Advertisement
E-Paper

রাজ্যপালের ভাষণে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে

প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও ঘটনায় উত্তাল হচ্ছে রাজ্য। দু’দিন আগেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব বা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপালের বক্তৃতায় প্রশংসাই বরাদ্দ থাকল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য! সেখানে খাগড়াগড়-কাণ্ড বা বীরভূমের পাড়ুইয়ে লাগাতার ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহের কোনও উল্লেখ পর্যন্ত নেই। বরং, রাজ্যপালের বক্তৃতায় আরও দাবি করা হয়েছে, কলকাতা মহিলাদের পক্ষে নিরাপদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫২
সৌজন্য বিনিময়। বিধানসভায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

সৌজন্য বিনিময়। বিধানসভায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও ঘটনায় উত্তাল হচ্ছে রাজ্য। দু’দিন আগেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব বা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপালের বক্তৃতায় প্রশংসাই বরাদ্দ থাকল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য! সেখানে খাগড়াগড়-কাণ্ড বা বীরভূমের পাড়ুইয়ে লাগাতার ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহের কোনও উল্লেখ পর্যন্ত নেই। বরং, রাজ্যপালের বক্তৃতায় আরও দাবি করা হয়েছে, কলকাতা মহিলাদের পক্ষে নিরাপদ।

প্রথা অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া ভাষণই বিধানসভায় পাঠ করতে হয় রাজ্যপালকে। বর্তমান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বুধবারই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কড়া নিন্দা করেছিলেন। অথচ বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ অন্য কথা বলতে হয়েছে তাঁকে! এই বৈপরীত্যের দিকে ইঙ্গিত করেই বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার রাজ্যপালকে দিয়ে ‘অসত্য দলিল’ পাঠ করিয়েছে!

রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া ভাষণের সঙ্গে সহমত না হয়ে কিছু পরিবর্তন, পরিমার্জনের জন্য রাজ্যপাল তা ফেরত পাঠিয়েছেন, এমন নজির এ রাজ্যেও আছে। কিন্তু এ বার তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেই সরকারি সূত্রের খবর। রাজ্যপালের দীর্ঘ বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে রাজ্য সরকারের নানা কাজের প্রশংসাই ছিল এ দিন। এক মন্ত্রীর দাবি, “শুধু সরকারের কাজ সম্পর্কে বিবৃতি পাঠই নয়। রাজ্যপাল চেয়েছিলেন, সরকারের ভাল কাজের কথা তাঁর বক্তৃতায় উল্লিখিত হোক। সুতরাং, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু পাঠ করিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই নেই।”

বাজেট অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে রাজ্যপাল এ দিন বলেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। মহিলাদের উপরে আক্রমণের মতো সামাজিক অভিশাপ যেখানেই নেমে এসেছে, আমার সরকার সেখানেই দ্রুত ও অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।” তাঁর ভাষণে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তার বিচারে কলকাতা সেরা শহর’। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেছেন, “কলকাতা শহর মহিলাদের পক্ষে নিরাপদ এবং নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যার বিচারে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু এবং আমদাবাদ শহরের তুলনায় কলকাতা অনেক নীচের দিকে রয়েছে।” বক্তৃতায় বলা হয়েছে, “রাজ্যে বেশ কিছু নথিভুক্ত ঘটনায় চার্জশিট জমা দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অপরাধীদের দণ্ডদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাজ্যপালের বক্তৃতার পরে বিধানসভা চত্বরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, “কোনও ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কিন্তু এক নম্বর। বীরভূমের ওই মহিলাকে নিয়ে ঘটনার (পাড়ুইয়ের সাত্তোর) পরেও পুলিশকে দিয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নিইনি, এমন একটা ঘটনাও কেউ দেখাতে পারবেন?”

বিরোধীরা বলছেন, কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, বর্ধমানের কাটোয়া থেকে শুরু করে এমন উদাহরণ আছে অজস্র, যেখানে ভুক্তভোগীরা এখনও বিচার পাননি। পাশাপাশিই তাঁদের দাবি, নিজেদের অস্বস্তি আড়াল করতে বাস্তবের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে দিয়ে স্তুতিবাক্য পড়িয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যপালের বিবৃতিকে ‘কলঙ্কিত রাজ্য সরকারের তৈরি করা অসত্য দলিল’ বলে অভিহিত করে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া এনসিআরবি-রই পরিসংখ্যান দিয়ে পাল্টা দাবি করেছেন, ২০১৪ সালে নারী নির্যাতনে পশ্চিমবঙ্গ দু’নম্বরে ছিল। এ বছর এক নম্বরে উঠে এসেছে। ধর্ষণেও গত বছর মধ্যপ্রদেশের পরেই ছিল এ রাজ্যের স্থান। এ বছর তা শীর্ষে উঠেছে। তাঁর দাবি, “পুলিশ এখানে মার খাচ্ছে। পুলিশ টেবিলের নীচে ভয়ে লুকোচ্ছে। মহিলাকে নগ্ন করে বিছুটি ঘষে দিচ্ছে পুলিশ! অথচ বলা হচ্ছে, খুব শান্তিতে রয়েছি আমরা!” বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “এক দিকে পুলিশ মহিলার সর্বাঙ্গে বিছুটি ঘষে দিচ্ছে। অন্য দিকে সেই পুলিশই টেবিলের তলায় বসে ফাইল দিয়ে মাথা বাঁচাচ্ছে। এখান থেকেই স্পষ্ট, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কেমন! মানুষ এ সব দেখছেন এবং নিজেদের মতামত তৈরি করছেন।”

বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কে যা বলার বলবেন বলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে বাম পরিষদীয় দলের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজ্যপালের ভাষণে ‘অসত্য দাবি’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য বিধায়কদের যাবতীয় তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে অধিবেশনে সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।

রাজ্যপালের বক্তৃতায় শিক্ষাক্ষেত্রের নৈরাজ্যের উল্লেখ কেন নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের কথায়, “বক্তৃতায় রাজ্যপাল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চুপচাপ!” মানসবাবুরও অভিযোগ, “শিক্ষাক্ষেত্র রক্তাক্ত। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এ সব ঘটনা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে তৃণমূলের বাহিনীর গুণ্ডামি চলছেই!”

governor of west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy