জখম অনন্যা দে (বাঁ দিকে)। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অচৈতন্য ডোনা গুপ্তকে। —নিজস্ব চিত্র
শনিবার ভরদুপুরে শহরের রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন দুই যুবতী। অথচ তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না কাউকে। কেন? কারণ, শাসক দলের বাইক বাহিনী তখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা এলাকা। শেষমেশ এগিয়ে এলেন পাঁচ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্ত। তিনিও তৃণমূলের। ডোনা গুপ্ত ও অনন্যা দে নামে গুরুতর জখম ওই দুই যুবতীকে রাস্তা থেকে তোলার চেষ্টা করতে করতে বললেন, “এটা আমার কর্তব্য।” তার অনেক পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এল। তারাই আহতদের নিয়ে গেল মেডিক্যাল কলেজে।
ঘটনাস্থল শিয়ালদহ। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চৌরঙ্গি উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। তাল কেটে গেল সুরেন্দ্রনাথ কলেজের উল্টো দিকে মন্মথ মুখার্জি রো-র ওই ঘটনায়। রক্তাক্ত হল নির্বাচনপর্ব।
কী ঘটল সেখানে? পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ মহাত্মা গাঁধী রোড ও মণীন্দ্র মিত্র রোডের সংযোগস্থলে তৃণমূলের বুথ অফিসে ৫০-৬০ জন বহিরাগত জমা হয়েছে বলে সিপিএমের তরফে অভিযোগ করা হয়। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সিপিএমের বুথে হামলা হয়। সিপিএম সমর্থকদের মাটিতে ফেলে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মাথায় আঘাত লাগে স্থানীয় সিপিএম নেতা শঙ্কর দেবের। নাক ও পাঁজরের হাড় ভেঙে গিয়েছে আর এক নেতা গোপাল দাসেরও। পুলিশ জানাচ্ছে, খবর পেয়ে গোলমাল থামাতে গেলে তৃণমূল সমর্থকেরা তাদের উপরেও হামলা চালায়। কিন্তু পুলিশ রুখে দাঁড়ালে ওই বাহিনী চলে যায় মন্মথ মুখার্জি রো-এ। সেখানে সিপিএমের আর একটি বুথ ভাঙচুর করে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে। সেখানেই ছিলেন সিপিএমের ছাত্রনেত্রী ডোনা ও অনন্যা। তাঁদেরও মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
তলপেটে গুরুতর আঘাত পাওয়া অনন্যা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে শুয়ে বলেন, “মন্মথ মুখার্জি রো-র ক্যাম্পে আমরা কয়েক জন বসেছিলাম। হঠাৎই ৫০-৬০ জন লোকের একটি দল সেখানে চড়াও হল। আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো একটা লরিতে মাথা ঠুকে দিল। পেটে-বুকে লাথি মারল। আমি চিৎকার করছিলাম। কিন্তু পুলিশ বাঁচাতে এল না।” চিকিৎসকরা জানান, অনন্যা তলপেটে গুরুতর চোট পেয়েছেন। অস্ত্রোপচার হতে পারে। ডোনার আঘাত লেগেছে মাথায়, ঘাড়ে আর বুকে। তিনি বলেন, “আমাকে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে মাথায় মেরেছে ওরা।”
ডোনা গুপ্তই ছিলেন পুলিশ হেফাজতে নিহত এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগকারিণী। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সিপিএম নেতা রবীন দেবের অভিযোগ, “সুদীপ্ত হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী ডোনা। সে কারণে ছক কষেই তাঁর উপরে হামলা চালানো হয়েছে কি না, সেটাও দেখা হোক। হামলাকারীরা বেলেঘাটায় থাকে। তাদের এক জন ক’দিন আগেই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।” চৌরঙ্গির সিপিএম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খানের অভিযোগ, “তৃণমূল মহিলাদেরও ছাড়ছে না। মানুষের
রায় তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে দেখে ভয় পাচ্ছে। ছাপ্পা দিতে পারছে না। তাই বহিরাগত সমাজবিরোধীদের নিয়ে হামলা চালাচ্ছে।”
সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করে চৌরঙ্গির তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, “বিরোধীরা এ সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রটাচ্ছে। কোনও বহিরাগত আমাদের সঙ্গে ছিল না।” এ দিন সন্ধ্যায় কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র
অবশ্য বলেন, “দু’পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। তল্লাশিও চলছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।”
শুধু শিয়ালদহই নয়, বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের বাহিনী হামলা চালিয়েছে অন্যত্রও। কংগ্রেস পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে, তৃণমূল নেতা ইকবাল আহমেদের ছেলেরা বাইক নিয়ে দিনভর ভোটারদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছাতাগলিতে বিরোধীদের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর হয় বলেও অভিযোগ। বিজেপি প্রার্থী রীতেশ তিওয়ারির উপরেও হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে একটি বুথে বিজেপি প্রার্থী গেলে তাঁকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন বলে অভিযোগ। তৃণমূল অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy