প্রতি বছরই বর্ষার সময় ডিভিসি-র জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়া নিয়ে প্রশাসনিক মহলে নানা ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়। গত বছরেও ভারী বর্ষার দরুন রাজ্যে বন্যা-পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ডিভিসি-কর্তৃপক্ষের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিল রাজ্য সরকার। ডিভিসি জল ছাড়ার ফলেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বার তাই আগে থেকেই বর্ষার মোকাবিলায় মাঠে নেমে পড়ল রাজ্য সরকার। ডিভিসি-সহ আবহাওয়া দফতর এবং কেন্দ্রীয় জল কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে স্থির হয়েছে, খুব শীঘ্রই সেচ দফতরের সচিব পর্যায়ের একটি দল ঝাড়খণ্ডে গিয়ে সেখানকার শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বর্ষার সময় তেনুঘাট এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া নিয়ে আলোচনা করবে।
বৈঠকের পরে রাজীববাবু বলেন, “আমরা বর্ষার আগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছি। সমন্বয় থাকলে যে-কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়।” তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ডিভিসি-কে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিয়মিত আলোচনা করে জল ছাড়তে হবে। নিজেদের মতো করে জল ছাড়া চলবে না। আগাম জানা থাকলে সরকারও বন্যার মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখতে পারবে।
উত্তরবঙ্গ ভাঙন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে মাস্টার প্ল্যানের দাবিতে রাজীববাবু ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নেতৃত্বে সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা জুলাইয়েই দিল্লি যাচ্ছেন বলে এ দিন মাদারিহাটে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ১১ সদস্যের দল যাবে। তাতে বামেদের তরফে দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ, কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ও থাকতে রাজি হয়েছেন। উদয়নবাবু বলেন, “রাজ্যের স্বার্থে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জন্য দিল্লির দরবার করব না কেন? এখানে দল দেখার কোনও প্রশ্ন নেই।” আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদবাবু জানান, নদী-ভাঙনের সমস্যা মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।
ভারী বৃষ্টি ও বন্যার মোকাবিলায় রাজ্যের প্রস্তুতি কেমন?
সেচ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে ৬০টি বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের মধ্যে মাত্র ৩১টি ঠিকঠাক কাজ করছে। এ দিনের বৈঠকে বাকি ২৯টি যন্ত্র সারাতে বলা হয়েছে আবহাওয়া দফতরকে। উত্তরবঙ্গে আবহাওয়ার যথাযথ পূর্বাভাস পেতে মালদহে একটি ‘ডপলার স্টেশন’ খোলা হবে। সেচ দফতর তার জন্য আবহাওয়া দফতরকে এক একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজীববাবু বলেন, “বর্ষার পরিস্থিতি জানতে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে এবং কলকাতায় চলতি মাসেই ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খুলতে চলেছে রাজ্য সরকার।”