Advertisement
E-Paper

কী ভাবে ইয়েমেন যুদ্ধের ‘মুখ’ হয়ে উঠল এই শিশু!

এক বছরেরও বেশি কেটে গিয়েছে। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই আজও বুথাইনা দেখতে পায় সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর হানার ছবি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৫
বুথাইনার এই ছবিই হয়ে উঠেছিল ইয়েমেন যুদ্ধের বীভৎসতার প্রতীক। ছবি: এএফপি

বুথাইনার এই ছবিই হয়ে উঠেছিল ইয়েমেন যুদ্ধের বীভৎসতার প্রতীক। ছবি: এএফপি

বাঁ চোখটা পুরোপুরি বন্ধ। বীভৎস ভাবে ফুলে উঠে রক্ত জমে গাড় লাল। আঘাত লেগে অন্য চোখটাও বন্ধ। জোর করে সেই ডান চোখ খোলার চেষ্টা করছে এক শিশু। ঠোঁট দু’টোও ফুলে উঠে কার্যত বিকৃত হয়ে গিয়েছে। এমনই এক শিশুর ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। হয়ে উঠেছিল ইয়েমেন যুদ্ধের ভয়াবহতার প্রতীক। সেই বুথাইনা মনসুর রিমিই অবশেষে গ্রামে ফিরল। রিয়াধে চিকিৎসার পর ফিরে এসেছে সানা শহরেনিজের বাড়িতে। মা-বাবা, দাদা, কাকা-সহ পরিবারের প্রায় সবাইকে হারিয়ে এখন তার আশ্রয় কাকা আলি। আকাশ থেকে সেদিনের উড়ে আসা মৃত্যুদূতের কথা স্মরণ করে আট বছরের বুথাইয়া বলল, ‘‘বন্ধ হোক এই যুদ্ধ! আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।’’

ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হুথি’র সঙ্গে সৌদি আরবের যুদ্ধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বছর চারেক আগে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সানা শহরের দখল হুথি-দের হাতে। ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে সেই শহর দখলমুক্ত করতে আকাশপথে হামলা চালায় সৌদি। সেই হামলাতেই কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বুথাইনার পরিবার। জীবিত ছিলেন একমাত্র কাকা। সেই কাকার সঙ্গেই সৌদির রাজধানী রিয়াধে চয়ে যায় বুথাইনা। সেখানে রিয়াধের হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসার পরই সুস্থ হয়ে ওঠে সে। আর সম্প্রতি ঘরে ফিরেছে বুথাইয়া আর তার কাকা।

এক বছরেরও বেশি কেটে গিয়েছে। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই আজও বুথাইনা দেখতে পায় সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর হানার ছবি। নিজের ঘরে বসে পুতুলের চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে২০১৭-র ২৫ অগস্টের রাতের কথা বলছিল, ‘‘বাবা-মা, দাদা, বোন এবং দুই কাকার সঙ্গে আমরা এক ঘরে বসে ছিলাম। সেই সময়ই আচমকা একটি মিসাইল পড়ল ঘরের উপর। আমাদের শরীরের অনেক জায়গা কেটে গেল। রক্ত পড়ছিল। তাতে চিনি দেওয়ার জন্য আমার বাবা দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে দোকানে গেল চিনি আনতে। ঠিক তখনই ঘরে আছড়ে পড়ল আরও একটি মিসাইল। কয়েক মুহূর্ত পরেই আরও একটা। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পুরো বাড়ি।’’

আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনার পোশাক পরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা পাক সেনার! নওগামে গুলিতে হত দুই

এই ঘটনার কয়েক দিন পরই বুথাইনার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক চোখ ফোলা অবস্থায় হাসপাতালের বেডে বসে একটা চোখ খোলার চেষ্টা করছে বুথাইনা। পোস্ট হওয়ার পরই ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। কিন্তু তার পর শুরু হয় নয়া বিতর্ক। ইয়েমেনের শহর সানা থেকে সৌদির রাজধানী রিয়াধে কী ভাবে পৌঁছল বুথাইনা আর তার কাকা, সে নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। সংবাদ মাধ্যমেও শুরু হয় চর্চা। তার মধ্যেই একটি সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, বুথাইনা আর তার কাকাকে অপহরণ করে রিয়াধে নিয়ে গিয়েছে সৌদি সরকার। দু’জন একটি চার্টার্ড বিমানে উঠছে, এই ছবিও ছাপা হয় ইয়েমেনের সংবাদপত্রে। সম্প্রতি একটি শান্তি চুক্তির পর ফিরে এসেছে বুথাইনা আর তার কাকা। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সানাতে মিসাইল হামলা হয়।

আরও পড়ুন: আওয়ামি প্লাবনে খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বিএনপি-জামাত জোট, বাংলাদেশে ইতিহাস

গোটা পরিবার খুইয়ে সেই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে সাত বছরের বুথাইনাকে। তবে সব বিতর্ক কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর পর নিজের দেশে, নিজের বাড়িতে ফিরেছে বুথাইনা। পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য আলি কাকার সঙ্গেই নতুন করে জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখছে সে। সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে সে বলেছে, ‘‘আমি আবার স্কুলে যেতে চাই। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।’’

আর চোখের জল কিছুটা সামলে নিয়ে আলি বলছিল, ‘‘ছোট্ট মেয়েটাকে এখনও ঠিকমতো বোঝাতে পারিনি। বুথাইনা ভুলতে পারেনি বাবা-মাকে। এখনও মাঝে মধ্যে বায়না ধরে, মায়ের কাছে যাবে। তখন ওকে বোঝাই, তোমার বাবা-মা স্বর্গে আছেন, যেটা ভীষণ সুন্দর জায়গা।’’

(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

Yemen War Saudi Arabia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy