Advertisement
E-Paper

ভ্যানোর লাইসেন্স, নির্দেশ ঘিরে সংশয়

ইঞ্জিন লাগানো ভ্যানরিকশা ওরফে ভ্যানোকে বৈধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশ এতটাই অস্বচ্ছ যে তাতে জটিলতা বাড়া ছাড়া কিছু হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুর প্রায় কোনও মাপকাঠি ছাড়াই লাইসেন্স দিতে শুরু করেছে। কিন্তু লাইসেন্স দেওয়ার শর্ত স্পষ্ট না হওয়ায় বর্ধমান হাত গুটিয়ে বসে। হাওড়া থেকে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে পাল্টা প্রশ্নাবলি পাঠানো হয়েছে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:২২

ইঞ্জিন লাগানো ভ্যানরিকশা ওরফে ভ্যানোকে বৈধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশ এতটাই অস্বচ্ছ যে তাতে জটিলতা বাড়া ছাড়া কিছু হয়নি।

পূর্ব মেদিনীপুর প্রায় কোনও মাপকাঠি ছাড়াই লাইসেন্স দিতে শুরু করেছে। কিন্তু লাইসেন্স দেওয়ার শর্ত স্পষ্ট না হওয়ায় বর্ধমান হাত গুটিয়ে বসে। হাওড়া থেকে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে পাল্টা প্রশ্নাবলি পাঠানো হয়েছে। বলতে গেলে, রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই এই ধন্দ। এর মধ্যে লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আশু সমাধানও নেই।

রাজ্যের যে সব গ্রামীণ এলাকায়য় যথেষ্ট বাস-ট্রেকার-অটো নেই, বহু ক্ষেত্রে ভ্যানো যাতায়াত বা ছোটখাটো পণ্য পরিবহণের জন্য মানুষের ভরসা। ভ্যানরিকশার সঙ্গে পাম্পসেটের ইঞ্জিন জুড়ে তৈরি এই ‘দিশি’ তিনচাকাকে কোথাও বলে ‘টুকটুক’, কোথাও ‘লছিমন’, কোথাও ‘লাদেন’ তো কোথাও ‘ডিস্কো গাড়ি’। দীর্ঘ দিন ধরে লাইসেন্স বা রুট পারমিট ছাড়াই সেগুলি চলছে। মালিক ও চালকেরা ভ্যানোকে বৈধ করার দাবি তুলে আসছেন, তা-ও অনেক দিন হল। ভ্যানোর আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, আইনি স্বীকৃতি না থাকায় পুলিশ বা তোলাবাজেরা ভ্যানো চালকদের উপরে অত্যাচার চালায়। নানা সময়ে মামলাও করা হয়। অটো বা ছোট গাড়ির চালকেরাও বাধা দেয়।

শেষমেশ মাস দুয়েক আগে ভ্যানোকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর প্রতিটি জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে ভ্যানোকে লাইসেন্স দেওয়া যাবে। যদি কোনও ভ্যানো বিশেষ একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঘোরাফেরা করে, তাকে লাইসেন্স দেবে সেই পঞ্চায়েত। একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় চলাচল করলে তাকে লাইসেন্স দেবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতি। একাধিক পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় চললে লাইসেন্স দেবে জেলা পরিষদ। প্রতি ক্ষেত্রেই ‘লাইসেন্স’ ফি হিসেবে ভ্যানো মালিককে বছরে ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে।

কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছু ধন্দ। যেমন ১) কী কী শর্ত পালন করলে ভ্যানো চালককে লাইসেন্স দেওয়া হবে, নির্দেশিকায় তার কোনও উল্লেখ নেই। ২) লাইসেন্স পাওয়ার পরে ভ্যানোগুলিকে কী সুবিধা দেওয়া হবে, সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। ৩) ভ্যানোয় যে সব ইঞ্জিন লাগানো হয়, সেগুলি কোথা থেকে কেনা হয়, তা কতটা দূষণ ছড়াতে পারে, সে সব কী ভাবে খতিয়ে দেখা হবে তা নিয়ে নির্দেশিকা নীরব। ৪) ভ্যানো দুর্ঘটনায় যাত্রীরা হতাহত হলে বিমার সুবিধা পাবেন কি না, তা-ও বলা হয়নি।

পূর্ব মেদিনীপুর অবশ্য এত প্রশ্নের জটিলতায় যায়নি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল বলেন, “রেশন কার্ড ও ভোটার পরিচয়পত্র থাকলেই ৫০০ টাকার বিনিময়ে আমরা লাইসেন্স দিচ্ছি। অন্য কোনও মাপকাঠি নেই।” কিন্তু বেশির ভাগ জেলাই এত সহজে লাইসেন্স দিতে চাইছে না। বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “কীসের ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়া হবে, তা জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে বলা হয়েছিল, পরে আর একটি নির্দেশিকায় সে সব জানানো হবে। তা না আসায় এ ব্যাপারে আমরা কোনও পদক্ষেপ করিনি।”

হাওড়া জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্যও বলেন, “পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্দেশ মেনে আমরা ভ্যানোগুলিকে লাইসেন্স দিতে রাজি আছি। এতে পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরেই আয় বাড়বে। কিন্তু তার আগে সব অস্পষ্টতা দূর করা দরকার। সেই কারণেই আমরা প্রশ্নগুলির উত্তর চেয়ে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে চিঠি দিয়েছি।’’

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, পরিবহণ দফতর তাদের ভ্যানোকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছিল। কিন্তু বিভিন্ন জেলা থেকে একই প্রশ্ন এসেছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সামনে ভোট। এখন আর কিছু করা যাবে না। তবে লোকসভা নির্বাচন মিটে গেলেই রাজ্য পরিবহণ দফতরে সমস্যাগুলি জানিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

(সহ প্রতিবেদন: সুব্রত গুহ, কেদারনাথ ভট্টাচার্য)

subrata guha kedarnath bhattacharya nurul absar vano licence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy