Advertisement
E-Paper

শিক্ষায় নির্লজ্জ রাজনীতির হাতই দেখল যাদবপুর

তাঁর নিয়োগেই সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছিল রাজনীতি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর বিদায়লগ্নেও আঙুল উঠছে শিক্ষাক্ষেত্রে নির্লজ্জ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দিকেই! শিক্ষাবিদদের অনেকেরই প্রশ্ন, উপাচার্যের পদত্যাগের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করবেন কেন? কেন-ই বা মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে বক্তৃতা করে ছাত্রছাত্রীদের জানাবেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল দেখতে চাই, তাই আমি নিজে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি।” এটা কি মুখ্যমন্ত্রীর কাজ?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৭

তাঁর নিয়োগেই সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছিল রাজনীতি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর বিদায়লগ্নেও আঙুল উঠছে শিক্ষাক্ষেত্রে নির্লজ্জ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দিকেই!

শিক্ষাবিদদের অনেকেরই প্রশ্ন, উপাচার্যের পদত্যাগের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করবেন কেন? কেন-ই বা মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে বক্তৃতা করে ছাত্রছাত্রীদের জানাবেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল দেখতে চাই, তাই আমি নিজে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি।” এটা কি মুখ্যমন্ত্রীর কাজ?

শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। বাম আমলেই এই বীজ পোঁতা হয়ে গিয়েছে। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপাচার্য দু’য়েরই লাগাম যে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট তথা সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের হাতে থাকত, তা-ও জানা ছিল সকলেরই। কিন্তু তখনও কোনও মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হয়ে নাক গলানোর নজির গড়েননি। এ দিন সন্ধ্যায় সেই নজিরও দেখে ফেলল পালাবদলের রাজ্য!

দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলছেন, উপাচার্য পদত্যাগ করবেন আচার্যের কাছে। আচার্য তা জানাবেন। “উপাচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানাচ্ছেন কেন? মুখ্যমন্ত্রী-ই বা এর মধ্যে ঢুকবেন কেন? এটাই প্রমাণ করছে, পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে কী ধরনের নির্লজ্জ রাজনীতি চলছে! বাম আমলে অনিলায়নের ঘোরতর সময়েও এমন হয়নি।”বলছেন রুদ্রাংশুবাবু।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সরব ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা। এ দিনের ঘটনার পরে জুটার সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত বলেন, “এটা খুব খারাপ নজির তৈরি হল। কে উপাচার্য হবেন, কে উপাচার্য থাকবেন না, তা মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করে দিতে পারেন না।”

তৃণমূল সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপাচার্যকে অপসারণ করেননি। উপাচার্যের ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন মাত্র। কিন্তু অভিজিতের বিদায় যে আদতে মুখ্যমন্ত্রীরই অঙ্গুলিহেলনে, তা তাঁর শরীরী ভাষায় গোপন থাকেনি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উদ্দেশে তিনি আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলেছেন, “এর জন্য আমার কোনও কৃতিত্ব নেই।” শিক্ষাবিদদের প্রশ্ন, কীসের কৃতিত্ব? এটা কি আদৌ কৃতিত্বের কাজ?

অনেকেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ করেছেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকারের মতে, “বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রী অনাহূত হয়ে যেতে পারেন না। এটা নির্লজ্জ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।” পবিত্রবাবুর মতে, মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করেননি। কিন্তু তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কি না, তা পবিত্রবাবুর জানা নেই! একই সুর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, “এই লোক দেখানোর কোনও মানে হয় না। এমন ঘটনা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেনি।”

মুখ্যমন্ত্রী উপাচার্য নিয়োগ করেন না। উপাচার্যের নিয়োগকর্তা আচার্য অর্থাৎ রাজ্যপাল। তাই তিনি যদি এই ঘোষণা করতেন, মেনে নেওয়া যেত। আইনসঙ্গতও হতো। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, উপাচার্যকে সরাতে হলে গোটা প্রক্রিয়াটাই আচার্যের মাধ্যমে করার কথা।

মুখ্যমন্ত্রী কি এই ত্রুটির কথা জানতে পারেননি? নাকি রাজনৈতিক মঞ্চ দখলের জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘তৎপরতা’? প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই।

যদিও শিক্ষাবিদদের আর একটি অংশ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘তৎপরতায়’ কোনও দোষ দেখছেন না। বরং তাঁরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার জানান, যাদবপুরে অচলাবস্থা কাটায় তিনি খুশি। মুখ্যমন্ত্রী না গেলে এই জটিলতা এত তাড়াতাড়ি কাটত না বলেই তিনি মনে করেন। কিন্তু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ? “শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অনেক আগেই হয়েছে। এখন এ নিয়ে ঢাকঢাক গুড়গুড় করার কিছু নেই।” বলছেন অভিরূপবাবু। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কে গেল, কে এল সেটা বড় কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় তো থাকল!’’

পদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ আবার এই সব রাজনৈতিক কচকচির মধ্যে যেতেই নারাজ। “সমস্যাটা এত দিন গড়াল কেন?”প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

আপাতত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলবে কী করে? রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ সময়ে সহ উপাচার্যেরই ওই দায়িত্ব পালন করার কথা।

jadavpur university vc abhijit chakrabarty mamata bandyopadhyay hok kolorob
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy