Advertisement
E-Paper

সারদায় প্রভাবশালী কারা, খুঁজবে সিবিআই

সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের অভিমুখ কী হবে, সুপ্রিম কোর্টই তা কার্যত বেঁধে দিয়েছিল। এবং সেই অভিমুখকে ভিত্তি করেই এফআইআর দায়ের করল সিবিআই। সারদা-কাণ্ডে কারা লাভবান হল, তা নিয়ে রাজ্য পুলিশ (সিট) কোনও তদন্ত করেছে কি? মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আগে রাজ্যের কৌঁসুলিদের কাছে তা জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। সিবিআইয়ের এফআইআরে ইঙ্গিত, ‘লাভবানদের’ খুঁজে বার করার চেষ্টা তারা চালাবে।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০৩:৪১

সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের অভিমুখ কী হবে, সুপ্রিম কোর্টই তা কার্যত বেঁধে দিয়েছিল। এবং সেই অভিমুখকে ভিত্তি করেই এফআইআর দায়ের করল সিবিআই।

সারদা-কাণ্ডে কারা লাভবান হল, তা নিয়ে রাজ্য পুলিশ (সিট) কোনও তদন্ত করেছে কি? মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আগে রাজ্যের কৌঁসুলিদের কাছে তা জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। সিবিআইয়ের এফআইআরে ইঙ্গিত, ‘লাভবানদের’ খুঁজে বার করার চেষ্টা তারা চালাবে। সারদা-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর দায়ের করা এফআইআরে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ‘সুদীপ্ত সেন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে আঁতাঁত করে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। গোটা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় এবং আর্থিক প্রতারণার ঘটনায় প্রভাবশালী ওই সব ব্যক্তির ভূমিকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

সারদা-সহ ৪৪টি অর্থলগ্নি সংস্থার আর্থিক দুর্নীতির তদন্তভার গত ৯ মে সিবিআইয়ের হাতে সঁপেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর ২৫ দিন পরে, গত ৪ জুন সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তিনটি এফআইআর দায়ের করে। তদন্তকারীদের বক্তব্য: মাঝের পঁচিশ দিন ধরে তাঁরা সারদা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কথা বলেছেন নানা এজেন্সির নানা অফিসারের সঙ্গে। যাঁদের মধ্যে আছেন রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর অন্যতম প্রধান তথা বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ, সারদা মামলার বিভিন্ন তদন্তকারী অফিসার (আইও), কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং গুরুতর প্রতারণা তদন্তকারী সংস্থা (এসএফআইও)-র কর্তাব্যক্তিরা। সারা দেশে ব্যুরোর বিভিন্ন শাখা থেকে এ জাতীয় আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে অভিজ্ঞ অফিসারদের নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে সিবিআই। সেটা ছিল ১২ মে।

এর পরে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে সব তথ্য যাচাই করে, রীতিমতো আটঘাট বেঁধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সারদা-মামলায় যুক্ত এক প্রবীণ আইনজীবীর কথায়, “এ ধরনের তদন্তে এফআইআরের গুরুত্ব অপরিসীম। সিবিআইয়ের রুজু করা এফআইআরের প্রতিটা শব্দ বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।” তাঁর মতে, গোটা ঘটনার পরিকল্পনা ও প্রতারণায় ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের ভূমিকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই সিবিআই প্রাথমিক তদন্তে মনে করেছে। তাই এটাই তদন্তের অভিমুখ। তদন্তকারীদের মূল কাজ হবে, ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ ওই ব্যক্তিরা কারা, তা খুঁজে বার করা। এবং দেখা, ওঁরা কী ভাবে ছক কষে প্রতারণায় সামিল হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সারদা-কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ বারংবার শাসক দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন। সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বারে তদন্তের সময় বিভিন্ন সময়ে ওঠা সেই সব অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

পাশাপাশি সুদীপ্তকে ব্যবসা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন, এমন অফিসারদেরও খোঁজ চলবে। সিবিআইয়ের এফআইআরে বলা হয়েছে, সুদীপ্ত সেনকে বেআইনি অর্থলগ্নির কারবার বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং সেবি-র অফিসারদের একাংশ। সুদীপ্ত সেনের ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত লুকিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে বেশ কিছু অডিটরও যুক্ত ছিলেন। প্রাথমিক তথ্য জোগাড় হলে ওঁদেরও জেরা করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

বস্তুত সারদা-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ বারবার দাবি করেছেন যে, কেলেঙ্কারিতে ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ কিছু লোকজনের হাত আছে। বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীর নামও তিনি এ প্রসঙ্গে টেনেছেন। জেল থেকে গোপনে ইডি-র অফিসে পাঠানো চিঠিতে এমনই কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের তদন্তকারীরা ওই সব ‘প্রভাবশালী’কে আড়াল করার জন্য এক বছর ধরে তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করার কাজে লিপ্ত। ওঁদের সম্পর্কে তিনি যাতে মুখ না-খোলেন, সে জন্য তাঁকে আদালতে গোপন জবানবন্দিও দিতে দেওয়া হয়নি এই অভিযোগ করে কুণাল চিঠিতে লিখেছেন, জবানবন্দির আবেদন প্রত্যাহার করে নিলে তাঁকে নতুন করে মামলায় জড়ানো হবে না, ঘনিষ্ঠদের হয়রানও করা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। যার ভিত্তিতে তিনি আবেদন ফিরিয়েও নেন। তবু তাঁকে নিত্য দিন হেনস্থা করা হচ্ছে।

তাই এখন তিনি আবার সব কথা খুলে বলতে চেয়ে ইডি-কে চিঠি লিখেছেন বলে জানিয়েছেন কুণাল। উল্লেখ্য, সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনও সিবিআই-কে লেখা তাঁর প্রথম অভিযোগের চিঠিটির কথা পরে অস্বীকার করেন। সিবিআই-কে তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন ২০১৩-র এপ্রিলে, গা ঢাকা দেওয়ার ঠিক আগে। তাতে তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রের কিছু ‘প্রভাবশালী’র নাম উল্লেখ করে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছিলেন। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার পরে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তিনি কোর্টে জানিয়ে দেন, চিঠির সই তাঁর নয়। এ-ও বলেন, রাজ্য পুলিশ তদন্ত করছে, সিবিআই দরকার নেই।

পাশাপাশি ইডি কিন্তু অভিযোগ করে, রাজ্য পুলিশের তদন্তে বিস্তর খামতি রয়েছে। বাগুইআটি-বেহালা থেকে সুদীপ্তের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি ও প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎকে গ্রেফতার করে ইডি। সল্টলেকের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে একটি লকারেরও খোঁজ পায় তারা। যদিও ইডি’র আগে পুলিশই সেটি খুলে ফেলেছিল।

সারদা তদন্তে রাজ্য পুলিশের এ হেন ভূমিকাই সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনার মুখে পড়েছে। সর্বোচ্চ আদালত বারবার প্রশ্ন করেছে, এই কেলেঙ্কারিতে কারা লাভবান? এবং রাজ্য জবাব দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এর পরেই সিবিআই-তদন্তের নির্দেশ। প্রসঙ্গত, সিবিআই ডিরেক্টর রঞ্জিত সিন্হা ইতিমধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করলে মোদী তাঁকে সর্বক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষাপটে দিল্লি ও রাজ্য প্রশাসনের একাংশের অনুমান, ‘খাঁচার তোতা’ তকমা ঝেড়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার পথে সিবিআই এ বার সচেষ্ট হবে।

যার ছাপ পড়তে পারে সারদা-তদন্তেও।

shibaji dey sarkar cbi would investigate involvement of influential people in saradha case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy