Advertisement
E-Paper

বহিষ্কার সত্ত্বেও দাপট অলোকের, ক্ষোভ দলেই

দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু তাতে কোনও হেলদোল নেই জামুড়িয়ার যুব তৃণমূল নেতা অলোক দাসের। উল্টে, তাঁর দাপটে দলের একাংশই কোণঠাসা। জামুড়িয়ায় শ্যাম গোষ্ঠীর কারখানায় দাদাগিরির অভিযোগে মাস তিনেক আগে অলোককে প্রথমে শো-কজ, পরে বহিষ্কার করে তৃণমূল।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪১
অলোক দাস। ফাইল চিত্র।

অলোক দাস। ফাইল চিত্র।

দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু তাতে কোনও হেলদোল নেই জামুড়িয়ার যুব তৃণমূল নেতা অলোক দাসের। উল্টে, তাঁর দাপটে দলের একাংশই কোণঠাসা।

জামুড়িয়ায় শ্যাম গোষ্ঠীর কারখানায় দাদাগিরির অভিযোগে মাস তিনেক আগে অলোককে প্রথমে শো-কজ, পরে বহিষ্কার করে তৃণমূল। কিন্তু, তার পরেও তিনি নিয়মিত ব্লক যুব কার্যালয়ে যাতায়াত করছেন। অনুগামীদের নিয়ে সেখানে বসে আলাপ-আলোচনা সারছেন। এরই মধ্যে আবার মিড-ডে মিলে নিজের লোক নিয়োগের দাবিতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে হুমকির অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

অলোকের কার্যকলাপে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে লোকসভা ভোটের আগে জামুড়িয়া ১ ব্লকে তৃণমূলের যুব কোর কমিটির চার সদস্যের মধ্যে তিন জন পদত্যাগ করেন। কমিটিতে থেকে যান শুধু অলোক। তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেওয়ার পরে তৃণমূলের জেলা যুব নেতা অশোক রুদ্র পদত্যাগ করা ওই তিন সদস্যকে ব্লক স্টিয়ারিং কমিটিতে নিয়ে আসেন। সেই সদস্যদের এক জন সত্যজিৎ অধিকারীর অভিযোগ, “রাজ্যে আমাদের দল ক্ষমতায় আসার কিছুদিন আগে কয়লার কারবার ছেড়ে অলোক তৃণমূলে যোগ দেন। দলের নেতা অভিজিৎ ঘটকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। তার পরেই তাঁর এত বাড়বাড়ন্ত।”

সত্যজিৎবাবুর দাবি, দল বহিষ্কার করার পরেও অলোকের কোনও পরিবর্তন নেই। নানা জায়গায় সেই একই রকম তোলাবাজি, দাদাগিরি চলছে। সত্যজিৎবাবু বলেন, “আমরা তিন জন কোর কমিটি থেকে পদত্যাগের সময় দলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা এক নেতা কী ভাবে তিন বছরের মধ্যে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে বাড়ি, বড় গাড়ি কিনে ফেলল, তা নিয়ে তদন্ত হোক। তা হলেই সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।” একই দাবি তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ ব্লক কৃষক সেলের সম্পাদক কাজল মাজিরও। অলোক যে গ্রামের বাসিন্দা, সেই তালতোড়েই থাকেন কাজলবাবু। তাঁর অভিযোগ, “অলোক সবাইকে বলে বেড়ান, পারিবারিক সম্পত্তি থেকে তাঁর এত রমরমা। তা যে ঠিক নয়, গ্রামের মানুষ ভাল ভাবেই জানেন।”

তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়ার মদনতোড় পঞ্চায়েতের প্রথম তৃণমূলের অনুপ মণ্ডল গত বছর জেলায় সেরার সম্মান পান। কিন্তু তিনি অলোকের কথা মতো কাজ করছিলেন না। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরেই অলোক ওই পঞ্চায়েতের চার সদস্যকে মদত দিয়ে অনুপবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করান। প্রধানের পদ থেকে অপসারিত হন অনুপবাবু। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, দলের উচ্চ নেতৃত্ব সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেননি।

সোমবার জামুড়িয়ার শ্রীপুর রানাহাট হাইস্কুলে ঢুকে আবার গোলমাল পাকানোর অভিযোগ ওঠে অলোকবাবুর বিরুদ্ধে। সেখানে মিড-ডে মিলের কাজে লোক নিয়োগের তালিকা তাঁর কথা মতো তৈরি করতে হবে বলে স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদককে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। শ্রীপুর ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেন ওই সম্পাদক মহম্মদ সাত্তার।

অলোকবাবু অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে নারাজ। বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও দলের অফিসে যান কেন? অলোকবাবুর জবাব, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় দল কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছিল। আমি তার উত্তর দিয়েছি। তার পরে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে না সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা জানি না। দলের অনুগত কর্মী হিসেবে আমি যুব কার্যালয়ে যাই।” তাঁর সম্পত্তি নিয়ে তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীর তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে অলোকবাবুর দাবি, “বারবার মিথ্যে অভিযোগ করে আমার বদনাম করার চেষ্টা চলছে।”

যাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে অলোকবাবু এই দৌরাত্ম্যের সাহস পাচ্ছেন বলে অভিযোগ, আসানসোলের সেই তৃণমূল নেতা অভিজিত ঘটকের বক্তব্য, “আমি দলের কোনও পদে নেই। ফলে, আমার নিজেরই কোনও ক্ষমতা নেই। এ ব্যাপারে যা বলার দল বলবে।”

তৃণমূলের বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “অলোককে আমরা বহিষ্কার করেছি। দলে ফিরতে চাইলে তাঁর সংযত থাকা উচিত। তবে কাউকে বহিষ্কার করা হলে তিনি দলীয় কার্যালয়ে বসতে পারবেন না, এমন নিদের্শ দল দেয়নি। তবে দলের কোনও কর্মকাণ্ডে তিনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।” তিনি জানান, মদনতোড় পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে যে চার সদস্য অনাস্থা এনেছিলেন, তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তা না মানায় তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

jamuria tmc leader suspended aloke das shyam sel jamuria nilotpal roychowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy