Advertisement
E-Paper

মঙ্গলম-যোগে পুজোর আগেই বিসর্জন বন্ধুশ্রীর

খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে। অমঙ্গল হল ‘মঙ্গলম’-এর সঙ্গে জোট বেঁধে। বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে অসংখ্য মানুষের দুর্গতির সীমা তো নেই-ই। সেই সঙ্গে অনেক পুজো কমিটিও যে অগাধ জলে পড়েছে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ ‘বন্ধুশ্রী’। প্রায় ২০ বছর ধরে ঠাকুরপুকুরের আনন্দনগর সি ব্লকে ছোট মাপের পুজো করত বন্ধুশ্রী। বছর চারেক আগে তাদের সঙ্গে জুড়ে যায় বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা মঙ্গলম।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০

খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে। অমঙ্গল হল ‘মঙ্গলম’-এর সঙ্গে জোট বেঁধে।

বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে অসংখ্য মানুষের দুর্গতির সীমা তো নেই-ই। সেই সঙ্গে অনেক পুজো কমিটিও যে অগাধ জলে পড়েছে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ ‘বন্ধুশ্রী’। প্রায় ২০ বছর ধরে ঠাকুরপুকুরের আনন্দনগর সি ব্লকে ছোট মাপের পুজো করত বন্ধুশ্রী। বছর চারেক আগে তাদের সঙ্গে জুড়ে যায় বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা মঙ্গলম। ক্লাবের সভাপতি হন মঙ্গলম সংস্থার কর্ণধার উজ্জ্বল সিকদার। সেই সংস্থার হাত ধরেই ২০১২ সালে পুজো উঠে আসে বেহালার শীলপাড়ায়। পুজোর বহর-জৌলুসও বাড়ে অনেকটাই। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় শুরু হতেই পাততাড়ি গুটিয়েছে মঙ্গলম। সংস্থার কর্তারা এলাকা-ছাড়া। কপাল খারাপ বন্ধুশ্রীর কর্তাদেরও। বেহালার শীলপাড়া থেকে পুরনো এলাকায় ফিরে গিয়েও পুজো করতে পারছেন না তাঁরা।

কেন?

আঘাতটা এসেছে দু’দিক থেকে। ক্লাবকর্তারা জানান, তাঁরা এ বার আনন্দনগরে ছোট মাপের পুজোর আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলমে টাকা রেখেও তা ফেরত না-পাওয়ায় আমানতকারীরা হামলা চালিয়ে মণ্ডপ ভেঙে দিয়েছেন। পুজোর অনুমতি বাতিল করে দিয়েছে পুলিশও। উপরন্তু পুজোর সেই অনুমতির বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে পচা শামুক। তাতে ক্লাবকর্তাদের পা কেটেছে। কার্যত মুখ পুড়েছে কলকাতা পুলিশেরও।

কী ভাবে?

লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ গত তিন বছর বেহালার শীলপাড়ায় পুজো করার অনুমতি দিয়েছিল বন্ধুশ্রীকে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নগর পুলিশের এলাকায় কোনও নতুন জায়গায় পুজোর অনুমতি দেওয়া নিষিদ্ধ। সেই নিয়ম মোতাবেক আনন্দনগরের পুজো শীলপাড়ায় করার অনুমতি দিতে পারে না পুলিশ। ঠাকুরপুকুর থানা কিন্তু আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে মঙ্গলম পরিচালিত বন্ধুশ্রীর পুজোটাই বেহালার শীলপাড়ায় করার অনুমতি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। কী ভাবে এই অনুমতি মিলল, তা নিয়ে অবশ্য লালবাজারের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই অনুমতি আদায় করে নিয়েছিলেন বন্ধুশ্রী নামে ঠাকুরপুকুরের ওই পুজো কমিটির কর্তারা। আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “এ ক্ষেত্রে আদালত অবমাননার বিষয়টি স্পষ্ট। মামলা হলে পুলিশ শাস্তির মুখে পড়বে।”

এক জায়গার পুজো অন্যত্র করার অনুমতি মিলেছিল কী ভাবে?

পুলিশি সূত্রের খবর, ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঠাকুরপুকুর-সহ কলকাতা পুলিশের সব থানায় আদালতের নির্দেশ জানিয়ে (মেমো নম্বর ২১৫/১২/এইচকিউ/সি) নির্দেশিকা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশ এবং যুগ্ম কমিশনারের নির্দেশিকাকে অবজ্ঞা করে সেই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ঠাকুরপকুর থানা ওই নতুন পুজোয় অনুমোদন দেওয়ার জন্য লালবাজারের কর্তাদের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। এবং কোনও কিছু খতিয়ে না-দেখেই লালবাজার ওই পুজোকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে ঠাকুরপুকুর থানা থেকে ‘বন্ধুশ্রী’ নামে ওই পুজো কমিটি নতুন পুজোর অনুমোদন পেয়ে যায় সে-বছরের ১৬ অক্টোবর।

কী বলছেন জাভেদ শামিম?

বর্তমানে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার শামিম বলেন, “অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। এখন আর ওই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।”

তবে লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, রাজনৈতিক চাপে পড়ে পুলিশ ওই অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। “ওই পুজোর সঙ্গে যুক্ত মঙ্গলমের কর্তারা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন। সহজেই বোঝা যাচ্ছে, কোন জাদুবলে আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল,” মন্তব্য করেছেন লালবাজারের ওই কর্তা।

পুলিশের খবর, ’১২ এবং ’১৩ সালে বন্ধুশ্রী ক্লাবের হয়ে পুজোর জন্য আবেদন করেছিলেন তাদের সভাপতি উজ্জ্বল সিকদার। পুজোর অনুমোদন চেয়ে যে-আবেদনপত্র জমা দিতে হয়, তাতে ‘ওল্ড পুজো ওল্ড সাইট’ লেখা কলাম থাকে। ’১২ সালে বন্ধুশ্রী পুজো কমিটির অনুমোদনপত্রের কলামে দ্বিতীয় ‘ওল্ড’টি পেন দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখানো হয় শুধু ‘ওল্ড পুজো সাইট’। ঠাকুরপুকুর থানার তরফে ২৯ সেপ্টেম্বর এই মর্মে পুজোর অনুমোদন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল লালবাজারের যুগ্ম কমিশনারের কাছে।

হাইকোর্টের নিষেধ সত্ত্বেও কী ভাবে ওই পুজোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছেন লালবাজারের একাধিক কর্তাও। লালবাজারের একাংশ অবশ্য বলছেন, মঙ্গলমের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠায় মঙ্গলম সংস্থা তথা বন্ধুশ্রী ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল সিকদারের সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের অনেকেরই ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গিয়েছিল। সেই সময় মহাকরণের অলিন্দেও ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত উজ্জ্বলবাবুকে। সেই জন্যই পুলিশ বাধ্য হয়ে ওই পুজোর অনুমতি দিয়েছিল বলে পুলিশেরই অনেকে দাবি করছেন।

’১৩ সালেও বন্ধুশ্রীর পুজো হয়েছিল টিমটিম করে। অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। আমানতকারীরাও গোলমাল পাকাননি। কিন্তু গত বছর পুজোর পরেই উধাও হয়ে যান মঙ্গলমের কর্তারা। তার পর থেকেই পুজো পুরনো পাড়ায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বন্ধুশ্রীর কর্তারা। সেই অনুযায়ী মণ্ডপ বাঁধার কাজ শুরু হয়। কিন্তু আমানতকারীদের হামলায় তা পণ্ড হয়ে যায়। পুলিশও হাঙ্গামা এবং নানান নিয়মবিধি দেখিয়ে পুজোর অনুমতি বাতিল করে দিয়েছে।

স্বভাবতই হতাশ বন্ধুশ্রী পুজো কমিটির কর্মকর্তারা। “প্রতিমা থেকে মণ্ডপ, সব কাজই শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুজোটাই আর হল না,” বললেন অন্যতম কর্মকর্তা রণবীর বর্ধন।

bondhushri pujo subhasish ghatak mangalam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy