Advertisement
E-Paper

ভুলিয়ে থানায় নিয়ে গেল, মুখ খুললে ফাঁসিয়ে দেবে

কেস ডায়েরিতে তথ্যপ্রমাণের অভাবেই আদালতে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। আলিপুর হামলার অভিযুক্তরা বেরিয়ে এসে দাবি করলেন, পুলিশ তাঁদের ভুলিয়েভালিয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, সংবাদমাধ্যমে এ সব কথা বললে ফের ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। শাকিল, পাপ্পু, রেজ্জাক, সৌমেন এবং ছোটু আলিপুর থানায় হামলা চালানোর ঘটনায় এই পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
পুলিশ লক-আপ থেকে বেরোচ্ছেন মহম্মদ শাকিল (ডান দিকে) এবং অন্যরা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পুলিশ লক-আপ থেকে বেরোচ্ছেন মহম্মদ শাকিল (ডান দিকে) এবং অন্যরা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

কেস ডায়েরিতে তথ্যপ্রমাণের অভাবেই আদালতে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। আলিপুর হামলার অভিযুক্তরা বেরিয়ে এসে দাবি করলেন, পুলিশ তাঁদের ভুলিয়েভালিয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, সংবাদমাধ্যমে এ সব কথা বললে ফের ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁদের।

শাকিল, পাপ্পু, রেজ্জাক, সৌমেন এবং ছোটু আলিপুর থানায় হামলা চালানোর ঘটনায় এই পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পাঁচ জনেই জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধেয় আলিপুর আদালত চত্বরে পুলিশ লকআপের সামনে দাঁড়িয়ে মহম্মদ শাকিল অভিযোগ করলেন, “থানায় ভাঙচুর করা তো দূর, ওখানে যে কিছু হয়েছে, তা-ই জানতাম না। টিভি দেখার সময় কোথায়! কোর্টে উকিলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। পুলিশ ভুলিয়েভালিয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিল।”

পেশায় ঠিকাশ্রমিক শাকিল-পাপ্পু দু’জনেই দাবি করলেন, ১৪ নভেম্বর দুপুরে সিডি কিনতে খিদিরপুরের ফ্যান্সি মার্কেটে গিয়েছিলেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন মহম্মদ রেজ্জাকও। এর পরে সন্ধে ৬টা নাগাদ তাঁরা নিজস্ব প্রয়োজনে আলিপুর আদালতে এক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে যান। শাকিলের কথায়, “হঠাৎ কয়েক জন পুলিশ অফিসার এসে আমাদের থানায় যেতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে কিছুতেই বললেন না। গাড়িতে চাপিয়ে আলিপুর থানায় নিয়ে গিয়ে আমাদের ঠায় বসিয়ে রাখা হল। আরও দু’জনকেও সেখানে আনা হয়েছিল।” শাকিলের বক্তব্য, খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে বলে থানার অফিসাররা আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সারা রাত আটকে রেখে পরের দিন আদালত থেকে তাঁদের জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সৌমেন আর ছোটুকে কোথা থেকে ধরা হয়েছিল, সেটা অবশ্য জানা যায়নি। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেই দ্রুত বেরিয়ে যান ওঁরা। রেজ্জাকও মুখ খোলেননি। অ্যারেস্ট মেমোয় স্পষ্ট করে কারওরই ঠিকানাও লেখা ছিল না। সকলেরই গ্রেফতারের জায়গা হিসেবে দেখানো হয়েছিল আলিপুরের ওই কলোনি সংলগ্ন রাস্তা। এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে চায়নি পুলিশও। শুক্রবার রাতে গ্রেফতারের খবর পেয়ে আলিপুর থানায় হাজির হয়েছিল শাকিল-রেজ্জাকদের পরিবার। তাঁদের দাবি, পুলিশ জানিয়েছিল, শাকিলরা বড় ঝামেলায় ফেঁসেছে। কিন্তু কী ঝামেলা, কেনই বা ওরা তাতে ফাঁসল পুলিশ তা বলেনি। পাপ্পুর অভিযোগ, “থানায় আমাদের হুমকি দেওয়া হয়, মিডিয়ার সামনে মুখ খুললে ভুলভাল মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।”

আলিপুর থানায় হামলার অভিযোগে এই পাঁচ যুবকের গ্রেফতারের পরেই নানা প্রশ্ন তুলেছিল সংবাদমাধ্যম। কারণ, হামলাকারীরা বিধানচন্দ্র রায় কলোনির বাসিন্দাদের একাংশ বলে জানা গিয়েছিল। এলাকায় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ নেতা প্রতাপ সাহা তাদের মদত দিয়েছেন বলেও অভিযোগ ছিল। অথচ যে পাঁচ জনকে ধরা হল, ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের বাড়ি অনেক দূরে। শাকিল-পাপ্পু-রেজ্জাক তিন জনেই মেটিয়াবুরুজ-রাজাবাগানের বাসিন্দা। সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় মথুরাপুরের এবং ছোটু সাউ ভবানীপুর এলাকার লোক বলে জানা গিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে অবশ্য গোড়া থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল, পুরমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নেতার অনুগামীদের গ্রেফতার করার সাহস পুলিশ দেখাতে পারবে না। তাই তড়িঘড়ি মুখরক্ষার জন্য ওই পাঁচ যুবককে ধরে আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। আর ঠিক সেই কারণেই পুলিশের আশঙ্কা ছিল, এ দিন ধৃতেরা জামিন পেয়ে বাইরে বেরলেই সংবাদমাধ্যম তাদের ঘিরে ধরবে। সেই কারণেই মিথ্যে মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের শাসানি দেওয়া হয় বলে অনেকেই মনে করছেন।

কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এ দিন সন্ধে ৬টা নাগাদ লকআপ থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে সংবাদমাধ্যমের ভিড়, ক্যামেরার ঝলকানি এড়িয়ে এক রকম পালিয়েই যান রেজ্জাক, সৌমেন, ছোটুরা। তবে শাকিল এবং পাপ্পু তা করেননি। শাকিল বরং আক্ষেপ করে বলেন, “কোনও দোষ করলাম না। অথচ আইন-আদালত করতে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেল।”

মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খোলার হুঁশিয়ারি নিয়ে কী বলছেন লালবাজারের কর্তারা?

কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মার মন্তব্য, “এ রকম কোনও অভিযোগ থাকলে ওঁরা আমার অফিসে এসে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাতে পারেন। সেই অভিযোগের তদন্ত হবে। যদি কোনও পুলিশ অফিসারের দোষ প্রমাণিত হয়, তা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই যাঁরা জেল খেটেছেন, তাঁরা আবার পুলিশেরই বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস কি দেখাতে পারবেন? পুলিশের অন্দরেই তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

pappu firhad hakim pratap saha bidhan chandra roy colony alipore police station mohammed shakil
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy