Advertisement
E-Paper

বাস-বৈঠকের আগে অভিযোগ বৈষম্যের

ভাড়াবৃদ্ধির প্রশ্নে আজ, সোমবার বেসরকারি বাস-মিনিবাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালিকেরা জানিয়েছেন, প্রতি ধাপে অন্তত দু’টাকা ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলবেন তাঁরা। যদিও তা কতটা মানা হবে, তাতে সন্দেহ রয়েছে। পরিবহণ দফতর সূত্রের ইঙ্গিত, মুখ্যমন্ত্রী এখনও বাসভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহী নন।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩০

ভাড়াবৃদ্ধির প্রশ্নে আজ, সোমবার বেসরকারি বাস-মিনিবাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালিকেরা জানিয়েছেন, প্রতি ধাপে অন্তত দু’টাকা ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলবেন তাঁরা। যদিও তা কতটা মানা হবে, তাতে সন্দেহ রয়েছে। পরিবহণ দফতর সূত্রের ইঙ্গিত, মুখ্যমন্ত্রী এখনও বাসভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহী নন। তবে শেষমেশ নিমরাজি হয়ে স্টেজপিছু এক টাকা বাড়ালেও বাড়াতে পারেন।

মালিকেরা অবশ্য এখনই হাল ছাড়ছেন না। বরং আজকের বৈঠকের দিকে যথেষ্ট আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন তাঁরা। এবং আলোচনার প্রাক্কালে সরকারের উদ্দেশে কিছু প্রশ্ন ও অভিযোগের তিরও ছুড়েছেন। ওঁদের বক্তব্য: আমজনতার ঘাড়ে বাড়তি বোঝা চাপবে এই যুক্তি দিয়ে প্রশাসন বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়াচ্ছে না। অথচ তারাই চার-পাঁচ গুণ ভাড়া দিয়ে মানুষকে সরকারি বাতানুকূল বাসে চাপতে বাধ্য করছে! “যোগ্য পরিষেবা পেলে যাত্রীদের যে বাড়তি ভাড়া গুণতে আপত্তি নেই, এটাই তার প্রমাণ। তা হলে বেসরকারি বাসের ভাড়া না-বাড়িয়ে পরিবহণশিল্পকে শুকিয়ে মারার কারণ কী?”, প্রশ্ন মালিকমহলের অনেকের।

পরিবহণ দফতরের একাংশ কিন্তু অভিযোগটা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না। বরং মেনে নিচ্ছে যে, অর্থনীতির সহজ নিয়ম লঙ্ঘনের পরিণামেই সরকারি পরিবহণ নিগমেরও বেহাল দশা। ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় তো বাড়েইনি, উল্টে অতিরিক্ত কর্মীর বোঝায় নিগমগুলো দিন দিন ন্যূব্জ হয়ে পড়েছে। ভর্তুকির খুঁটি ছাড়া চলার ক্ষমতা নেই। অথচ ভাড়া বাড়ানোর পথ নেইা। পরিত্রাণের লক্ষ্যে তাই ঘুরপথের আশ্রয় নিয়েছে দফতর। গত দু’মাসে সিএসটিসি ঢালাও এসি বাস রাস্তায় নামিয়েছে। ফল মিলেছে হাতেনাতে, মাসে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা আয় বেড়েছে।

দফতরের তথ্য বলছে, গত ক’মাসে জেএনএনইউআরএমের আওতায় হরেক রুটে সিএসটিসি’র প্রায় ৯০টি নতুন বাস চালু হয়েছে, যার ৬৩টিই বাতানুকূল। তাতে যাত্রীরও কমতি নেই। উপরন্তু বিভিন্ন এসি বাসে ভাড়ার কাঠামো আলাদা রাখা হয়েছে। যেমন, এসি-ভলভোয় ভাড়া বেশি। ন্যূনতম ১৫ টাকা। পরের ধাপে ২৫। পরবর্তী ধাপে-ধাপে বাড়তি পাঁচ টাকা করে। অন্য দিকে অশোক লেল্যান্ড বা মার্কোপোলো’র এসি বাসে ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা। পরবর্তী প্রতি ধাপে ভাড়া বাড়ছে পাঁচ টাকা করে।

আর এই ভাবে সিএসটিসি’র মতো নুইয়ে পড়া নিগমের দেহে অনেকটা রক্তসঞ্চার করা গিয়েছে বলে পরিবহণ-সূত্রের দাবি। বস্তুত উদ্যোগটির মধ্যে ‘মাদার ডেয়ারি’ মডেলের ছায়াও দেখছেন অনেকে। লোকসানে পঙ্গু দুধ-সংস্থাটিকে চাঙ্গা করতে কর্তৃপক্ষ বিপণনের অভিনব কৌশল নিয়েছিলেন। কম দামের দুধের উৎপাদন কমিয়ে নতুন ব্র্যান্ডের দামি দুধ বাজারে ছাড়া হয়েছিল। তাতে খুলে গিয়েছিল বাড়তি আয়ের উৎস।

মোদ্দা কথায়, পরিষেবার মান অনুযায়ী যোগ্য দাম। প্রশাসন ও ব্যবসায়ী মহলের বড় অংশ জানাচ্ছেন, অর্থনীতির বুনিয়াদি এই তত্ত্বটি অনুসরণ না-করলে কোনও পরিষেবাই পায়ের তলায় মাটি পাবে না তা সে সরকারি হোক, বা বেসরকারি। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বা বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের দীপক সরকারের কথাতেও এর প্রতিধ্বনি। ওঁদের প্রশ্ন, “এসি বাস থাকুক না! আপত্তি কীসের? কিন্তু ৯০% যাত্রী যাতায়াত করেন সাধারণ বাসেই, ভাড়া না-বাড়ায় যা কিনা উঠে যাওয়ার জোগাড়। সরকারের সে দিকে খেয়াল নেই কেন?” ওঁদের অভিযোগ, নীতির দোহাই দিয়ে সরকার ভাড়া বাড়াচ্ছে না, এ দিকে ঘুরপথে মানুষকে বাড়তি ভাড়া গুনতে বাধ্য করা হচ্ছে! “অফিস টাইমে এখন ঢালাও এসি বাস। অনেকে উপায় না দেখেও তাতে চড়ছেন। ভাড়া ঠিকঠাক হলে আমাদের বাস যথেষ্ট থাকত। ওঁদের খরচ কম হতো।” দাবি মালিক সংগঠনের নেতাদের।

পরিবহণ-কর্তারা অবশ্য প্রকাশ্যে এটা মানতে নারাজ। এক কর্তার যুক্তি, “সাধারণ বাসের তুলনায় এসি বাস বেশি চালানো হচ্ছে না। প্রথম ধাপে এসি বাস বেশি এসেছে। কিন্তু সরকার নিজে এবং জেএনএনইউআরএম মিলিয়ে যে হাজারখানেক বাস কেনার পরিকল্পনা করেছে, তার সাকুল্যে ২৫% এসি।” আর এসি বাসের ‘ভাড়া-বৈষম্য’ প্রসঙ্গে সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, “একটা ভলভো বাসের দাম ৯৯ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা। সেখানে মার্কোপোলো বা অশোক লেল্যান্ডের দাম প্রায় ৫৫ লক্ষ। ভলভো-য় জ্বালানি খরচ বেশি, স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। তাই ভাড়াও বেশি।” যা শুনে মালিকদের পাল্টা প্রশ্ন, “আমাদের জেএনএনইউআরএমের বাসেও যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য তুলনায় বেশি। তাতে খরচও বেশি। আমরা ওগুলোর ভাড়া বাড়াতে চাইলেও সরকার রাজি হয়নি কেন?”

তপনবাবু জানিয়েছেন, জেএমএমইউআরএমের ঋণ শুধতে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। “সরকারি এসি বাসের মতো ওর ভাড়া যাতে এ বার সাধারণের চেয়ে বেশি হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে সে আর্জিও জানাব।” বলেছেন তিনি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “স্বাচ্ছ্বন্দ্য পেলে বেশি ভাড়া দিতে যে যাত্রীদের আপত্তি নেই, ভলভো-র ভিড়ই তা দেখিয়ে দিচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, রাজ্যে বাসের ভাড়া শেষ বেড়েছিল ২০১২-র অক্টোবরে, যখন ডিজেল ছিল ৫০ টাকা ৭৮ পয়সা লিটার। এখন ডিজেল ৬৩ টাকা ২২ পয়সা। এ দিকে বাসের ভাড়া একই রয়ে গিয়েছে। পরিণামে বিভিন্ন রুটে বাস কমছে। লোকসান সয়ে বাস চালানোর চেয়ে বসিয়ে রাখাই শ্রেয় মনে করছেন মালিকেরা। নিট ফল, আমযাত্রীর ভোগান্তি। রাস্তায় বেরিয়ে বাস না-পেয়ে বহু নিত্যযাত্রীকে রিকশা-অটো-ট্যাক্সি-মেট্রো ইত্যাদিতে যাত্রাপথ ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। পকেট থেকে খসছে বেশি। হিসেব কষে অনেকে দেখেছেন, মালিকদের দাবিমতো বাসে উঠে বাড়তি ভাড়া গুণতে হলেও খরচ তুলনায় কম হতো, ঝক্কিও এত পোহাতে হতো না।

বাস-মালিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, সরকার ভাড়াবৃদ্ধির বাস্তবতা যাচাইয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক কমিটি বানিয়েছে। প্রতি কমিটি ভাড়াবৃদ্ধির বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। এ বার মুখ্যমন্ত্রীও তা মেনে নেবেন বলে এই মহূর্তে ওঁরা আশাবাদী।

রাজ্য প্রশাসনের সূত্রে অবশ্য অতটা আশাবাদের খবর নেই। “মুখ্যমন্ত্রী কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা একমাত্র তিনিই বলতে পারেন। তবে এখনও ভাড়া বাড়ানোর কোনও ইঙ্গিত তাঁর কাছ থেকে মেলেনি।” রবিবার রাতে জানিয়েছেন সরকারের এক শীর্ষ কর্তা।

atri mitra bus problem mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy