Advertisement
E-Paper

শিবগঞ্জ পুজো সারল কাঁটাতারের ও পার থেকেই

জেলার নাম চাঁপাই নবাবগঞ্জ। সর্ষে আর শালি ধানের আড়ালে দূরে দূরে ছড়ানো গ্রাম— শিবগঞ্জ, বাগদুর্গাপুর, বালিয়াদিঘি। কাঁটাতারের বেড়ার এ পার থেকে ঝাপসা দেখা যায় রাজশাহীর মোবাইল টাওয়ার। মালদহের মহদিপুর সীমান্তে, সদ্য রূপোলি রং করা কাঁটাতারের ওই বেড়াটুকুই যা ব্যবধান। ও পার-এ পার ছুড়ে ছুড়ে সম্বৎসর কথা চালাচালি।

পীযূষ সাহা ও নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৭
কাঁটাতারের অনুশাসনে থমকে গেল ‘মিলনমেলা’। মালদহের মহদিপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

কাঁটাতারের অনুশাসনে থমকে গেল ‘মিলনমেলা’। মালদহের মহদিপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

জেলার নাম চাঁপাই নবাবগঞ্জ। সর্ষে আর শালি ধানের আড়ালে দূরে দূরে ছড়ানো গ্রাম— শিবগঞ্জ, বাগদুর্গাপুর, বালিয়াদিঘি। কাঁটাতারের বেড়ার এ পার থেকে ঝাপসা দেখা যায় রাজশাহীর মোবাইল টাওয়ার।

মালদহের মহদিপুর সীমান্তে, সদ্য রূপোলি রং করা কাঁটাতারের ওই বেড়াটুকুই যা ব্যবধান। ও পার-এ পার ছুড়ে ছুড়ে সম্বৎসর কথা চালাচালি। মহদিপুর শ্মশানকালীর পুজোয় সেই রাজশাহী-মালদহ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কাঁটাতারের অনুশাসন এ বার দু-দেশের সেই মিলনেই কাঁটা হয়ে রইল। কেন?

বিএসএফ-এর স্পষ্ট জবাব: উপরওয়ালার নির্দেশ, গেট খোলা যাবে না। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সুতোয় জড়িয়ে গিয়েছে সীমান্তের নিরাপত্তা। মিলন মেলার ছাড়পত্র দেওয়া তাই অসম্ভব।

ও পারের মানুষ জনের প্রবেশ নিষেধ হলেও, মহদিপুরে মেলাটা অন্তত হয়েছে। কোচবিহারের মীরাপাড়া সীমান্তে সেই মেলার উপরেই দাঁড়ি ফেলে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

আর পাঁচটা বছরের মতোই, কালীপুজোর পরের দিন, শুক্রবার, গজা-জিলিপি-সস্তার খেলনা-নাগরদোলা সাজিয়ে মহদিপুরের মাঠে বসেছিল শ্মশানকালীর মেলা। সকাল থেকেই তিয়াসবাড়ি, রামকেলি, কাঞ্চনটাঁড়, গঞ্জ-গ্রাম থেকে ভিড় করেছিলেন কয়েক হাজার গ্রামীণ মানুষ। আলপথ ধরে হাঁটা পথে কিংবা দূরের গ্রাম থেকে ভ্যানরিকশায় মহদিপুর সীমান্তে পৌঁছেছিলেন ও পারের তরুবালা সাহা, ভবতারিণী দত্তরা। হাতের ছোট্ট প্যাকেটে কড়া পাকের খানকতক সন্দেশ কিংবা রাজশাহীর প্রসিদ্ধ ছোট গজা। মহদিপুরের গেট কিন্তু খোলেনি।

বেলা বেড়ে গিয়েছে। হাতের আটপৌরে ঠোঙায় শুকিয়ে গিয়েছে জবা ফুল। কাঁটাতারের বেড়া ধরে কখনও কাকুতি মিনতি কখনও বা সমস্বরে চিৎকার করে বাংলাদেশের ওই প্রান্তিক গ্রামের বাসিন্দারা নাগাড়ে আবেদন করে গিয়েছেন, ‘এক বার অন্তত গেটটা খুলুন স্যার, শ্মশানকালীর পুজো দিয়েই ফিরে আসব।’ টহলদারি বিএসএফ মাথা নেড়ে জানিয়ে দিয়েছে “হুকুম নেহি হ্যায়।”

সকাল থেকে ওই বেড়ার ধারে বসেছিলেন বালিয়াদিঘির ভবতারিণী দত্ত। বলছেন, “আশা ছিল, সকালের কড়াকড়ি অন্তত বিকেলে ঢিলে হবে। এক বার শ্মশানকালীর দেখা পাব।

হল কই!” কাঁটাতারের বেড়া ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন তরুবালা। শেষ বিকেলে তাঁর ছোট্ট সন্দেশের প্যাকেটটা বেড়া উজিয়ে ছুড়ে দিয়ে বললেন, “কী করব মা, এ পার থেকেই পুজোর উপকরণ ছুড়ে দিচ্ছি। ক্ষমা করে দিস মা।” বিকেলের দিকে সেই সব ফুল-মিষ্টিই মাঠ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে মন্দিরে পৌঁছে দিয়েছেন এ পারের গ্রামবাসীরা।

দু-দেশের সম্পর্কের কথা ভেবে এক বারও কী গেট খুলে দেওয়া যেত না? বিএসএফের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “স্থানীয় ব্যাটেলিয়নের কর্মীদের এ ব্যাপারে কী-ই বা করার আছে। তাঁদের যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওঁরা তাই পালন করেছে।” তিনি জানান, বর্ধমান বিস্ফোরণের জেরে এ বার সীমান্তের কোথাও-ই গেট খোলা হয়নি। সরাসরি দিল্লি থেকেই এই নির্দেশ এসেছিল বলে তিনি জানান। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “দু-দেশের সৌহার্দ্যের জন্য এই ধরনের মিলনমেলা ভীষণ জরুরি। এ বার নিরাপত্তার প্রশ্নে সেই অনুমতি না দেওয়া হলেও মিলনমেলা যেন চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া না হয়।”

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, ১৯৬২ সাল থেকে মহদিপুরের এই মেলা হচ্ছে। মেলায় দু-দেশের মেলবন্ধন বাৎসরিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। বিএসএফ জওয়ানদের নজরদারির মধ্যেই ও পারের লোকজন এ পারে এসে সন্ধ্যার মুখে ফিরে যেতেন। পুজো কমিটির সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, “বাংলাদেশের প্রায় দশ হাজারের বেশি মানুষ আজকে পুজো দিতে এসেছিলেন। অনেকে মানত করা পাঁঠাও এনেছিলেন বলি দেবেন বলে। তা আর হল না।”

শুধু মহদিপুর কেন, এ দিনটার জন্য অপেক্ষায় থাকেন কোচবিহারের শীতলকুচির গোলেনাওহাটির মীরাপাড়া সীমান্তের গ্রামগুলিও। এ পারের মীরাপাড়া, শিববাড়ির মতো ও পারের লালমনিরহাট জেলার বারুইপুর, আঁটিবান্ধাও সারা বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। এ বার সেখানে মেলা হয়নি। শীতলখুচির বিডিও সুধাংশু পাইক বলেন, “দেশের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এ বার মেলা করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।”

piyush saha namitesh ghosh india-bangladesh border kali pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy