Advertisement
E-Paper

শিল্পের দেখা নেই, আরও ৯ কমিটি গড়ল রাজ্য

সরকার গঠনের এক মাসের মাথায় শিল্পপতিদের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বসে তিনি ‘কোর কমিটি’ গঠনের কথা ঘোষণা করে বলেছিলেন, লগ্নি টানার জন্য দ্রুত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সরকার পিছপা হবে না। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘ডু ইট ইমিডিয়েটলি’। সেই ‘কোর কমিটি’ গড়ার ৩৭ মাস ১৮ দিনের মাথায়, শুক্রবার সেই একই লক্ষ্যে আরও এক গুচ্ছ কমিটি তৈরি করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৪

সরকার গঠনের এক মাসের মাথায় শিল্পপতিদের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বসে তিনি ‘কোর কমিটি’ গঠনের কথা ঘোষণা করে বলেছিলেন, লগ্নি টানার জন্য দ্রুত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সরকার পিছপা হবে না। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘ডু ইট ইমিডিয়েটলি’। সেই ‘কোর কমিটি’ গড়ার ৩৭ মাস ১৮ দিনের মাথায়, শুক্রবার সেই একই লক্ষ্যে আরও এক গুচ্ছ কমিটি তৈরি করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি-দু’টি নয়, এ বারে গড়া হল ন’টি কমিটি। সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তের কথা জেনে এক শিল্পপতির মন্তব্য, “এ রাজ্যে শুধু কমিটিই হয়, কাজ হয় না!”

অগস্ট মাসের মাঝামাঝি প্রশাসন ও শিল্প মিলিয়ে ৬০ জনের বেশি প্রতিনিধি নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন মমতা। পাঁচ দিন সেখানে কাটিয়ে ফেরার কয়েক দিনের মধ্যে নবান্নে ‘ফলো আপ’ বৈঠক করেন তিনি। সিঙ্গাপুর-সফর যাতে শুধু আলোচনার পর্যায়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই ছিল সেই বৈঠক। সে দিনই ঠিক হয়, পরের বৈঠকটি হবে ৫ সেপ্টেম্বর। সেই মতো এ দিন বিকাল ৪টেয় বৈঠক বসে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আলোচনায় সিঙ্গাপুর নিয়ে বিশেষ কথাই হয়নি। তা হলে বৈঠকে কী হল? শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের কথায়, ‘বেঙ্গল ব্র্যান্ড’-এর প্রচার (জানুয়ারি মাসে রাজারহাট ইকো-ট্যুরিজম পার্কে হওয়ার কথা) করার পাশাপাশি রাজ্যে বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রেও নতুন কমিটিগুলি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে।”

শিল্পমন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ দিন বেশ কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিল্পের জন্য ইতিমধ্যে একটি কোর কমিটি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তার মাথায় রয়েছেন। এ বারে নতুন একটি ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ তৈরি করা হল। এর চেয়ারম্যান হবেন মুখ্যসচিব, কো-চেয়ারম্যান শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েনকা।

এখানেই শেষ নয়, স্টিয়ারিং কমিটির নীচে আটটি ‘সেক্টোরাল কমিটি’ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। এই কমিটিগুলির চেয়ারম্যান হবেন সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব বা অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, কো-চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কোনও শিল্পপতি।

কমিটিগুলি কী কাজ করবে?

শিল্পমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “বিভিন্ন শিল্পের জন্য নীতি নির্ধারণ করে সরকারকে নানা পরামর্শ দেবে কমিটি। এই সব পরামর্শ সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে দেখবে।” বৈঠকে উপস্থিত শিল্পপতিদের একাংশ জানিয়েছেন, সেক্টোরাল কমিটির সুপারিশ যাবে স্টিয়ারিং কমিটির কাছে। স্টিয়ারিং কমিটি সেই সুপারিশ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কোর কমিটিকে জানাবে।

শিল্পমন্ত্রীর দাবি, “শিল্প ক্ষেত্র ধরে ধরে আলাদা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত দেশের মধ্যে এই প্রথম। এখানে সরকার ও শিল্পমহলের প্রতিনিধিরা এক সঙ্গে বসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করবে।”

শিল্প দফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী যখন কোর কমিটি গঠন করেছিলেন, তখন বলা হয়েছিল ১৫ দিন অন্তর বৈঠক হবে। গত তিন বছরে শিল্পমহলের অভিজ্ঞতা হল, প্রথম দিকে উৎসাহ নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হলেও দিন যত এগিয়েছে কোর কমিটির বৈঠকের সংখ্যা তত কমেছে। আবার, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য গঠিত পৃথক কমিটির বৈঠক শেষ কবে হয়েছে, তা কেউ বলতেই পারছেন না! এই প্রেক্ষাপটে এ দিন শিল্পমন্ত্রী জানান, সেক্টোরাল কমিটি ১৫ দিন অন্তর, স্টিয়ারিং কমিটি এক মাস অন্তর এবং কোর কমিটি তিন মাস অন্তর বৈঠকে বসবে।

বণিকসভার একাংশের বক্তব্য, শিল্প গড়তে এক লপ্তে অনেকটা জমি প্রয়োজন। কিন্তু সরকার তা অধিগ্রহণ করে দেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। এমনকী, বিনিয়োগকারীরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে জমি কিনতে চাইলেও রাজ্য মধ্যস্থতা করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ভূমি আইনের ১৪ওয়াই ধারায় ঊর্ধ্বসীমার বেশি জমি রাখার জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হলেও জমির ঊর্দ্ধসীমা আইন বাতিল করার কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের। এই সরকার বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (এসইজেড) গঠনেরও বিরুদ্ধে। পাশাপাশি নতুন সরকারের আমলে শিল্পের উপযুক্ত পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজও তেমন হয়নি। এর সঙ্গে বিষফোঁড়ার মতো ছড়িয়ে পড়েছে মূলত শাসকগোষ্ঠীর নেতৃত্বে সিন্ডিকেট রাজের তাণ্ডব এবং তোলা আদায়। যার জেরে চালু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মালিকরা ভয়ে অন্য

রাজ্যে পালাচ্ছেন। অনেকে আবার কারখানা চালুই করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে এক নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে।

এই অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এত কমিটি দিয়ে হবেটা কী? সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানই বলছে, গত তিন বছরে রাজ্যে কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে। কয়েকটি শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলি। বাদবাকি সবটাই শুধু অন্ধকারের ছবি। কোনও বড় শিল্প নেই, বরং রাজ্যের শিল্প পরিবেশ নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে। প্রশাসনের একটি অংশের মতে, এই কারণেই তিন বছর আগে কোর কমিটি তৈরি করেও কিছু করা যায়নি। নতুন করে একগুচ্ছ কমিটি করেও কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই।

তবু এ দিন বৈঠক শেষে শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েনকা বলেন, “শিল্পমহলকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এই প্রথম কোনও সরকার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদার হওয়ার সুযোগ দিল।”

তাঁর কথায়, “বাংলায় শিল্প গড়ার যে সুবিধা, তা তুলে ধরার পাশাপাশি নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সুপারিশ করবে কমিটিগুলি।” তিনি জানান, আগামী ৭-৮ জানুয়ারি কলকাতায় আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলন (বিশ্ব বাংলা সম্মেলন) হবে। সেখানে রাজ্যের শিল্পপতিরা পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করার ক্ষেত্রে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন। ওই সম্মেলনে প্রবাসী বাঙালি শিল্পপতিরা যেমন আসবেন, তেমনই থাকবেন বহুজাতিক সংস্থার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারেরাও। সঞ্জীব বলেন, “১১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে সিনার্জি বিজনেস সেন্টারের উদ্বোধন করবেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য কলকাতায় দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।” শিল্পপতি সুমিত মজুমদার জানান, “সেক্টোরাল কমিটি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট শিল্প ক্ষেত্রে নিজস্ব সমস্যা সরাসরি সরকারের নজরে আনা যাবে।”

ফাঁপরে পড়েছেন শিল্প দফতরের একাধিক কর্তা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, সরকারের নীতি যেখানে আগে থেকেই ঠিক হয়ে রয়েছে, সেখানে কমিটির সুপারিশ কোন কাজে লাগবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।

industrial policy west bengal industrial committee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy