Advertisement
E-Paper

সুমিত মামলায় অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারাও জুড়ল পুলিশ

হাওড়ার হোটেল মালিক সুমিত নাহার মৃত্যুর জন্য তৃণমূলের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে মন্ত্রী-সান্ত্রী অনেকেই তাঁর পারিবারিক সমস্যাকে দায়ী করেছিলেন। এ-ও বলা হয়েছিল, বহু দিন হাওড়ায় হোটেল ব্যবসা চালানোয় হুমকি-টুমকির মতো ব্যাপার সুমিতবাবুর গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০৩:২৩
সুমিত নাহার বাড়ির পথে অধীর চৌধুরী। বাগুআটিতে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

সুমিত নাহার বাড়ির পথে অধীর চৌধুরী। বাগুআটিতে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

হাওড়ার হোটেল মালিক সুমিত নাহার মৃত্যুর জন্য তৃণমূলের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে মন্ত্রী-সান্ত্রী অনেকেই তাঁর পারিবারিক সমস্যাকে দায়ী করেছিলেন। এ-ও বলা হয়েছিল, বহু দিন হাওড়ায় হোটেল ব্যবসা চালানোয় হুমকি-টুমকির মতো ব্যাপার সুমিতবাবুর গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বুধবার পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হুমকি, তোলা আদায়ের পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর ধারাতেও মামলা রুজু করল।

স্বভাবতই এ বার এই প্রশ্নটাই জোরালো হচ্ছে যে গত ২০ জুন তাঁকে মারধরের পরে হোটেল ম্যানেজার আশিস মান্না যখন গোলাবাড়ি থানায় অভিযোগ করেছিলেন, তখনই পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখল না কেন? এবং গোলাবাড়ি থানার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজ্যের একাধিক পুলিশকর্তাও। তাঁদের বক্তব্য, যখন আশিসবাবু থানায় নালিশ জানিয়েছিলেন, তখন পুলিশ সক্রিয় হওয়ার বদলে ওঁকেই অভিযুক্ত দীপক সাউয়ের সন্ধান দিতে বলেছিল। এটা অবশ্যই কর্তব্যে গাফিলতির পরিচয়।

ওই পুলিশ কর্তারাই বলছেন, “অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করে মামলায় প্রথমেই ভারী ধারা জুড়ে দেওয়া উচিত। তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে প্রয়োজনে তা বাতিল করা যেতে পারে। কিন্তু শুরুতেই যদি অপেক্ষাকৃত হালকা ধারা জুড়ে অভিমুখ নির্ধারণের চেষ্টা হয়, তা হলে তদন্ত মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।”

হাওড়া কমিশনারেটের তরফে অবশ্য বুধবারেও দাবি করা হয়েছে, শীঘ্রই তাঁরা তদন্তের কিনারা করে ফেলবেন। দুই মূল অভিযুক্ত দীপক সাউ ও রিয়াজ আহমেদ ধরা পড়বে। হাওড়া পুলিশের এক কর্তা এ দিন বলেন, “মঙ্গলবারেও দীপকের বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।” স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, অভিযুক্ত দু’জনেই যখন হোটেল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা এবং সেটা থানা থেকেও খুব একটা দূরে নয়, তখন দীপকের বাড়িতে পৌঁছতে পুলিশ তিন দিন সময় নিল কেন? হোটেলকর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, দীপক শাসক দলের কর্মী হওয়ার সুবাদেই কি পুলিশ তাঁকে ধরতে গা করছে না?

এ দিনই কৃষ্ণা রাও নামে ওই হোটেলের এক প্রাক্তন ম্যানেজারকে ডেকে পাঠিয়েছিল বাগুইআটি থানার পুলিশ। আদতে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও বহু দিন হাওড়ার নানা হোটেলে কাজ করার সুবাদে ওই এলাকার অনেককে চিনতেন তিনি। পুলিশ জানাচ্ছে, দীপক ও রিয়াজের সঙ্গে কৃষ্ণার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হোটেল ব্যবসায় যুক্ত একাধিক ব্যক্তিও পুলিশকে জানিয়েছেন সে কথা। পুলিশ জানতে পেরেছে, মাসখানেক আগে কৃষ্ণা রেলের টিকিট পরীক্ষকের চাকরি পেয়ে জামশেদপুরে চলে গিয়েছিলেন। তবে হোটেল ম্যানেজারকে মারধরের দিন তিনি হাওড়াতেই ছিলেন। পুরনো কাজের সূত্র ধরে থাকতেন সুমিতবাবুর হোটেলেই। স্থানীয় কিছু লোককে জেরা করে তদন্তকারী অফিসারেরা জেনেছেন, ২২ জুন রাতে কৃষ্ণাকে ওই হোটেলের সামনে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল। ঘন ঘন মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বলতেও দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সেই রাতে কৃষ্ণা কার কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন তার হদিস পেতে পুলিশ কল-লিস্ট খতিয়ে দেখছে। পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, সুমিতবাবুর মোবাইলের কল-লিস্টও। তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, সুমিতবাবুর মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক আগে তাঁর মোবাইলে চার বার ফোন এসেছিল। মৃতের মা মঞ্জু নাহা অভিযোগ করেছেন, তার সবই ছিল

হুমকি-ফোন। ওই ফোন পেয়েই সুমিতবাবু আরও ভীত হয়ে পড়েন। ওই পুলিশকর্তার কথায়, “ফোনগুলো কে করেছে জানা গেলে তদন্ত অনেকটাই এগোবে।”

এ দিন দুপুরে সুমিতবাবুর বাড়ি গিয়ে আধঘণ্টা তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বাইরে বেরিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ প্রথমেই সক্রিয় হলে এমন ঘটনা ঘটত না। মঞ্জুদেবীর প্রতিবাদের ফলেই সবাই প্রকৃত ঘটনা জানতে পারল।” গোলাবাড়ি থানার সামনে দুপুরেই বিক্ষোভ দেখায় হাওড়া বিজেপি। বিকেলের দিকে মঞ্জুদেবীর বাড়িতে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র, সিপিএম নেত্রী ভারতী মুৎসুদ্দি ও কামদুনি স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। মঞ্জুদেবী বলেন, “আমি নিজেই হোটেল চালাব। শাক-ভাত খেয়ে থাকব, কিন্তু কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নেব না।”

sumit naha murder case howrah hotel owner
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy