Advertisement
E-Paper

সিদ্ধার্থকে দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেল মুকুলের

সকাল থেকেই মেঘলা থাকায় শীতটা একটু কম মালুম হচ্ছিল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাই এসেছিলেন ফিনফিনে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে। তার ওপর এম্ব্রয়ডারি করা অফ হোয়াইট শাল। মুখে উদ্বেগের ছাপ থাকলেও অতিথিদের সঙ্গে মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই কথা বলছিলেন। কিন্তু মিনিট দশেক পরেই যেন বিগড়ে গেল ‘মুড’টা।

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:২৫

সকাল থেকেই মেঘলা থাকায় শীতটা একটু কম মালুম হচ্ছিল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাই এসেছিলেন ফিনফিনে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে। তার ওপর এম্ব্রয়ডারি করা অফ হোয়াইট শাল। মুখে উদ্বেগের ছাপ থাকলেও অতিথিদের সঙ্গে মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই কথা বলছিলেন।

কিন্তু মিনিট দশেক পরেই যেন বিগড়ে গেল ‘মুড’টা।

মুখে কিছু বললেন না। দূর থেকে এক বার চোখ বুলিয়ে নিয়ে মুখ ফিরিয়ে রাখলেন! দুম করে হয়তো মনে পড়ে গেল ৩০ নভেম্বর কলকাতায় বিজেপির সমাবেশ মঞ্চটা। আর সেই বিতর্কিত স্লোগান, “২০১৫ সালে ভাগ মুকুল ভাগ!”

ইদানীং পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে খুবই পরিচিত মুখ, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। স্লেট রঙের বন্ধ-গলায় তিনি এসে পড়তেই যে মুকুল রায় কিছুটা অস্বস্তিতে, উপস্থিত অনেকেরই তা বুঝতে অসুবিধা হল না। সিদ্ধার্থের শরীরী ভাষায় তখন কিন্তু আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছে!

প্রজাতন্ত্র দিবসের অপরাহ্নে প্রতি বছরই রাইসিনা প্রাসাদের উত্তরের উঠোনে চা-চক্রের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি। পোশাকি সরকারি ভাষায় যাকে ‘অ্যাট হোম’ বলা হয়। ঘরোয়া পরিবেশে রাজনীতিক, শিল্পী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিল্পপতিরা চায়ের কাপ হাতে দিব্য আড্ডা দেন সেখানে। সৌজন্য বিনিময় হয়।

এ বারের ‘অ্যাট হোম’-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সস্ত্রীক উপস্থিত থাকায় নিরাপত্তার আঁটুনি ছিল একটু বাড়াবাড়ি রকমের। উঠোনের এক দিকে ঘেরাটোপের মাঝে ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য, সনিয়া গাঁধী এবং বারাক ও মিশেল ওবামা। তাঁদের ঘিরে অতিথিদের উৎসাহ থাকলেও কথোপকথনের সুযোগ ছিল না। তারই মধ্যে বঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নজর কাড়লেন দু’টি চরিত্র। মুকুল ও সিদ্ধার্থনাথ।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই মুকুলকে ডেকেছে। মুকুলবাবু নানা কারণ দেখিয়ে দিল্লিতে বসে রয়েছেন। ক’দিন আগে থেকেই সাংবাদিকদের বলছিলেন, সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘অ্যাট হোম’-এ যেতে হবে বলেই তিনি দিল্লিতে রয়েছেন। হয়তো একটা সাহসী মুখই দেখাতে চাইছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বোঝাতে চাইছিলেন, তিনি ঠিকই আছেন। চায়ের আসরে শুরুর দিকটাও ঠিকই ছিল। কিন্তু আচমকা সিদ্ধার্থর মুখোমুখি হওয়ার জন্য সম্ভবত প্রস্তুত ছিলেন না।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, বিজেপি নেতারা যে ওখানে থাকবেন, তা কি জানতেন না মুকুলবাবু? তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, নিশ্চয়ই জানতেন। এ-ও জানতেন, মোদী বা অমিত শাহর সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রশ্ন নেই। তাঁরা থাকবেন নিরাপত্তার ঘেরাটোপের মধ্যে। আর বিজেপির অন্য নেতাদের সঙ্গে আপাত ভাবে মুকুলবাবুর কোনও সমস্যা নেই বলেই দাবি করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। যেমন ওই চা-চক্রেই মুকুলবাবুর সঙ্গে বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেনের সৌজন্য বিনিময় হয়। কারও তরফেই কোনও অস্বস্তি চোখে পড়েনি।

কিন্তু সিদ্ধার্থের ব্যাপারটা অন্য। রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর স্লোগান এত দিনে ‘এপিক’ হয়ে গিয়েছে। এর পরেও উভয়ের মধ্যে স্বাভাবিক কথাবার্তা হতে পারে কি?

মাত্র ফুট তিনেকের ব্যবধানে থেকেও কথা যে হল না, দেখাই গেল। অথচ এটাই যে রাজনীতির দস্তুর, তা কিন্তু নয়। প্রকাশ্যে তীব্র বাদানুবাদের পর সংসদের সেন্ট্রাল হলে রাজনীতিকদের গলায় গলায় আড্ডা ও খোশগল্পের ছবি আখছার দেখা যায়। রাজনীতি আলাদা, ব্যক্তিগত জনসংযোগ আলাদা। উদাহরণ দিতে গেলে প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি তথা অধুনা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর কথা বলা যায়। সম্প্রতি গডকড়ী বলেছিলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধ থাকলেও কংগ্রেসের বহু নেতার সঙ্গে তাঁর পারিবারিক বন্ধুত্ব রয়েছে। এমনকী কংগ্রেসের এক নেতা উইলে তাঁকে সাক্ষীও করেছেন।

তেমনটা অবশ্য গত কাল ঘটল না। রাজনৈতিক তিক্ততার রেশ যেন বাষ্পের মতো ঘোরাফেরা করল রাইসিনার উঠোনেও। মুকুল রায় সেখানেও বললেন, “সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার ব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ বা কাগজপত্র নেই। তবু জোর করে রাজনৈতিক ভাবে আমার বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।”

আবার সিদ্ধার্থ জানালেন, “দোষীরা কেউই পার পাবেন না।” সিদ্ধার্থকে প্রশ্ন করা হল, পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আপনি। মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলবেন না? জবাব এল, “উনি এসে আমার সঙ্গে কথা বললে নিশ্চয়ই বলব। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কোনও কথা নয়।” ২৪ ঘণ্টা পর আজ অবশ্য সিদ্ধার্থ দাবি করেছেন, মুকুল রায় গত কাল তাঁকে দেখে এক বার সৌজন্যমূলক মাথা নেড়েছিলেন। দূর থেকে প্রতি-ইঙ্গিত করেছেন তিনিও। তা ছাড়া তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের সঙ্গেও তাঁর শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সিদ্ধার্থ।

কলকাতায় শ্বশুরবাড়ি সিদ্ধার্থর। রাষ্ট্রপতি ভবন ছেড়ে বেরনোর সময় বললেন, “বাংলাটা পরিষ্কার বুঝতে পারি। একটু একটু বলতেও শিখেছি। বিজেপি আসছে, মমতা ভাসছে।”

sankhadeep das mukul roy siddharthnath singh cbi saradha scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy