচারে জেলায় জেলায় ঘোরার সময়েই আমাদের নেত্রী মানুষকে সতর্ক করেছেন।” এ দিন বিজেপি-র অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বাংলার সংস্কৃতি হল শান্তি ও সংহতি বজায় রাখা। যে যতই অশান্তি তৈরির চেষ্টা করুক, সফল হবে না।” ইলামবাজারের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “এটা একেবারেই গ্রাম্য বিবাদের জেরে খুন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তবে যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক।” বীরভূমের এসপি অলোক রাজোরিয়াও জানান, “প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, একটি গ্রাম্য বিবাদকে ঘিরেই এই খুন। তবে, ঘটনার সঙ্গে অন্য কিছু যুক্ত আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” ঘটনায় পুলিশ চার জনকে আটক করেছে। ঘটনায় জখম হয়ে এক তৃণমূল কর্মী হাসপাতালে ভর্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bjp kolkata ilambazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE