Advertisement
০৬ মে ২০২৪

রাজ্যের ঋণ মকুব করুন, জেটলিকে আর্জি মমতার

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে এ বার রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণ মকুবের আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নবান্নে জেটলির সঙ্গে বৈঠকে ওই প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। এর আগে দিল্লি গিয়ে একই দরবার করে এসেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। এ দিনের বৈঠকেও জেটলি অবশ্য ঋণ মকুবের ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দেননি।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। শনিবার নবান্নে। ছবি: দেবাশিস রায়

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। শনিবার নবান্নে। ছবি: দেবাশিস রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৯
Share: Save:

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে এ বার রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণ মকুবের আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নবান্নে জেটলির সঙ্গে বৈঠকে ওই প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। এর আগে দিল্লি গিয়ে একই দরবার করে এসেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। এ দিনের বৈঠকেও জেটলি অবশ্য ঋণ মকুবের ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দেননি। বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার আলোচনার জন্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে দিল্লি যেতে বলেছেন তিনি।

রাজ্যের কাঁধে বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সরব মমতা। তিনি কেন্দ্রের কাছে সুদ ও আসল শোধের উপরে তিন বছরের স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন। কিন্তু আগের ইউপিএ সরকারের কাছে বারবার দরবার করেও তা আদায় করতে পারেননি। ওই জমানার দুই অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং পি চিদম্বরমের বক্তব্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও একটি রাজ্যকে এই সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। তাতে অন্য রাজ্যগুলিও একই দাবি তুলবে।

নতুন এনডিএ সরকারের কাছে স্থগিতাদেশের বদলে পুরোপুরি ঋণ মকুবেরই আবেদন জানাচ্ছে রাজ্য। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবস্থান মনমোহন সিংহ সরকারের থেকে আলাদা কিছু নয়। রাজ্যের ঋণের দায় মমতা সরকারের নয়, সে কথা মেনে নিয়েও কেন্দ্রের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য, এ ব্যাপারে তাঁদের কিছু করার নেই। পশ্চিমবঙ্গকে কোনও আর্থিক সুবিধা দেওয়া যায় কিনা, সেই বিষয়টি অর্থ কমিশনকে দেখতে বলা হয়েছে। তাদের সুপারিশ না দেখে কিছুই বলা যাবে না। এ দিনের বৈঠকে সৌজন্যের খাতিরে অবশ্য বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার কথা বলেছেন জেটলি। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট করে কিছু না বলে তিনি জানান, রাজ্যের অসুবিধাগুলো কোথায় তা তাঁর জানা আছে।

রাজ্যে কয়েকটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে এ দিন বিকালে কলকাতা নেমে জেটলি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। নবান্নের প্রবেশ পথে তাঁকে স্বাগত জানান রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক চলে প্রায় ঘণ্টাখানেক। বৈঠক শেষে রাজ্যের তরফে কিছু না জানানো হলেও জেটলি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার কাছে এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূণ বিষয় হল পণ্য পরিষেবা কর। এই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এই কর নিয়ে রাজ্য সরকার নীতিগত ভাবে আমাদের সঙ্গে অনেকটাই একমত।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাবারই রাজ্যগুলির কেন্দ্রের সম্পর্ক দৃঢ় করার কথা বলেছেন। এ দিন জেটলির কথাতেও ছিল তারই প্রতিধ্বনি। জেটলি জানান, এটা রাজনৈতিক বৈঠক নয়। দেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব থেকেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ‘দেব না’, এটা মোদী সরকারের মনোভাব নয়। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে কেন্দ্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই ন্যায্য ভাবে, আইন মেনে কিছু করার থাকলে নিশ্চই তা করা হবে। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক কারণে আর্থিক বিষয়ে রাজ্যকে বঞ্চিত করব এটা হবে না।” এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ জানিয়ে জেটলির হাতে একটি তালিকা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের জেটলি জানান, মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে তাঁকে একটি চিঠি দিয়েছেন। অমিত মিত্র দিল্লি গেলে ওই বিষয়টি নিয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হবে। সেই আলোচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলিকেও ডেকে নেওয়া হবে।

কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর অরুণ জেটলি হলেন চতুর্থ মন্ত্রী যিনি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। এর আগে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি মমতার সঙ্গে দেখা করে যান। অর্থমন্ত্রী জানান, শুধু বকেয়া প্রকল্পই নয়, এ দিন রাজ্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বিভিন্ন নতুন প্রকল্পে কেন্দ্রের সক্রিয় অংশগ্রহণের আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jetly mamata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE