Advertisement
E-Paper

লেক-মলের ফাইল নিয়ে কী করেন নজর রাখছি, অমিতকে খোঁচা সূর্যের

চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শ্রীকান্ত মোহতাকে রাজ্য সরকার বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে মঙ্গলবার কৌশলে বিধানসভায় এই অভিযোগ তুলে সরকারের জবাব চাইলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর নিশানা অবশ্য ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রই। বিধানসভায় এ দিন বামেদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিলেন অমিতবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্রীকান্ত মোহতা ও অমিত মিত্র

সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্রীকান্ত মোহতা ও অমিত মিত্র

চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শ্রীকান্ত মোহতাকে রাজ্য সরকার বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে মঙ্গলবার কৌশলে বিধানসভায় এই অভিযোগ তুলে সরকারের জবাব চাইলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর নিশানা অবশ্য ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রই।

বিধানসভায় এ দিন বামেদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিলেন অমিতবাবু। এর পরে সূর্যবাবু রাজ্যের কোষাগারের বেহাল দশার কথা বলতে গিয়ে অমিতবাবুর উদ্দেশে বলেন, “টলিউডের এক বিশিষ্ট প্রযোজকের দফতরে বাণিজ্য কর বিভাগের অফিসাররা তল্লাশিতে গিয়েছিলেন। তিন-চার ঘণ্টা তল্লাশির পর হঠাৎ ফোন যায় তদন্তকারী দলের কাছে। তল্লাশি বন্ধ হয়ে যায়। আপনি বলুন, কার কাছ থেকে ফোন গিয়েছিল, কেন তল্লাশি বন্ধ হয়েছিল।”

এখানেই শেষ নয়, রাজস্ব আদায় নিয়ে বড়াই করা অর্থমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা বলেন, “আপনার রাজস্ব সংগ্রহের নমুনা জানা যাচ্ছে। যে ব্যক্তির দফতরে কমার্শিয়াল ট্যাক্স-এর তল্লাশি অভিযান হঠাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাঁরই একটি মলের মালিকানা আছে। ৬০ বছরের চুক্তি দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে বহু টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।” এর পরেই সূর্যকান্তবাবু কটাক্ষ “শুনছি, সেই ফাইল এখন আপনার কাছেই রয়েছে। আমরা নজর রাখছি, আপনি ওই ফাইল নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন।”

সূর্য যখন এ কথা বলছেন, তখন ট্রেজারি বেঞ্চে গালে হাত দিতে বসে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। অনাস্থা প্রস্তাবের শেষ বক্তা হিসেবে সূর্যবাবু আক্রমণ শানানোয় তখন আর সরকার পক্ষের হয়ে জবাব দেওয়ারও সুযোগ ছিল না। ফলে অর্থমন্ত্রীকে কিঞ্চিত বিচলিত দেখায় তখন। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “বিষয়টি স্পর্শকাতর। মুখ্যমন্ত্রী যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।”

কোষাগারে যখন টাকা নেই, তখন চলচ্চিত্র উৎসবে দেদার খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সূর্যবাবু। তাঁর বক্তব্য, বাম আমলে যেখানে এই উৎসবে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হতো, বর্তমান সরকার সেখানে খরচ করছে অন্তত ৩০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর এক একটি জেলা সফরেও প্রায় এক কোটি করে খরচ হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

লিজ চুক্তি ভেঙে লেক মলের নির্মাণ সংস্থা ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশন (ডেভেলপার)-কে ‘বিশেষ’ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে। এর ফলে স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ রাজ্যের প্রায় ২৪ কোটি টাকা আয় কমবে বলে জানান পুরকর্তারাই। নথি অনুসারে, লেক মল নিয়ে পুরসভার সঙ্গে নির্মাণ সংস্থা ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশনের চুক্তির মেয়াদ ছিল ৬০ বছর। তা দু’ভাগে ভেঙে ৩০ বছর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসন। লিজের মেয়াদ ৩০ বছরের বেশি হলে রেজিস্ট্রেশন করাতে সম্পত্তির বাজার দর (মার্কেট ভ্যালু) ধরে স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। এই চুক্তির ক্ষেত্রে প্রায় ২৪ কোটি টাকা দিতে হতো ভেঙ্কটেশ সংস্থাকে। আবার ৩০ বছর বা তার কম হলে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয় গড় লিজ ভাড়ার (অ্যাভারেজ লিজ রেন্ট) হিসেবে। এ ক্ষেত্রে লিজ ভাড়ার হিসেবে স্ট্যাম্প ডিউটি মাত্র ৭০ লক্ষ টাকা। অভিযোগ, ভেঙ্কটেশ সংস্থাকে ‘সুবিধা’ দিতে পুরসভা ৬০ বছরের চুক্তিকে ৩০ বছর করে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। এর ফলে ২৪ কোটি টাকা স্ট্যাম্প ডিউটি না দেওয়ার রাস্তা ভেঙ্কটেশ সংস্থাকে করে দিয়েছে পুরসভা। অর্থ দফতরের হিসেবে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৬ কোটি টাকা। ওই চুক্তির রেজিস্ট্রি কোনও ভাবে যাতে আটকে না যায়, তাই পুজোর আগেই ভেঙ্কটেশ কর্তাকে পুরভবনে ডেকে ৬০ বছরের লিজ চুক্তি ৩০ বছর করে দু’ভাগে ভেঙে সই করিয়ে নেয় পুর প্রশাসন। পুজোর পর পুরসভা খোলার দু’তিন দিনের মধ্যে আলিপুর রেজিস্ট্রেশন দফতরে ওই চুক্তি রেজিস্ট্রির জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্য জুড়ে। চুক্তি রেজিস্ট্রির আগে সতর্ক হয় আলিপুর রেজিস্ট্রশন দফতরও। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “চুক্তি দু’ভাগে ভাগ করার জন্য সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে জেনে তো আর চুপ করে বসে থাকা যায় না। তাই পুর প্রশাসনের কাছ থেকে কতকগুলো বিষয়ের খোঁজ নেওয়া শুরু হয়।” পুরসভার দেওয়া কাগজপত্র আইন দফতরে পাঠানো হয় বলে জানান ওই আধিকারিক। তিনি জানান, যে হেতু রাজ্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি, তাই আইন দফতরও বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যালোচনা করে মতামত দিয়েছে। ইতিমধ্যে অবশ্য এক মাস কেটে গিয়েছে। আলিপুর রেজিস্ট্রেশন দফতরে ওই চুক্তি রেজিস্ট্রির কাজ আটকে গিয়েছে বলে ওই আধিকারিক জানান। পরে ওই সংক্রান্ত ফাইল পাঠানো হয় রাজ্যের অর্থ সচিবের কাছে। কিন্তু রাজস্ব ক্ষতির বিষয় তুলে তিনি প্রযোজককে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ওই ফাইলে অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেন। শুধু অর্থ সচিব নন, দফতরের নিচুতলার অফিসারেরাও এ বিষয়ে আপত্তি তোলেন। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ফাইলটি অর্থমন্ত্রীর ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন আমলারা।

নবান্ন সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এখনও এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থমন্ত্রীও খোদ মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে এই ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থ করেছেন। বিধানসভার অনাস্থা প্রস্তাবে আলোচনার সময় অমিতবাবুকে সেই মোহতা-খোঁচাই দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন সে দিকে যে সকলের নজর রয়েছে, সে কথাও জানিয়ে দেন।

suryakanta mishra amit mitra shrikant mohta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy