Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বাম-বিজেপিকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী

ভদ্রেশ্বরে ও রায়দিঘিতে দুই ঘটনার পরেই সিপিএম-বিজেপি’কে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় এসে সোমবার সেই বক্তব্যই নথিভুক্ত করালেন তিনি। সেই সঙ্গেই রীতিমতো সরকারি নিন্দা প্রস্তাব এনে বাম-বিজেপি যোগসাজশে চক্রান্তের কথা বলা হল! তদন্ত শেষের আগে কী ভাবে দুই ঘটনায় বিধানসভায় প্রস্তাব এনে দু’টি রাজনৈতিক দলকে কাঠগড়ায় তুলে নিন্দা করা হল, তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিএম এবং বিজেপি। বাম বিধায়কেরা বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিজেপি-র বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব নেই। তারা সরব হয়েছে বাইরেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০৩:৩১
Share: Save:

ভদ্রেশ্বরে ও রায়দিঘিতে দুই ঘটনার পরেই সিপিএম-বিজেপি’কে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় এসে সোমবার সেই বক্তব্যই নথিভুক্ত করালেন তিনি। সেই সঙ্গেই রীতিমতো সরকারি নিন্দা প্রস্তাব এনে বাম-বিজেপি যোগসাজশে চক্রান্তের কথা বলা হল! তদন্ত শেষের আগে কী ভাবে দুই ঘটনায় বিধানসভায় প্রস্তাব এনে দু’টি রাজনৈতিক দলকে কাঠগড়ায় তুলে নিন্দা করা হল, তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিএম এবং বিজেপি। বাম বিধায়কেরা বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিজেপি-র বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব নেই। তারা সরব হয়েছে বাইরেই। আর ঘটনায় ‘অভিযুক্ত’ না হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবের প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস।

ভদ্রেশ্বরে নর্থ ব্রুক জুট মিলের সিইও হরিকিষান মহেশ্বরীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনা চেয়ে এ দিন বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েছিল কংগ্রেস। সেই প্রস্তাব গৃহীত না হলেও দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যৌথ প্রস্তাবনায় ৩১৯ ধারায় নিন্দা প্রস্তাব এনে ভদ্রেশ্বর ও রায়দিঘির ঘটনার নিন্দা করা হয়। দু’টি ঘটনাতেই সিপিএম-বিজেপি’র মদত ও চক্রান্ত রয়েছে বলে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বা সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়েরা সরাসরি বাম শিবিরের দিকে আঙুল তুলেছেন। বামেরা প্রতিবাদে ওয়াক আউট করায় তৃণমূল বেঞ্চ থেকে আবার কটাক্ষ করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক শক্তির সমর্থনে তাঁরা কক্ষত্যাগ করলেন!

বামেরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে বিধানসভায় ঢুকে মুখ্যমন্ত্রীও দুই ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে বাম-বিজেপি’কেই দোষারোপ করেন। লিখিত বিবৃতি পাঠ করার পাশাপাশিই তিনি জানান, এ রাজ্যে অশান্তি বাধানোর চক্রান্ত বরদাস্ত করা হবে না। ভদ্রেশ্বরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী সরাসরিই শ্রমিক সংগঠন সিটু এবং বিএমএসের কথা বললেও রায়দিঘির ক্ষেত্রে নাম করেননি কোনও দলের। তবে ইঙ্গিতে দু’দলের যোগসাজশের কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভদ্রেশ্বরের ঘটনায় ধৃত ৬ জনের মধ্যে সিপিএম ও সিপিআইয়ের এক জন করে, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং বিএমএসের দু’জন করে রয়েছেন!

ওয়াক আউট করার আগে বিধানসভার ভিতরে এবং পরে বাইরে সরকারের এই মনোভাবের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর অভিযোগ, নিন্দা-প্রস্তাব পেশ করার কোনও নিয়মনীতিই মানা হয়নি। তার উপরে কোনও তদন্ত না-করেই তাঁদের নামে দোষ চাপানো হচ্ছে! সূর্যবাবুর কথায়, “যেখানে যা হচ্ছে, সিপিএমের নামে দোষ চাপানো হচ্ছে! রায়দিঘিতে তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে গণ্ডগোল হয়েছে। দোষ চাপানো হচ্ছে সিপিএমের উপরে।” একই সুরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহেরও বক্তব্য, “তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি-র উপরে চাপাচ্ছেন। বিজেপি হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তা ছাড়া, তৃণমূলের দলীয় বক্তব্য যে ভাবে বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব এনে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা-ও অত্যন্ত নিন্দনীয়!” কংগ্রেসের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী দাবি করেছেন, ভদ্রেশ্বরের ঘটনার সিবিআই এবং রায়দিঘির বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক কর্মরত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে। পাশাপাশিই, সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি দেবাশিস দত্ত বলেছেন, “ভদ্রেশ্বরের ঘটনা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু ওখানে শ্রমিকদের কিছু ক্ষোভ ছিল, এটাও অস্বীকার করা যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE