Advertisement
E-Paper

সুদীপ্তর টাকা বাংলাদেশি মুদ্রায় বদলে নেন প্রশান্ত

জমি-বাড়ি কেনার জন্য সুদীপ্ত সেন তাঁর সারদা গার্ডেন্সের ম্যানেজার প্রশান্ত নস্করকে ১২ কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন বলে আদালতে জানাল ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। গোয়েন্দাদের দাবি, প্রাথমিক জেরায় রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রের অনুচর প্রশান্ত জানিয়েছেন, জমি-বাড়ি কেনাবেচার পরেও সুদীপ্তর দেওয়া টাকার একটা বড় অংশ তাঁর কাছে ছিল। সারদা-তদন্ত শুরু হতেই প্রশান্ত সেই টাকা দিয়ে কয়েক লক্ষ ডলার কেনেন। সেই ডলার পরে বাংলাদেশি মুদ্রায় বদলে নেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫০
ইডির অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন প্রশান্ত নস্কর।

ইডির অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন প্রশান্ত নস্কর।

জমি-বাড়ি কেনার জন্য সুদীপ্ত সেন তাঁর সারদা গার্ডেন্সের ম্যানেজার প্রশান্ত নস্করকে ১২ কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন বলে আদালতে জানাল ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। গোয়েন্দাদের দাবি, প্রাথমিক জেরায় রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রের অনুচর প্রশান্ত জানিয়েছেন, জমি-বাড়ি কেনাবেচার পরেও সুদীপ্তর দেওয়া টাকার একটা বড় অংশ তাঁর কাছে ছিল। সারদা-তদন্ত শুরু হতেই প্রশান্ত সেই টাকা দিয়ে কয়েক লক্ষ ডলার কেনেন। সেই ডলার পরে বাংলাদেশি মুদ্রায় বদলে নেন।

কিন্তু কেন তিনি এই কাজ করেছিলেন? গোয়েন্দাদের দাবি সারদা গোষ্ঠী থেকে হাতানো টাকার হদিস যাতে তদন্তকারীরা না পান, সেটাই লক্ষ্য ছিল প্রশান্তর। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ব্যাঙ্কের লেনদেনের হিসেব থেকে। সেখান থেকেই গোয়েন্দারা প্রাথমিক সূত্র পান, প্রশান্ত সারদার টাকা নয়ছয় করেছেন। ইডি-র সন্দেহ বিদেশের একটি ব্যাঙ্কেও সারদা-র টাকা সরিয়েছেন প্রশান্ত। খোঁজখবরের জন্য সেই ব্যাঙ্কেও যোগাযোগ করছেন তদন্তকারীরা।

তদন্তে অসহযোগিতা ও ভুল তথ্য দিয়ে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে মদনের কল্যাণে বাস কন্ডাক্টার থেকে বিপুল বৈভবশালী হয়ে ওঠা প্রশান্তকে শুক্রবার গ্রেফতার করে ইডি। শনিবার তাঁকে আদালতে হাজির করিয়ে আরও জেরার জন্য পাঁচ দিন নিজেদের হেফাজতে চান ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র। তবে বিচারক কাল, সোমবার পর্যন্ত প্রশান্তকে ইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইডি সূত্রের খবর, সারদা গার্ডেন্স-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর ও তার লাগোয়া এলাকায় ‘জমি ব্যাঙ্ক’ তৈরি করতে সুদীপ্ত সেন প্রশান্তকে নির্দেশ দেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। সেই সব জমির কিছুটা প্রশান্ত কিনেছিলেন স্থানীয় কৃষক বা জমি মালিকদের চাপ দিয়ে, আর বাকিটা কেনা হয়েছিল অবৈধ উপায়ে। কখনও জমির পড়চায় গরমিল করে, কখনও বা জমির চরিত্র বদলে দিয়ে। এমনকী, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশকে হাত করে প্রশান্ত খাস জমিও কিনিয়ে দিয়েছেন সারদা গোষ্ঠীকে যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

তবে, ইডি সারদা-র সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরেও প্রশান্ত যে ভাবে তাঁর কাছে থাকা সুদীপ্ত সেনের ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ ব্যবহার করে সেই সম্পত্তির একাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন, তদন্তকারীরা তাতে বিস্মিত। ইডি-র দাবি, সারদা গোষ্ঠীর টাকায় জুলুম খাটিয়ে কিংবা অবৈধ ভাবে জমি-জায়গা কেনা-বেচার কাজে আরও কয়েক জনের সাহায্য নিয়েছিলেন প্রশান্ত। জেরায় তাঁদের নামও তিনি ইডি-কে জানান। তাদেরও তলব করতে চলেছেন তদন্তকারীরা।


সিবিআই দফতরের বাইরে সৃঞ্জয় বসু। শনিবার।

প্রশান্ত তাঁর মেয়ে ও নিজের নামে তিনটি সংস্থা খুলে সারদার টাকা সরান বলে অভিযোগ ইডি-র। গোয়েন্দাদের দাবি, সেই সব সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসেব পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, সেগুলি থেকে ঘুরপথে সুদীপ্ত সেনের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা পাঠানো হয়েছে।

প্রশান্ত গ্রেফতার হয়েছেন জেনে বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা আদালত চত্বরে হাজির হন। তাঁর অভিযোগ, প্রশান্ত জোর করে তাঁর প্রায় চার কাঠা জমি হাতিয়েছেন। ওই মহিলার দাবি, বিষ্ণুপুর এলাকায় তাঁর মতো অনেকেই রয়েছেন, প্রশান্তর হাতে যাঁরা সব খুইয়েছেন। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে ইডি-র এক অফিসার ওই মহিলাকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেন।

আবার এ দিনই সল্টলেকের সিবিআই দফতরে হাজির হন তৃণমূলের সদস্যপদ ও রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে সদ্য ইস্তফা দেওয়া সৃঞ্জয় বসু। বেলা সওয়া ১০টার কিছু পরে ঢোকেন তিনি। ঘণ্টা দু’য়েক পরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের জানান, সিবিআই হাজির হতে বলায় এসেছিলেন। তবে তদন্তকারীদের সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে, সৃঞ্জয় তা জানাননি। সিবিআই সূত্রের খবর, সারদা তদন্তে নতুন কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেগুলি সম্পর্কে সৃঞ্জয়ের বক্তব্য জানার জন্যই তাঁকে এ দিন ডেকে পাঠানো হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সৃঞ্জয়কে জামিনে মুক্তি দেয় আলিপুর আদালত।

ছবি:শৌভিক দে

cid sudipta sen prasanta naskar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy