Advertisement
E-Paper

শিল্পাঞ্চলের নৈরাশ্যেও আশাহত নন সুভাষিণী

ভূগোলটা অচেনা। ইতিহাসে তবু মিল! সেই মিলটুকুই নতুন ময়দানে চুটিয়ে ব্যবহার করতে চাইছেন সুভাষিণী আলি! ছিলেন কানপুরে। এসেছেন ব্যারাকপুরে। এক বার সাংসদও হয়েছেন কানপুর থেকে। উত্তরপ্রদেশের শিল্প-শহরে কাজ করে এসেছেন। উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলেও শ্রমিকদের বড় অংশ হিন্দি ও উর্দুভাষী। ফলে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে বিশেষ সমস্যা হচ্ছে না সিপিএম প্রার্থীর।

রূপসা রায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২১

ভূগোলটা অচেনা। ইতিহাসে তবু মিল!

সেই মিলটুকুই নতুন ময়দানে চুটিয়ে ব্যবহার করতে চাইছেন সুভাষিণী আলি! ছিলেন কানপুরে। এসেছেন ব্যারাকপুরে। এক বার সাংসদও হয়েছেন কানপুর থেকে। উত্তরপ্রদেশের শিল্প-শহরে কাজ করে এসেছেন। উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলেও শ্রমিকদের বড় অংশ হিন্দি ও উর্দুভাষী। ফলে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে বিশেষ সমস্যা হচ্ছে না সিপিএম প্রার্থীর। কিন্তু একের পর এক বন্ধ কারখানা শিল্পাঞ্চলে যে নৈরাশ্য তৈরি করেছে, তার থেকে উদ্ধারের কোনও পথ কি দেখাতে পারবেন প্রয়াত লক্ষ্মী সহগলের কন্যা? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যারাকপুরে। বারবার হতাশ হয়ে বড় প্রত্যাশা রাখছেন না শ্রমিকেরাও।

কানপুরে কাজ করেছেন বলেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারছেন সুভাষিণী। পুরনো অভিজ্ঞতা থেকেই শ্রমিক মহল্লার অন্দরটা অনেকটা চেনা তাঁর কাছে। কিন্তু ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের পরে যখন শিল্পাঞ্চলের শক্ত মাটিই যখন হাতছাড়া বামফ্রন্টের, তখন কত দূর যেতে পারবেন সুভাষিণী?

সুভাষিণী অবশ্য ঘাবড়াচ্ছেন না। কারখানা খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নয়। বরং, কারখানা খোলার জন্য, বেতন, বকেয়া নিয়মিত আদায় করার জন্য শ্রমিকদের হয়ে লড়াই করার কথাই শোনা যাচ্ছে তাঁর মুখে। ২০১০ সালের কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইএসআই, গ্র্যাচুইটি, পিএফ বাবদ চটকল শ্রমিকদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বাকি। বকেয়া টাকার জন্য ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। অর্ধেক মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা। কিন্তু শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, “বাম জমানাতেই তো বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়েছে! এখন বিরোধী রাজনীতি করতে এসে কারখানা খোলার জন্য আন্দোলনের স্লোগান হাস্যকর নয়?”

তবে সুভাষিণীর ব্যাখ্যা, “শিল্পনীতি যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারণ করে, সেখানে রাজ্যে সরকারে থেকে আমাদের কী করার ছিল? বিশেষ করে, সুতো শিল্প ও চটশিল্প অনেকটাই নির্ভরশীল কেন্দ্রের বরাতের উপরে। কিন্তু সে সব পণ্যের বরাত কমিয়ে দিয়ে প্লাস্টিকের জন্য বাজার বাড়ানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য কথা বলা ছাড়া আর কী-ই বা করার আছে?”

স্থানীয় শ্রমিকেরা অবশ্য ভরসা রাখতে পারছেন না কোনও পক্ষের উপরেই। স্থানীয় আইএনটিউসি নেতা সুবোধ ঝা-র বক্তব্য, “আমরা আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারি না! আগের বার দীনেশ ত্রিবেদী এখান থেকে জিতে গেলেন। অথচ কেন্দ্রে চটের বস্তার বরাত নিয়ে একটা কথাও বললেন না!” তারও আগে সিপিএম সাংসদ তড়িৎ তোপদারের বিরাট দাপট ছিল গোটা শিল্পাঞ্চলে। তাতেও কারখানায় কারখানায় শ্রমিকদের সমস্যার যে সুরাহা হয়নি, সে কথাও বলছেন তাঁরা। এ বারের বিজেপি প্রার্থী রুমেশ কুমার হান্ডার প্রশ্ন, “ত্রিবেদী সাহেব তো বলেছিলেন, কারখানার চাবি সব তাঁর পকেটে আছে! কোথায় গেল সে সব? পাঁচ বছরে বারতিনেক এলাকায় এসেছেন!” প্রাক্তন রেলমন্ত্রী হিসাবে পরিচিত হলেও অভিযোগ, পাঁচ বছরে এলাকায় প্রায় দেখাই মেলেনি তৃণমূল সাংসদ দীনেশের। তবে তাঁর দাবি, “কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে অনেক ছোট, মাঝারি হাসপাতাল, কারখানা হয়েছে। মানুষ কাজ পেয়েছেন। চটকল মালিকদের অনেকে বলছেন, তাঁরা কারখানায় কাজ করানোর লোক পাচ্ছেন না!” চটশিল্পের আধুনিকীকরণের কথা তাঁরা বলেছেন বলেও দীনেশ জানাচ্ছেন।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় দেড়শো কারখানা বন্ধ। সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে ব্যারাকপুরের কেলভিন জুটমিল, নৈহাটির কাঁকিনাড়া জুটমিল। টিটাগড়ে লুমটেক্স জুটমিল খোলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা চলছে। সিটু সম্পর্কে শ্রমিকদের মোহভঙ্গ আগেই হয়েছিল। পাঁচ বছর আগে হাওয়া বদলাতে শুরু করায় শ্রমিকেরা ঝুঁকেছিলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র দিকে। কিন্তু তাতে বাস্তবে কোনও পরিবর্তন আসেনি, দেখতে পাচ্ছে শ্রমিক মহল!

ব্যারাকপুর কেন্দ্রে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি যথেষ্ট। সুভাষিণীর দাবি, বাংলার মুসলিমেরা উত্তরপ্রদেশের থেকে ভাল আছেন। একই ভাবে কানপুরের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে তাঁর মন্তব্য, “এখানে তো তবু কিছু কিছু কারখানা খোলা রয়েছে। শ্রমিকেরা ভাল না থাকলেও টিকে রয়েছেন। কানপুরে তো সব কারখানাই বন্ধ!” টিটাগড় জুটমিলের শ্রমিক মহম্মদ আখতারের আক্ষেপ, “দীর্ঘ দিন বকেয়া পিএফ, গ্র্যাচুইটির জন্য লড়াই করেছি। সিপিএমের সময়ে বারবার আক্রান্ত হয়েছি। তৃণমূল সরকারও কিছু করছে না। কারখানা খুলে দেওয়ার পুরনো প্রতিশ্রুতি আমাদের কাছে জলভাত হয়ে গিয়েছে!” সুভাষিণী তবু বলছেন, “কানপুরে লড়াইটা অন্য ছিল। সব কারখানা বন্ধ, সংগঠিত ক্ষেত্র বলেই প্রায় কিছু নেই। কিন্তু এখানে তো দীর্ঘ দিনের বাম-আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। সেটাই আমার বড় শক্তি!”

rupsa roy subhashini ali lok sabha election cpm barrackpore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy