Advertisement
E-Paper

মরিয়া মমতার ডাক ফিরিয়ে পথেই বাম

আগেও বারকয়েক বলেছিলেন। এ বার চাপে পড়ে আরও মরিয়া হয়ে বন্ধুর খোঁজে হাত বাড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অচ্ছুৎ’ রাখলেন না রাজ্যে তাঁর চির প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমকেও! কিন্তু এ বার তাঁর প্রস্তাব শোনা মাত্রই নাকচ করে দিয়ে আজ, শনিবার থেকেই রাজ্য জুড়ে নতুন করে পথে নামার কর্মসূচি ঘোষণা করে দিল আলিমুদ্দিন। যার জেরে চাপ আরও বেড়ে গেল কোণঠাসা মমতার উপরে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৪

আগেও বারকয়েক বলেছিলেন। এ বার চাপে পড়ে আরও মরিয়া হয়ে বন্ধুর খোঁজে হাত বাড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অচ্ছুৎ’ রাখলেন না রাজ্যে তাঁর চির প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমকেও! কিন্তু এ বার তাঁর প্রস্তাব শোনা মাত্রই নাকচ করে দিয়ে আজ, শনিবার থেকেই রাজ্য জুড়ে নতুন করে পথে নামার কর্মসূচি ঘোষণা করে দিল আলিমুদ্দিন। যার জেরে চাপ আরও বেড়ে গেল কোণঠাসা মমতার উপরে!

সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই কখনও দলীয় পতাকা নিয়ে, কখনও অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে পথে নেমেছে সিপিএম। মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারিই এখনও পর্যন্ত আদি তৃণমূলের একেবারে অন্দরে আঘাত! দুর্নীতির দায়ে রাজ্যের এক পূর্ণমন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ায় সরকারের নৈতিক কর্তৃত্ব শিথিল হয়ে আসছে বিরোধীরা চাপ বাড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মদনের গ্রেফতারিকে বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্ত মনে করে শুক্রবার মমতা ‘বন্ধুত্বে’র হাত বাড়াতে চেয়েছেন বাম-সহ বিজেপি-বিরোধী সব দলের দিকেই! যা থেকে তাঁর বিপন্নতাই স্পষ্ট বলে বিরোধীরা মনে করছে। মমতাকে আরও চাপে রাখতেই তাঁর প্রস্তাব পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীরই এখন মনে হচ্ছে ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়েছে!

মদনের গ্রেফতারির প্রতিবাদ এবং নরেন্দ্র মোদীর দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে গিয়ে মমতা এ দিন বলেন, “বিজেপি-র বিরুদ্ধে যারা লড়বে, তাদের সঙ্গেই থাকব। আমাদের কাছে কেউ অচ্ছুৎ নয়। যারা চাইবে, তাদের সঙ্গেই যাব।” পরে আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি বামেদের কথাও বলছেন? মমতার জবাব, “আমি ডান-বাম বলিনি। যারা চাইবে, তাদের কথা বলেছি। যারা চাইবে না, তাদের কথা বলব কেন?” এই মন্তব্য থেকে বাম এবং বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, তার মানে মমতা জানতেন বামেরা তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দেবে না। তবু অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, বামেদের জন্যও আহ্বান রাখতে হচ্ছে! তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য বলছেন, সাম্প্রদায়িক বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি যে কোনও ফাঁক রাখছেন না, সেই বার্তাই নথিভুক্ত করাতে চেয়েছেন মমতা।

নবান্নে তৃণমূল নেত্রীর এমন আহ্বান টেলিভিশনে দেখেই মুহূর্তের মধ্যে আলিমুদ্দিনে বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবু বলে দেন, “কথা শুনে মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীরই প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে! যারা নিজেরাই বলে আমরা সবাই চোর, তাদের সঙ্গে আমরা অন্তত নেই!” সূর্যবাবুর আরও দাবি, পরিস্থিতি যেখানে গিয়েছে, তাতে এখনই মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করা উচিত। গ্রেফতার করা উচিত অন্য অভিযুক্তদেরও। এই দাবি নিয়েই আজ, শনিবার থেকেই জেলায় জেলায় নতুন উদ্যমে পথে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলিমুদ্দিন। কলকাতায় আজ যখন তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে ময়দান থেকে ক্রীড়াপ্রেমীরা মিছিল করবেন মদনের গ্রেফতারির প্রতিবাদে, ধর্মতলা থেকে বামেদের মিছিল হবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই।

সুপ্রিম কোর্টে যাঁর দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে সারদায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি হয়েছিল, কংগ্রেসের সেই আব্দুল মান্নানও মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারি দাবি করেছেন। মান্নানের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী এক বছর ধরে নিজের সরকারের তদন্ত চালিয়ে এঁদের (মদন-সহ) কাউকেই ডাকেননি। অপরাধীদের আড়াল এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন। সেই জন্যই তাঁকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন!” সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষের মন্তব্য, মদন গ্রেফতার হওয়ায় সারদায় প্রতারিতেরা টাকা ফেরত না পেলেও স্বস্তি পাবে!

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে হেতু সিবিআইয়ের তদন্ত চলছে, তাই তাদের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী আসলে সর্বোচ্চ আদালতকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এর জন্য তাঁকে গ্রেফতারও করা যেতে পারে বলে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। সূর্যবাবু বলেছেন, “ওঁদের কিছু বলার থাকলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বলুন। সেই দরজা তো খোলা আছে! এখানে এ সব হাস্যকর কথা বলছেন কেন?”

দলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এ দিন সন্ধ্যায় মালদহ টাউন স্টেশনে পৌঁছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও বলেন, “স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত! তাঁকে জেরাও করা উচিত।” গ্রেফতার হতে হবে জেনেই মদন অসুস্থতার অভিনয় করছিলেন বলে কটাক্ষ করে বিমানবাবুর মন্তব্য, “এ বার আসবে মুকুল রায়ের নাম। কান টানলেই মাথা আসবে! মাথা বলতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

সারদা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর নাম জড়িয়ে তাঁদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। বিমানবাবুর বক্তব্য, “ওঁরা যাঁদের কথা বলছেন, সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ তন্ন তন্ন করে বার করুক। প্রমাণ হলে গ্রেফতার হবে!”

madan mitra bjp amit shah tmc arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy