Advertisement
E-Paper

মাসুমই সাজিদ, ধরা পড়ে জানাল তার স্ত্রী

নারায়ণগঞ্জের মাসুদ রানা ওরফে মাসুমই জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার রাজনৈতিক প্রধান সাজিদ। ঢাকায় আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশ এ কথা ঘোষণা করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ দিন সাজিদ ওরফে রহমতুল্লার স্ত্রী ফতেমাকে গ্রেফতারের কথা ঘোষণা করেছেন। তার সঙ্গে বছর দেড়েকের একটি ছেলেও রয়েছে।

কুদ্দুস আফ্রাদ

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০০
সাজিদের স্ত্রী ফতেমা। রবিবার ঢাকায়।—নিজস্ব চিত্র।

সাজিদের স্ত্রী ফতেমা। রবিবার ঢাকায়।—নিজস্ব চিত্র।

নারায়ণগঞ্জের মাসুদ রানা ওরফে মাসুমই জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার রাজনৈতিক প্রধান সাজিদ। ঢাকায় আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশ এ কথা ঘোষণা করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ দিন সাজিদ ওরফে রহমতুল্লার স্ত্রী ফতেমাকে গ্রেফতারের কথা ঘোষণা করেছেন। তার সঙ্গে বছর দেড়েকের একটি ছেলেও রয়েছে।

এই পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, জেএমবি-র মহিলা শাখার প্রধান ফতেমাকে জেরা করে ৭ নভেম্বর কলকাতায় এনআইএ-র হাতে ধরা পড়া সাজিদের পরিচয় জানা গিয়েছে। ফরাজীকান্দার মাসুদ রানাই সাজিদ ওরফে রহমতুল্লা ওরফে বোরহান শেখ নাম নিয়ে ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। মাসুদ রানার মেজ দাদার নামও বোরহান শেখ।

সাজিদ ধরা পড়ার পরে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ফরাজীকান্দা গ্রামে গিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিনিধি প্রথম সাজিদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেন। গ্রামে তার ভাই মোনায়েম শেখ ওরফে মনা স্বীকার করে, তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মাসুমই জেএমবি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সেই নাম বদলে ভারতে জঙ্গি কাজকর্ম করছে বলে তিনি খবর পেয়েছেন। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দিনই পুলিশ মনাকে আটক করে। সাজিদের অন্য ভাইয়েরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। “সংবাদমাধ্যমের (আনন্দবাজার) এই প্রতিবেদনটি সাজিদের পরিচয় খুঁজে বার করতে সহায়ক হয়েছে,” বলে আজ স্বীকার করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার।

পুলিশ জানিয়েছে, সাজিদের স্ত্রীকে শনিবার ঢাকার সদরঘাট থেকে তিন সঙ্গী-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের অন্য একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী শনিবার নয়, ফতেমাকে আদতে আটক করা হয়েছে মঙ্গলবার, এনআইএ ঢাকায় থাকাকালীনই। এনআইএ-র প্রতিনিধিরা ফতেমাকে জেরা করার সুযোগও পেয়েছেন। পাঁচ দিন ধরে অন্যত্র অভিযান চালায় পুলিশ। সেই অভিযানেই আরও তিন জঙ্গি আবদুল্লা কাজী, মহম্মদ ইশরাত আলি শেখ ও শওকত সর্দারকে আটক করা হয়। তাদের ডেরা থেকে কিছু বিস্ফোরক, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও জেহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ফতেমাকে জেরা করে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে চট্টগ্রামেও গোয়েন্দা পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।

এ দিন ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের দিনও সাজিদ ও ফতেমা বর্ধমানের শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় ছিল। শিমুলিয়ায় ২০-২৫ জন মহিলাকে ফতেমা জেহাদি ভাবধারায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারও শিখিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশে নাশকতা ও হামলার লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও সাজিদের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রের খবর, ফতেমা তাদের জানিয়েছে বিস্ফোরণের পরই সাজিদ ও সে সন্তানকে নিয়ে বর্ধমান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কলকাতার একটি জনবহুল এলাকায় এক পূর্বপরিচিতের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এই ব্যক্তি জেএমবি-র সঙ্গে যুক্ত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের এক স্থানীয় স্তরের নেতা। সাজিদকে লুকিয়ে রাখার জন্য এই নেতা অনেক টাকা দাবি করেন। বাংলাদেশ পুলিশ ফতেমার থেকে এই নেতার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে ইতিমধ্যেই এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়েছে।

কিন্তু এনআইএ অভিযান শুরু করার পরে টাকা আসার সূত্রগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সংগঠনের প্রধান হিসেবে চাপে পড়ে গিয়েছিল সাজিদ। ফতেমার কথা অনুযায়ী, টাকার জোগাড় করতে মরিয়া হয়েই সাজিদ রাজারহাট এলাকার একটি ডেরায় গিয়ে ধরা পড়ে যায়।

ফতেমা বাংলাদেশ পুলিশকে জানিয়েছে, ধরা পড়ার সময়ে সাজিদের সঙ্গে থাকা সংগঠনের চার-পাঁচ জন কর্মীর মধ্যে কোনও এক জন পুলিশের চর ছিল। সে-ই রাজ্য পুলিশকে সাজিদের খবর পৌঁছে দিয়ে ফাঁদ পাতিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এনআইএ-র ফেরার তালিকায় থাকা সাজিদকে নিয়েই ব্যস্ত থাকায় বাকি সঙ্গীরা পালিয়ে যেতে পারে। তাদেরই এক জন ফতেমাকে খবর দেয়, এক কর্মীর বিশ্বাসঘাতকতায় সাজিদ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তার পরেই ফতেমা তার শিশুসন্তানকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজশাহিতে ঢোকে।

সেখান থেকে এসে ঢাকার কাছে কেরানিগঞ্জে এক পরিচিতের বাড়িতে ওঠে। পুলিশ সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে ধরপাকড় ও অভিযান শুরু হওয়ার পরে ফতেমা-সহ বেশ কয়েক জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে এনআইএ-ই নির্দিষ্ট খবর দেয়। ফতেমার বিষয়ে কিছু সূত্রও তারা দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই শিশুপুত্র-সহ ফতেমাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাহমুদুর রহমান অবশ্য বলেছেন, ফতেমাকে আরও জেরা করা দরকার। কাল তাকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে চাইবে পুলিশ।

quddus afrad masud rana jmb sajid masum fatema khagragarh blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy