Advertisement
E-Paper

যৌথমঞ্চের বন্‌ধে প্রভাব পড়ল চার জেলায়

শাসক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে যৌথমঞ্চের ডাকা ধমর্ঘটে মঙ্গলবার বিপর্যস্ত হল তরাই, ডুয়ার্স ও পাহাড়ের চা পাতা তোলা এবং উত্‌পাদনের কাজ। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে কোনও ফয়সালা না করার অভিযোগে মঙ্গলবার চা শিল্পে ধর্মঘট ডেকেছিল ডান-বাম মিলে ২৩টি চা শ্রমিক সংগঠন। আজ বুধবার চা শিল্পে বনধ ডাকার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে সাধারণ ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছে যৌথ মঞ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
ডুয়ার্সের বানারহাটে ২৩টি সংগঠনের মিছিল। ছবি: রাজকুমার মোদক।

ডুয়ার্সের বানারহাটে ২৩টি সংগঠনের মিছিল। ছবি: রাজকুমার মোদক।

শাসক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে যৌথমঞ্চের ডাকা ধমর্ঘটে মঙ্গলবার বিপর্যস্ত হল তরাই, ডুয়ার্স ও পাহাড়ের চা পাতা তোলা এবং উত্‌পাদনের কাজ। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে কোনও ফয়সালা না করার অভিযোগে মঙ্গলবার চা শিল্পে ধর্মঘট ডেকেছিল ডান-বাম মিলে ২৩টি চা শ্রমিক সংগঠন। আজ বুধবার চা শিল্পে বনধ ডাকার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে সাধারণ ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছে যৌথ মঞ্চ। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার এই ৩ জেলার সঙ্গে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ এবং উত্তরদিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমাকে বন্ধের আওতায় রেখেছে মঞ্চ। সাধারণ ধর্মঘটে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। দার্জিলিঙের চা বাগানগুলিতে দু’দিনের ধর্মঘট হলেও, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শ্রমিক সংগঠন জানিয়েছে, পর্যটন মরসুমের কথা মাথায় রেখে সেখানে সাধারণ ধর্মঘটে সামিল হবেন না তাঁরা।

যৌথমঞ্চের ডাকা বন্‌ধে ডুয়ার্স-তরাই-পাহাড়ের আড়াই’শোরও বেশি চা বাগানে এ দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়। আজ বুধবারেও চা শিল্পে ধর্মঘটের প্রভাব পড়লে দু’দিনের বনধে চা শিল্পে অন্তত ২৫ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছে শিল্প সংস্থাগুলি। প্রথম থেকেই যৌথ মঞ্চের ডাকা বন্ধের বিরোধিতা করছে তৃণমূল। যে সব বাগানে শাসক দলের সংগঠন রয়েছে, সেখানে এ দিন কাজ করার চেষ্টাও করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। তবে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া করলাভ্যালি চা বাগানের তৃণমূল সমর্থকরা এ দিন কাজে যোগ দেননি। স্থানীয় তৃণমূল শ্রমিক নেতা দুলু আনসারি বলেন, “যে দাবিতে বনধ ডাকা হয়েছে সেটা সমর্থন না করে উপায় নেই। বাইরের নেতারা যে যাই বলুন, আগে আমাদের দু’বেলা সংসার চালানোর প্রশ্ন।”

এ দিন সকালে আলিপুরদুয়ার থানার পাটকাপাড়া চা বাগানে তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের জনাকয়েক সদস্যকে কাজ করতে দেখা গিয়েছে। পাটকা পাড়া চা বাগানের প্রায় ১৫০০ শ্রমিকের মধ্যে ২০-২৫ জন শ্রমিক চা পাতা তোলার কাজ করেছেন বলে বাগান সূত্রের খবর। বনধ সমর্থনকারী অনান্য সংগঠনের অবস্থানের জেরে এ দিন কারখানা বন্ধ থাকায় বাগান কর্তৃপক্ষ কাঁচা চা পাতা নিতে অস্বীকার করেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রভাবিত চা শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা ম্যানেজারের বাংলোর বাগানে চা পাতা ফেলে আসেন। কারখানা বন্ধ থাকায় ওই পাতা নষ্ট হল বলেই জানানো হয়েছে। ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি, গাঁঠিয়া, রাঙামাটি এবং তুলসিপাড়া চা বাগানে অন্যান্য দিনের মত এ দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে দার্জিলিঙেও। মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুরজ সুব্বা বলেন, “পাহাড়ের সব চা বাগান এ দিন বন্ধ ছিল। প্রতিটি বাগানের সামনে গেট মিটিং হয়েছে।”

ময়নাগুড়িতে বন্ধ চা বাগান। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

বনধ নিয়ে উত্তেজনাও ছড়ায় ডুয়ার্সে। এদিন সকালে ময়নাগুড়ি পানবাড়ি এলাকায় একটি বাগানে শ্রমিকরা বনধের সমর্থনে গেট মিটিং করার সময় তাঁদের উপর বহিরাগত তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ডায়না চা বাগানে তৃণমূল সমর্থক শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে ওই শ্রমিকরা ফিরে যান। তৃণমূল টি প্ল্যানটেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জোয়াকিম বাকলার দাবি, “গায়ের জোরে বনধ করা হয়েছে।”

চা মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যানটেশন অ্যাসোসিয়েশন এর কর্মকর্তা অমিতাংশু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনভুক্ত ৭০শতাংশ বাগানে পুরোপুরি কাজ বন্ধ ছিল। অনান্য বাগানে আংশিক কাজ হয়েছে। মালিকপক্ষ সংগঠনগুলোর পক্ষে কনসালটেটিভ কমিটি ফর প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিত দাশগুপ্তের কথায়, “গত বছরের নভেম্বর মাসের হিসাবের নিরিখে একদিনের ধর্মঘটেই আমাদের ১৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।” সে হিসেবে দু’দিনের বন্ধে ক্ষতির পরিমাণ ২৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলেই তাঁর দাবি।

এ দিকে, আজ বুধবারের সাধারণ ধর্মঘটে যাত্রী পরিষেবার কথা মাথায় রেখে উত্তরবঙ্গের রাস্তায় বেশি করে সরকারি বাস চালানো হবে বলে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম জানিয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “অতিরিক্ত সরকারি বাস রাস্তায় চলবে। বনধ ব্যর্থ করতে আর্জি জানানো হয়েছে। চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সমস্যা মেটাতে সরকার সচেষ্ট।”

cooch behar alipur duar tea estate workers strike darjeeling jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy