বীরভূম জেলার যে দুই অঞ্চলে তৃণমূলের রাশ আলগা হচ্ছে এবং বিজেপি ক্রমশ নিজেদের সংগঠন বাড়িয়ে তুলছে, সেই পাড়ুই ও ইলামবাজার থানার ওসি-কে একই দিনে বদলি করে দেওয়া হল।
দায়িত্ব নেওয়ার ২৯ দিনের মধ্যেই বদলি করা হয়েছে পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্তকে। যিনি সম্প্রতি চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিলেন। তাঁর জায়গায় আসছেন বোলপুর থানার সেকেন্ড অফিসার অমরজিৎ বিশ্বাস। সোমবারই ইলামবাজার থানার ওসি তরুণ চট্টরাজকে বদলি করে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে সাঁইথিয়া থানার ওসি মহম্মদ আলিকে। তরুণবাবুকে আপাতত দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। অমরজিৎবাবু এবং মহম্মদ আলিএই দু’জনই শাসক দলের (আরও নির্দিষ্ট করে বললে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের) খুবই ‘কাছের লোক’।
তৃণমূলের কাজকর্মের জেরে বীরভূম জেলায় পুলিশের নিচু তলাতেও ক্ষোভ বাড়ছে বলে রিপোর্ট পেয়েছে রাজ্য প্রশাসন। তার পরে অনুব্রতকে নবান্নে ডেকে পাঠিয়ে মৃদু ভর্ৎসনাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ওসি বদলির ঘটনার জেরে বিরোধীরা ফের বলছে, বীরভূমে এখনও পুলিশকে চালনা করছেন অনুব্রত ওরফে কেষ্টই! ঘটনাচক্রে, এ দিনই মাখড়া ও চৌমণ্ডলপুর গ্রামে গিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অভিযোগ করেছেন “পুলিশের একাংশ তৃণমূলের কথায় পরিচালিত হচ্ছে। দলদাসের ভূমিকা পালন করছে পুলিশ!”
ইলামবাজার ও পাড়ুইয়ে লোকসভা ভোটের পর থেকেই শাসক দলের সংগঠন আলগা হতে শুরু করেছে। একাধিক সংখ্যালঘু-প্রভাবিত গ্রামে বিজেপি-র উত্থান তৃণমূলের জেলা তো বটেই, এমনকী শীর্ষ নেতৃত্বেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাড়ুইয়ের এক সময়ের অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা সদাই শেখও নাম লিখিয়েছেন বিজেপি-তে। ওই দুই অঞ্চলের একাধিক বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীও চলে গিয়েছেন বিজেপি-তে। এ হেন দু’টি থানায় নিজের ‘ঘনিষ্ঠ’ দুই ওসি-কে এনে তাদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর চেষ্টা করছেন অনুব্রত এমনই অভিযোগ জেলার বিজেপি সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের। তিনি এ দিন বলেন, “ওসি বদলের পিছনের রহস্যটা দিনের অলোর মতোই স্পষ্ট! পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর ছক কষছে তৃণমূল!” যদিও তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, “সব ব্যাপারে বিজেপি-র জুজু দেখানো সংবাদমাধ্যমের একাংশের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে! ওসি বদল নেহাতই রুটিন প্রশাসনিক পদক্ষেপ।”
অনুব্রতকে ফোন করা হলে, তাঁর এক অনুগামী এ দিন বলেন, “দাদা শুয়ে পড়েছেন!” ফোন ধরেননি জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও। এসএমএসের জবাবও মেলেনি। বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “যে কাউকে যে কোনও জায়গায় বদলি করা যায়। এটা রুটিন বদলি।”
একান্ত আলোচনায় জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলন, “পাড়ুই আর ইলামবাজারে এখন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে ওই দুই ওসি-কে দিয়ে কাজ হতো না। তাই দুই অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারকে ওই দুই থানার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy