ইঙ্গিত ছিলই। সেটাই কাজে করে দেখালেন কলকাতা পুরসভা ও দমকল কর্তৃপক্ষ। মঞ্চের নকশা স্পষ্ট নয়, অপরিসর রাস্তায় সভা হলে ব্যাপক যানজটের আশঙ্কা রয়েছে, সরকারি শংসাপ্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ানদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে আবেদনপত্রে জটিলতা রয়েছে এমন নানা যুক্তি তুলে ধরে বিজেপিকে আগামী ৩০ নভেম্বর ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করার অনুমতি দিলেন না তাঁরা। বিজেপি অবশ্য জানিয়েছে, ওই জায়গাতেই তারা সভা করবে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, ফি-বছর তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সভার ক্ষেত্রে এই সব যুক্তি খাটে না কেন?
দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের ওই সভা নিয়ে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে গিয়েছে বিজেপি। সেই মামলায় হাইকোর্টের সর্বশেষ নির্দেশ ছিল, সভা করতে হলে পুরসভা এবং দমকলের কিছু শর্ত মেনে আবেদন করতে হবে বিজেপিকে। সভার অনুমতি দেওয়া হল কি না, বৃহস্পতিবার তা জানানোর কথা ছিল। যদিও মঙ্গলবারের সেই নির্দেশের পরেও বিস্তর নাটক চলেছিল। বিজেপি নেতারা পুরসভায় যাওয়ার আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন পুর অধিকারিকেরা। আজ, শুক্রবার ফের আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি। সভা করার দাবিতে এই নিয়ে তিন বার কলকাতা হাইকোর্টে যাচ্ছে তারা।
পুরসভা যে অনুমতি না দেওয়ার পথেই হাঁটছে, বুধবারই অবশ্য তার ইঙ্গিত মিলেছিল। এ দিনও সকাল থেকে বিজেপির সভা নিয়ে পুর-প্রশাসনে বৈঠকের পর বৈঠক চলে। এমনকী রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয় বলে পুরসভা-সূত্রের খবর। বেলা ২টো নাগাদ বিজেপির দফতরে ফোন করে জানানো হয়, পুরসভার চিঠি তৈরি। ওই খবর পেয়েই বিজেপির অফিস সচিব অলোক গুহরায়-সহ কয়েক জন পুরসভায় যান। ঘণ্টাখানেক পর তাঁরা পুরসভার চিঠি হাতে পান।
কী বলা হয়েছে সেই চিঠিতে?
পুরসভা নানা খুঁটিনাটি বিষয় উল্লেখ করে জানিয়েছে, বিজেপির দেওয়া তথ্য থেকে মঞ্চের নকশা স্পষ্ট হচ্ছে না। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আদালত যে সমস্ত তথ্য দিয়ে আবেদন করতে বলেছিল, তার সঙ্গে বিজেপির আবেদনপত্রের সামঞ্জস্য নেই। তাই তাদের ওই জায়গায় সভা করতে দেওয়া যাচ্ছে না।” এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুর আইন (১৯৮০)-এর ৩ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করে মেয়র জানান, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুরসভার ডিজি পর্যায়ের তিন জন ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে গঠিত টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতেই। যে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অপরিসর রাস্তায় এত যান চলাচল করে যে, সেখানে সভা হলে বিপুল যানজটের জেরে আরও বিশৃঙ্খলা হতে পারে।
আর দমকলের তরফে দু’পাতার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, বিজেপির আবেদনপত্রে কিছু ‘টেকনিক্যাল’ গলদ থাকায় তাদের সভার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে সভামঞ্চের নকশা, দমকলের গাড়ি ঢোকার পর্যাপ্ত জায়গা, ইলেকট্রিশানদের সরকারি শংসাপত্র এমন নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, পুরসভা এবং দমকলই বরং সভামঞ্চের নকশা করে দিক। তাঁরা সেটাই মানবেন। তবে সভা হবে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেই। রাহুলবাবুর কটাক্ষ, “রাজ্য সরকার এমন করছে যেন, ৩০ নভেম্বর আমাদের সভা হলে ১ ডিসেম্বরই সরকারটা পড়ে যাবে!”
স্বভাবতই ২১ জুলাই নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “মমতা ভুল ঘণ্টা বাজাচ্ছেন। বিজেপি প্রেশার কুকারের মতো। তিনি যত চাপ দেবেন, ততই তার হুইসল বাজবে আর সবার কানে আওয়াজ পৌঁছবে।” বিজেপির সভায় যাঁরা যোগ দেবেন, তাঁদের একাংশের থাকার জন্য বেলেঘাটা বরফকল মোড়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছিল। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর জীবন সাহার দলবলের বাধায় সেই কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা কৃশানু মিত্র। যদিও জীবনবাবুর দাবি, “আমার এমন ঘটনার কথা জানা নেই।”
গত বছর কলকাতা পুরসভার সামনে বামফ্রন্টকে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে চাননি পুর কর্তৃপক্ষ। সভার দিন শেষ মুহূর্তে, বিকেল ৩টের সময় অনুমতি এসেছিল! এ বার যদিও একই জায়গায় বামফ্রন্টকে সভা করার অনুমতি দিয়েছিল পুরসভা। সেই সমাবেশেই এ দিন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “এ বার পুরসভা আর আপত্তি করতে পারেনি। আপনারা এটা আদায় করে ছেড়েছেন!” অমিত শাহের সভার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিরোধী দলনেতা বলেন, “বিজেপির সভাপতি কোথায় সভা করবেন, জানি না। যেখানেই করুন, আমাদের তোলা কিছু প্রশ্নের জবাব তাঁকে দিয়ে যেতে হবে।”
তবে সভার অনুমতি না দিয়ে পুরসভা আদতে বিজেপির হাতেই অস্ত্র তুলে দিল বলে মনে করছেন অনেকে। এই অনুমতি না দেওয়াটা কি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত? মেয়র বলেছেন, “পুরসভায় বসে এর জবাব দেব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy