E-Paper

এআই চিকিৎসক, গবেষণায় বাঙালি

আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে একটি চিকিৎসা পরিচালন ব্যবস্থা তৈরি করেছেন সাউথ ফ্লরিডার একদল বিজ্ঞানী, যা কি না চিকিৎসকদের ভার লাঘব করে দেবে অনেকটাই।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩৬
An image of the scientists

(বাঁ দিকে) দেবর্ষি দত্ত এবং শুভসিত রায়। —ফাইল চিত্র।

যন্ত্রই যখন চিকিৎসক!

হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর বেডে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে যন্ত্রমানবী নার্স। এ দৃশ্য ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে জাপানে। টেক্সাসে তৈরি হচ্ছে রোবট স্বাস্থ্যকর্মী ‘মক্সি’। ভার্জিনিয়ার একটি সংস্থা এমন এক মোবাইল রোবট তৈরি করেছে, যে নার্সিং, ফার্মাসি ও গবেষণাগারের কাজে সাহায্য করে। কিন্তু যন্ত্র-চিকিৎসক! না, তার দেখা এখনও মেলেনি। তবে সে দিন আর বেশি দূরেও নেই। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে একটি চিকিৎসা পরিচালন ব্যবস্থা তৈরি করেছেন সাউথ ফ্লরিডার একদল বিজ্ঞানী, যা কি না চিকিৎসকদের ভার লাঘব করে দেবে অনেকটাই। যন্ত্রই বলে দেবে, রোগী কেমন আছেন, কতটা বিপজ্জনক পরিস্থিতি, মৃত্যুর ঝুঁকি আছে না নেই। এই গবেষণার নাম ভূমিকায় রয়েছেন ফ্লরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির বাঙালি গবেষক দেবর্ষি দত্ত ও শুভসিত রায়। তাঁদের গবেষণাপত্রটি ‘ফ্রন্টিয়ার্স’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এই গবেষণাটি হয়েছে কোভিড-রোগীদের নিয়ে। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভবিষ্যতে যে কোনও অতিমারি বা মহামারি সামলাতে এআই-পরিচালিত এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কোভিডের সময়ে দেখা গিয়েছে রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালের নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের ডাক্তার-নার্সরাও সংক্রমিত। কিন্তু রোগ যতই সংক্রামক হোক না কেন, যন্ত্র-স্বাস্থ্যকর্মীকে কাবু করতে পারবে না সে।

চন্দননগরের ছেলে দেবর্ষি বর্তমানে ফ্লরিডাবাসী। দীর্ঘ গবেষণার ফলাফল নিয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘‘একটা যন্ত্রের মধ্যে ধরুন একশো ডাক্তারের মস্তিষ্ক যদি ভরে দেওয়া যায়... এমনটাই করা হয়েছে। এই অ্যাপলিকেশন বলে দিতে পারবে, কোন রোগীর ঝুঁকি বেশি, কার অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন, আবার কার ভয়ের কিছু নেই। এর ফলে যাঁর বেশি প্রয়োজন, তাঁর চিকিৎসা জরুরী ভিত্তিতে শুরু করা যাবে। মৃত্যুর সংখ্যা কমবে।’’ গোটা দুনিয়াই এখন এআই-মুখী। নয়া গবেষণায় রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও তাই এআই-এর পথ বেছে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ভারতের মতো জনবহুল দেশে জরুরী পরিস্থিতিতে রোগ ও রোগীর সংখ্যার ভার সামলাতে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

দেবর্ষি ও শুভসিত জানাচ্ছেন, ২০২০ সালের ১৪ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘সাউথ ফ্লরিডা মেমোরিয়াল হেল্থ কেয়ার সিস্টেম’-এর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৩৭১ জন কোভিড রোগীকে ধারাবাহিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা। একটি তথ্য-ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়। এই তথ্য ভান্ডারে রোগীর সামাজিক ও জনসংখ্যাভিত্তিক বৈশিষ্ট্যও উল্লেখ করা হয়। তা ছাড়া, কোনও রোগীর পুরনো জটিল অসুখের ইতিহাস রয়েছে কি না, কোনও দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে কি না, নিয়মিত তিনি কী কী ওষুধ খান, সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে রোগীর বয়সকে। দেখা গিয়েছে, ৬৫-র উপর পুরুষ রোগীর ঝুঁকি বেশি। তা ছাড়া, রোগীর ডায়েরিয়া হয়েছিল কি না, ডায়াবিটিস ও হাইপারটেনশন আছে নাকি, বিএমআই কত, কিডনির অসুখ রয়েছে নাকি, রোগী ধূমপান করেন কি না, নিউমোনিয়া হয়েছে নাকি ইত্যাদি। রোগীর কোন জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত, তা-ও পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। এর পরে ‘র‌্যানডম ফরেস্ট’ ক্লাসিফায়ার মডেলের সাহায্যে এগুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা কতটা, তা নির্ণয় করেন। দেবর্ষি বলেন, ‘‘যখন হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক রোগী সংক্রামক রোগ নিয়ে ভর্তি হতে থাকেন, তখন এটা জানা জরুরী হয়ে পড়ে, কার জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন।’’

বিজ্ঞানী শুভসিত রায়ের দাবি, তাঁরা কোভিডের উপরে গবেষণা চালালেও এই এআই-চিকিৎসা ব্যবস্থা অ্যালঝাইমার্স, হার্টের অসুখের মতো ব্যাধীতেও কাজ দেবে। এআই-কে শুধু নির্দিষ্ট রোগের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তা হলেই ‘ডাক্তার’ হয়ে উঠবে সে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Artificial Intelligence Bengali Scientists

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy