Advertisement
E-Paper

মোর্চার ইউনিয়নের বিরুদ্ধেই আন্দোলনের হুমকি

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে শতাব্দী প্রাচীন জঙ্গপানা চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাহাড় ও সমতলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিমল গুরুঙ্গরা। কার্শিয়াঙের জঙ্গপানা বাগানের শ্রমিকদের একটি বড় অংশও ইউনিয়নের নেতাদের কয়েকজনের ‘জঙ্গিপনায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রেজা প্রধান ও দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২২
কাজ বন্ধ জঙ্গপানা চা বাগানে। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

কাজ বন্ধ জঙ্গপানা চা বাগানে। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে শতাব্দী প্রাচীন জঙ্গপানা চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাহাড় ও সমতলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিমল গুরুঙ্গরা। কার্শিয়াঙের জঙ্গপানা বাগানের শ্রমিকদের একটি বড় অংশও ইউনিয়নের নেতাদের কয়েকজনের ‘জঙ্গিপনায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইউনিয়ন দ্রুত বাগান খোলাতে না পারলে শ্রমিকরা পাল্টা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। এই মুহূর্তে বাগানের কারখানায় ৩ হাজার কেজি চা পাতা পড়ে রয়েছে। বাগান বন্ধ থাকায় তা যাতে চুরি না হয়, সে জন্য শ্রমিকরা নিজেরাই পালা করে ২৪ ঘন্টা তা পাহারা দিচ্ছেন। ৪ অগস্ট, সোমবার কার্শিয়াঙের মহকুমা শাসকের দফতরে এই বাগান নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছে প্রশাসন।

ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে মোর্চার শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মালিকপক্ষকে আলোচনায় বসার ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ ইউনিয়ন নেতাদের কাজকর্মে এতটাই বিরক্ত যে, তাঁরা বৈঠকে রাজি হননি। তাই মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গের হস্তক্ষেপে আসরে নেমেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক পুনিত যাদব বলেন, “ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে শ্রমিক-মালিক দু’পক্ষকেই ডাকা হয়েছে। আশা করি শীঘ্র বাগান খুলবে।” মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিও জানান, তাঁরা শ্রমিক নেতাদের দ্রুত বাগান খোলানোর উপরে জোর দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, “জঙ্গপানা চা বাগান বন্ধ হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তবে বাগানে সংগঠনের তরফে কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।” তাঁর কথায়, একটি নিয়োগ নিয়ে আপত্তি করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার বাগানে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্কে’র নোটিস দেয় মালিকপক্ষ। শুক্রবার, মোর্চা প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের তরফে জেলাশাসকের দফতরে এবং কার্শিয়াং থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ করে জানানো হয়েছে, বাগান বন্ধের কোনও নোটিস তাঁরা পাননি। তাঁদের অভিযোগ, নোটিস ছাড়াই বাগান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। মালিকপক্ষ বৈঠকে যাবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তবে বৈঠকের এখনও দেরি রয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, বাগান বন্ধের প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ তুলে বাগানের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যে অভিযোগ দায়ের করেছে ইউনিয়ন, তা অযৌক্তিক। তাঁর দাবি, নিয়ম মেনেই বাগান বন্ধ করা হয়েছে।

বাগানে অফিসে এক কর্মীকে স্থায়ী করা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। মোর্চার শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, ২০০৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী স্থায়ী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সিনিয়র’ কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। গত ১৫ জুলাই যাঁকে স্থায়ী করা হয়েছে তিনি মাত্র দেড় বছর আগে বাগানের অফিসে যোগ দিয়েছেন। শ্রমিকেরা তা নিয়ে বিক্ষোভ দেখালে দু’দিন বাদেই জঙ্গপানার ম্যানেজার বাগান ছেড়ে চলে যান বলে অভিযোগ। মোর্চার শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দ্বীপেন খাওয়াস বলেন, “ওই ব্যক্তির যখন একবার নিয়োগ হয়েছে, তখন তিনি কাজ করুন। তবে মালিকপক্ষ বাগানে আরও অন্তত ১১ জন কর্মী বাড়িয়ে দিন।” বর্তমানে বাগানের অফিসে ৪১ জন কর্মরত। যাঁদের অর্ধেকই অস্থায়ী। সে ক্ষেত্রে আরও ১১ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের দাবি তুলেছেন তাঁরা। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে সন্দীপবাবু বলেন, “২০০২ সালেই কর্মী সঙ্কোচন নিয়ে চুক্তি হয়, অনেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন। কাজেই কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর উপায় এখন নেই।”

ঘটনা হল, চলতি বছর আবহাওয়াজনিত কারণে এমনিতেই চা উৎপাদন মার খেয়েছে। নিলামে চায়ের দামও কেজি প্রতি প্রায় একশো টাকা কম। এই পরিস্থিতিতে বাগান বন্ধ হলে চা শিল্পের আর্থিক অবস্থার উপর চাপ আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে বহু বাগানেই কম বেশি ইউনিয়নের সমস্যা দানা বাঁধছে। যেমন, এদিনই মোর্চার শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূলের চা ইউনিয়নের সদস্যরা একজোট হয়ে পানিঘাটা চা বাগানে প্রায় ৬ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। তাতে ওই সময় কোনও কাজ হয়নি। শ্রমিকদের দাবি, বকেয়া পিএফ ও রেশন দিতে হবে। মালিকপক্ষ তিন সপ্তাহের মধ্যে তা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মালিকপক্ষের বক্তব্য, আলোচনায় না বসে বাগান বন্ধ করে আন্দোলন করলে আখেরে সকলেরই যে ক্ষতি সেটা তৃণমূল-মোর্চার শ্রমিক নেতারা কবে বুঝবেন?

শিল্প-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ইউনিয়ন যদি স্থানীয় ইউনিয়নের রাশ রাখতে না পারে, তা হলে প্রতিটি বাগানেই এ ধরনের গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জঙ্গপানার মতো অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হবে। তৃণমূলের দার্জিলিং পাহাড় শাখার সভাপতি রাজেন মুখিয়া বলেন, “আমরা সব সময়েই আলোচনা চাই। মালিকপক্ষ আলোচনায় বসতে চাইছিলেন না বলে বিক্ষোভ হয়। আশ্বাস মেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। বাগানে কাজও হয়েছে।”

hundred years old jungpana tea-estate suspension of work reja pradhan debapriya sengupta jungpana kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy