Advertisement
E-Paper

সিল্ক হাব তৈরির তোড়জোড় চলছে শ্রীরামপুরে

হুগলির শ্রীরামপুরে সিল্ক হাব তৈরি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার বলছে, চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পের শিলান্যাস করা হবে। তবে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর এখনও জমি হস্তান্তর করেনি সংশ্লিষ্ট দফতরের হাতে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া চলছে।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৮:৫৭

হুগলির শ্রীরামপুরে সিল্ক হাব তৈরি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার বলছে, চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পের শিলান্যাস করা হবে। তবে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর এখনও জমি হস্তান্তর করেনি সংশ্লিষ্ট দফতরের হাতে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া চলছে।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, শ্রীরামপুরের পাশাপাশি বেলুড়, খড়্গপুরের কাছে খাসজঙ্গল, বোলপুর, মালদহ এবং বানারহাটেও একই ধরনের সিল্ক হাব তৈরি করা হবে। শ্রীরামপুরের মাহেশ মৌজায় ৫০ একরেরও বেশি জমিতে ওই শিল্প তালুক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। শ্রীরামপুর এবং বৈদ্যবাটি পুর-এলাকায় শ’দুয়েক সিল্ক প্রিন্টের ছোটবড় কারখানা রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার লোক ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত। শিল্পতালুক হলে সবাইকেই এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে। শ্রীরামপুরে মল্লিকপাড়া লাগোয়া জায়গায় সরকারি খাস জমি ওই প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার।

রাজ্য ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের চেয়ারম্যান সব্যসাচী বাগচি বলেন, “রাজ্যের মোট ৬টি জায়গায় এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকা খরচ ধার্য করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০১৫ সালের মধ্যে সব ক’টি কাজই শেষ করা।” শ্রীরামপুরের হাবটির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, “ওই জমি এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে খুব শীঘ্রই আমরা তা হাতে পেয়ে যাব।”

দফতরের অফিসারদের বক্তব্য, শ্রীরামপুর-বৈদ্যবাটিতে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে এখানে কাজ হয়। আধুনিক ধারণার অভাবে এখানকার তৈরি কাপড় বাজারে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে বেঙ্গালুরু, সুরাট বা বেনারসের মতো রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারেননি এখানকার ব্যবসায়ীরা। তন্তুজের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও বাইরের কাপড়ে ছাপার ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল থাকে। ওই দফতর সূত্রে খবর, ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিন-সহ আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি বসিয়ে এই সমস্ত সিল্ক হাবে কাজ হবে। তন্তুজ, মঞ্জুষা বা খাদির মতো সংস্থা এখানে কাজ করাতে পারবে। বাইরের বাজারেও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের কদর বাড়বে। প্রস্তাবিত ওই শিল্প তালুকে শিল্পকাজের প্রদর্শনীর জন্য অডিটোরিয়াম হবে। বাইরের লোকজনের জন্য গেস্ট হাউজ হবে। শ্রীরামপুরে সিল্প প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা অনেক পুরনো। রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন টেক্সটাইল টেকনোলজি কলেজও আছে এই শহরে।

শ্রীরামপুর সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চিফ এক্সিকিউটিভ পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, “ওই প্রকল্প হলে এখানকার শাড়ি, সালোয়ার, বিছানার চাদর, জানলা, দরজার পর্দা-সহ নানা জিনিস বাজারে ছড়িয়ে পড়বে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল হবে। সবচেয়ে বড় কথা প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।” সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ বণিকের বক্তব্য, “ওই হাব তৈরি হলে শিল্পটা বাঁচবে। নইলে অন্য রাজ্যের তুলনায় পাল্লা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে আমাদের পক্ষে।”

শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, রাজ্যধরপুর, তালপুকুর, বৈদ্যবাটি পুরসভার বৌবাজার, চাতরা মান্নাপাড়া, নওগাঁ-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিল্ক প্রিন্টিংয়ের কারখানা আছে। হাজার দশেক মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, অধিকাংশ কারখানাই দূষণ ছড়ায় এলাকায়। কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রং এবং রাসায়নিক পুরসভার নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়। ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়ায়। প্রশাসনের বক্তব্য, ওই শিল্পতালুক হলে দূষণের মাত্রা কমবে। দূষণ এড়াতে বিশেষ পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করা হবে। কেননা, বাড়ির কারখানাগুলি শিল্প তালুকে চলে আসবে।

শ্রীরামপুরের সিল্ক প্রিন্টিং মালিকদের সংগঠনের সভাপতি মহানন্দ ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমরা চাই সিল্ক হাব হোক। কিন্তু কী ভাবে তা হবে, কী ভাবে সেখানে আমাদের জায়গা দেওয়া হবে, তার কিছুই জানি না। সরকারি দফতরে জিজ্ঞাসা করেও সদুত্তর পাইনি।” তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা ছোট ইউনিট চালান, তাঁরা যাতে সহজে ওখানে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা দরকার। অধিকাংশেরই ইউনিট নিজেদের বাড়িতে। সেখান থেকে যন্ত্রপাতি সরানো সোজা হবে কি না, সেটাও প্রশ্ন।”

silk hub prakash paul hooghly serampore hooghly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy