Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাক-প্রধানমন্ত্রী পদে আপাতত শাহিদ আব্বাসি

পানামা কেলেঙ্কারি মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়ে শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রীর গদি হারিয়েছেন নওয়াজ। তবে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সেই রায় ঘিরেই। তাঁর এই শাস্তির মেয়াদ কি আজীবন নাকি কিছু বছরের জন্য— সেই প্রশ্নেই এখন দ্বিধাবিভক্ত পাক রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞরা।

শাহিদ খকন আব্বাসি

শাহিদ খকন আব্বাসি

সংবাদ সংস্থা
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

পাকিস্তানে রাজনীতির অন্দরে-অলিন্দে এখন একটাই প্রশ্ন। সু্প্রিম কোর্টের রায় কি তবে নওয়াজ শরিফ জমানায় পাকাপাকি ভাবে ইতি টানল? নাকি আগের দু’বারের মতো এ বারেও ঝড় সামলে ক্ষমতায় ফিরবেন তিনি?

পানামা কেলেঙ্কারি মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়ে শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রীর গদি হারিয়েছেন নওয়াজ। তবে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সেই রায় ঘিরেই। তাঁর এই শাস্তির মেয়াদ কি আজীবন নাকি কিছু বছরের জন্য— সেই প্রশ্নেই এখন দ্বিধাবিভক্ত পাক রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞরা।

আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় সততার প্রশ্ন তুলে সংবিধানের ৬২ ও ৬৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী নওয়াজকে পদচ্যুত করা হয়েছে। আইনজ্ঞদের মতে, ৬৩ নম্বর ধারায় শাস্তির মেয়াদ সাময়িক। ৬২ নম্বর ধারায় আবার শাস্তির মেয়াদ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। ফলে নওয়াজের শাস্তির মেয়াদ নিয়ে বিতর্ক মিটছে না।

তবে গদিচ্যুত হয়ে মান হারালেও ‘শান’ যায়নি নওয়াজের। শাসক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগে (পিএমএল) এখনও তিনিই বেতাজ বাদশা। নওয়াজের প্রস্তাব মতো পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যে তাঁর ভাই শাহবাজ শরিফই হবেন তা নিয়ে দলের অন্দরে দ্বিমত ছিল না। তবে শাহবাজ আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্য না হওয়ায় তাঁকে নির্বাচনে জিতেই প্রধানমন্ত্রী পদে আসতে হবে। মাঝের ৪৫টা দিন অন্তর্বর্তিকালীন প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার কে চালাবেন তা নিয়ে ধন্দ ছিল। দলের তরফে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, প্রাক্তন পরিকল্পনা মন্ত্রী আহসান ইকবাল, স্পিকার আয়াজ সাদিক প্রমুখের নাম উঠে এলেও শেষ পর্যন্ত শনিবার ইসলামাবাদে দলীয় বৈঠকে প্রাক্তন পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী শাহিদ খকন আব্বাসির নাম ঘোষণা করেছেন নওয়াজ।

পরম বিশ্বাসভাজন আব্বাসির নাম ঘোষণায় অবশ্য অবাক নন দলের সদস্যরা। নওয়াজের রাজনৈতিক জীবনের বহু টানাপড়েনের সঙ্গী এই আব্বাসি। ১৯৯০ সালে ইসলামি জামহুরি ইত্তেহাদের (আইজেআই) প্রধান হিসেবে নওয়াজ যখন সাধারণ নির্বাচনে লড়ছেন, তখন তাঁর পাশে ছায়ার মতো ছিলেন আব্বাসি। সে বছরই ভোটে জিতে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ। তবে সে বার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে মেয়াদ ফুরনোর আগেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯৭-তে পিএমএলের হয়ে ভোটে জিতে নওয়াজ দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলেন। কিন্তু বিধি বাম। কার্গিল যুদ্ধ নিয়ে সেনার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে এ বারও মেয়াদ ফুরনোর আগেই গদি ছাড়তে হয় তাঁকে। পাশাপাশি সামরিক আইনে নওয়াজ ও তাঁর ভাই শাহবাজকে দশ বছরের জন্য দেশে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজনীতির জীবনে বারবার এই ওঠাপড়া অবশ্য দমাতে পারেনি নওয়াজকে। দেশে ফেরার পর ২০১৩-তে তিনি ফের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তবু শেষ রক্ষা হলো না। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় এ বারেও পদচ্যুত হলেন তিনি।

পাকিস্তানে পরবর্তী নির্বাচন ২০১৮-তে। তবে তার আগে শাস্তির মেয়াদ নিয়ে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা কাটলেই বোঝা যাবে নওয়াজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ফের নির্বাচনে লড়বেন এই পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ নাকি আদালতের রায়ে সেই সম্ভাবনা একবারেই শেষ হয়ে গেল! অপেক্ষায় থাকবে মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE